Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব – Page 24 – Dr. Mohammed Amin

সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব

সন্মিত্রা:  চতুর্বিংশ পর্ব / ড. মোহাম্মদ আমীