Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব – Page 22 – Dr. Mohammed Amin

সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব

সন্মিত্রা:  দ্বাবিংশ পর্ব / ড. মোহাম্মদ আমীন

প্রচুর খাবার নিয়ে এল নিনি।
এত খাবার দশ জনও খেতে পারবে না। আমরা মাত্র পাঁচ জন। দশ-বারো জন না হলে কোথাও একসঙ্গে এত খাদ্য পরিবেশন করা হয় না। রচনা এলে ছয় জন। রাজ-রোজি খাবে না। কিছুক্ষণ আগে খেয়ে এসে আমার পাশে বসেছে।
“এত খাবার?”, নিনিকে বললাম, “আমরা মাত্র পাঁচ জন। আর কেউ আসবে কি?”
না।
এত আনলে যে?
“এসব আপনি বুঝবেন না”, প্রফেসর চিকুচি বলেন, “স্যার, আমি ওয়ান ইন টেন। সাধারণ দশ জন মানুষের খাবার একসঙ্গে কোনো বিরাম ছাড়া একাই সাবাড় করে দিতে পারি। জীবের উদ্দেশ্য উপভোগ-হোক সে মানুষ কিংবা বৈদূর্যলোচন।”
টুটুল কানে কানে বলল, ভাব্বা, বৈদূর্যলোচন মানে কী?
“বিড়াল”, আমি বললাম, “বৈদূর্য মানে নীলকান্তমণি। অন্ধকারে বিড়ালের চোখ বৈদূর্যের মতো ঝলমল করে জ্বলে। তাই তার আর এক নাম বৈদূর্যলোচন।”
দারুণ তো?
“বাংলা আসলেই দারুণ ভাষা”, প্রফেসর চিকুচি বললেন, “এত মিষ্টি ভাষা পৃথিবীতে আর হয় না। যে-কোনো বাক্যে সুর, শব্দে শব্দে গল্প- আহ! বৈদূর্যমণি; কী দারুণ!”
রোজি বলল,
“Pussy cat, pussy cat, where have you been?
I’ve been to London to visit the Queen.
Pussy cat, pussy cat, what did you do there?
I frightened a little mouse under her chair.”
প্রফেসরের ওজন ত্রিশ কেজির বেশি হবে বলে মনে হয় না। এত পাতলা মানুষের ভুঁড়ি একটা বড়ো স্যান্ডউইচ খেলেও বেলুনের মতো ফেটে যেতে পারে। এত খাবেন তিনি! মনে মনে আমার মন অবিশ্বাসে অবাক হয়ে গেল।
প্রফেসর, মজা করছেন না তো?
প্রফেসর স্যামুয়েল জনসন খাবারের দিকে তাকিয়ে টিস্যুতে হাত মুছতে মুছতে বললেন, স্যার, শরীর দেখলে আপনাদের ধারণ-ক্ষমতা বোঝা যায়- চর্বির মতো আজেবাজে বস্তু দিয়ে এই বয়সেই শরীরটাকে ভরাট করে ফেলেছেন। আসল জিনিস রাখবেন কোথায়? আমি শুরু করলাম, জানি আপনারা চার জন তিন চামচের বেশি করে খেতে পারবেন না। আল্প-কল্পু-টুটু; তোমাদের কারও ইচ্ছে হলে আমার সঙ্গে শুরু করতে পার, স্যার আপনিও। ইয়েস, খুশি হব।
আপনি শুরু করুন।
ওকে, I’m very free with all my emotions, whether it’s happy, sad, mad, glad, whatever.. আমি খাব, খাব না কেন? না-খাওয়ার প্রতিজ্ঞা করে পৃথিবীতে আসিনি। বরং খাওয়ার প্রতিজ্ঞা করে এসেছি।
প্লিজ, প্রফেসর টেক।
হাসিটাকে আর একটু প্রধূমিত করে প্রফেসর বললেন, থ্যাঙ্কস।
ওয়েলকাম।
আমি শুরু করলাম। খেতে আমি লজ্জা করি না। জানতেও লজ্জা করি না। আমার খাওয়া দেখে আবার বিস্মিত হয়ে যাবেন-না যেন। আমি কী পরিমাণ খাই তা আপনি দেখেননি। সুতরাং, বিস্মিত না-হয়ে পারবেন- মনে হয় না।
দেখা যাক, ডিয়ার প্রফেসর।
আমি আমার শরীরের অর্ধেক ওজনের খাবার একসঙ্গে একাই খেতে পারি। একদম খাঁটি পিঁপড়ে।
খাওয়া শুরু করার কয়েক মিনিট পর কারো দিকে না-তাকিয়ে প্রফেসর চিকুচি বিড়বিড় করে বললেন, আমার পানীয় কোথায়? দেখছি না যে?
নিনি দৌড়ে গিয়ে ফ্রিজ থেকে অ্যালকোহলের একটি সুন্দর মেয়েলি বোতল বের করে চিকুচির সামনে রেখে বললেন, নিন, পাগলা দাদু, আপনার পাগলা জল।
বোতল দেখে চিকুচি কল্পনার দিকে তাকিয়ে বললেন, পাগলা দাদু আর পাগলা জলের ছড়াটা বলো না গো মা!
বলতে পারি, কিন্তু ওই বইটা পড়তে দিতে হবে।
পড়তে নয়, একবারে দিয়ে দেব। আমার তো আর ছেলেমেয়ে কেউ নেই। যা আছে সব তোমাদের দিয়ে যাব। আর কাউকে দেব না। আমার বাড়িটাও তোমাদের দিয়ে দেব। বুড়ো বয়সে তোমাদের মতো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আর কেউ দেয়নি। ছেলেমেয়ে থাকলেও আমি সব তোমাদের দিয়ে দিতাম। প্রতিদান ভালোবাসার প্রাণ। শুরু করো— পাগলা জলের ছড়া:
কল্পনা শুরু করল—
পাগলা দাদুর পাগলা জল
বাড়ায় শক্তি বাড়ায় বল।
পাগলা দাদুর পাগলা পানি
মগজখোলার মধুর বাণী।
চিকুচি গ্লাসে অ্যালকোহল ঢালতে যাচ্ছেন। তার আগে আল্পনা দ্রুত উঠে এসে ঢেলে দিল। এক চুমুক মুখে দিয়ে বললেন, গন্ধ বলছে ইনি আমার প্রিয়তমা গ্যারিয়ানা।
“হ্যাঁ”, কল্পনা বলল, “এটি আপনার প্রিয় ব্যান্ড; গ্যারিয়ানা হুইস্কি। আপু কেবল আপনার জন্যই এনেছেন। একদম সরাসরি আমেরিকা থেকে।”
আমি একঝলক দেখে নিলাম বোতলের নাম, GARRYANA, Westland Whiskey। চিকুচির মতো চিকন বোতল, ইসরাইলি ষোড়শীর মতো লাল-সাদা ফরসায় খুব মমতা দিচ্ছে।
সত্যি সত্যি প্রফেসর স্যামুয়েল জনসন ওরফে চিকুচি কিছুক্ষণের মধ্যে পাঁচ জনের খাবার একাই সাবাড় করে দিলেন। তারপর স্পুনকে উলটে থালার মাঝখানে রেখে জলের গ্লাসের দিকে হাত বাড়ালেন।
এসময় ভেসে এল রচনার গাড়ির আওয়াজ।
গাড়ির আওয়াজ শুনে প্রফেসরের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। অসহায় শিশু আকস্মিক মায়ের আগমনে এমন উজ্জ্বল হয়ে উঠে। প্রফেসর আরও ফকফকা হয়ে গেলেন। সবার দিকে তাকিয়ে গর্বের ভঙ্গিতে বললেন, আবার খাব। মায়ের আগমন আমার বয়স তেত্রিশ বছর কমিয়ে দিয়েছে।
সত্যি খাবেন?
চিকুচি সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা খেতেও জান না খাওয়াতেও জান না। মা এসেছে, তার সন্তানকে কীভাবে খাওয়ায় দেখে নাও ভালো করে।
রচনা ঢুকেই প্রফেসরকে ধমক দিলেন, এসব মেনে নেওয়া যাবে না।
আমি কী করলাম? একটু ভয়ে ভয়ে চিকুচি বললেন।
আপনি তো কিছুই খাননি। অনেক খেয়েছি তো মা। পাঁচ জনের খাওয়ার একাই খেয়ে ফেলেছি।
আপনি টেন ইন ওয়ান। বাকি পাঁচ কোথায়? ফাঁকিবাজির একটা সীমা আছে। এমন করলে আমি কষ্ট পাব। আপনি আমাকে কষ্ট দিতে চান?
না।
তাহলে আবার শুরু করুন।
প্রফেসর আমাদের দিকে চেয়ে বললেন, দেখলেন, দেখলেন তো স্যার; ভালোবাসা কাকে বলে? কাকে বলে আদর, মমতা আর কদর!
দেখলাম।
স্যার, রচনা মায়ের এ ভালোবাসা উপেক্ষা করা যায় না। আমি আবার খাওয়া শুরু করলাম। ডোন্ট মাইন্ড।
রচনা প্রফেসর চিকুচির সামনে থেকে গ্যারিয়ানার বোতলটা নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিয়ে তার রুমের দিকে চলে গেল। আমাদের সঙ্গে গল্পরত প্রফেসর তা খেয়াল করেননি।
পাগলা দাদু, ভালোবাসা কী? টুটুল বলল।
মনে করো তুমি বিড়ালকে ভালোবাস।
মনে করলাম।
সেক্ষেত্রে বিড়ালকে বাঘ বানিয়ে দেওয়ার অদম্য ইচ্ছাকে ভালোবাসা বলে। ধরো তুমি ইঁদুরকে ভালোবাস।
ধরলাম।
ভালোবাসার ইঁদুর দিয়ে বৈদূর্যলোচন ধরানোর প্রত্যয়কে ভালোবাসা বলে। এই যে আমার রচনা মা, আমাকে খাইয়ে কাঠি থেকে লাঠি করে দিতে চাইছে- এটাই ভালোবাসা।
এত খেলে যদি মারা যান? আমি বললাম।
ভালোবাসার জন্য আমি মরতেও রাজি। এমন মধুর জিনিসকে উপেক্ষা করব কেন? আমি ওজন কমাই খাওয়ার জন্য। আপনারা ওজন কমান বাঁচার জন্য এবং কম খেয়ে। আমি ওজন কমাই খাওয়ার জন্য এবং বেশি খেয়ে। আরে বাবা- না খেলে বাঁচব কীভাবে? আর খেতে না পারলে বাঁচারই বা কারণ কী? জীবের খাওয়া ছাড়া আর কিছু আছে কি?
তাই তো!
এজন্য একানব্বই বছর বয়সেও আমি বিয়ে করার স্বপ্ন দেখি। আমার নিজগ্রহের কারও জন্য অপেক্ষায় থাকতে পারি। হাওয়ায় পত্র লেখি হাওয়া প্রেয়সীকে। আকাশের দিকে চেয়ে থাকি, কখন আসবে সে আমার কাছে। আমি একানব্বই, কিন্তু আমার কোমর উনিশ। আমি একানব্বই, কিন্তু দৃষ্টি ষোড়শী সই।
আর একটা রবীন্দ্রসংগীত করেন, প্লিজ।
তাহলে আমাকে পাগলা বাবা ডাকো।
পাগলা বাবা?
এসময় ঢুকল প্রমিতা। হাতে তার পিএইচডির থিসিস প্রপোজাল। আমাকে পা ছুঁয়ে শ্রদ্ধা জানাল। সবাই উল্লাস-চিৎকার দিয়ে প্রমিতার আগমনকে স্বাগত জানাল। মেয়েটি অসাধারণ। কল্পনার সঙ্গে তার কোনো তফাত খুঁজে পাই না।
প্রফেসর চিকুচি বললেন, এই মেয়ে তুমি পিএইচডি করতে চাও?
হ্যাঁ।
ওহ, মাই গড, ভারতীয়রা এত সুন্দরী হয় কেন? মাগো এ তো দেখি আমাদের আল্পু-কল্পুর ফটোকপি।
আপনি খাবেন, না কি বকবক করবেন? রচনা ওয়াশরুম হতে বের হয়ে আবার ধমক দিল।
খাচ্ছি গো মা, কিন্তু আমার গ্যারিয়ানা?
তিন পেগ হয়ে গেছে না?
হ্যাঁ।
আজ আর না।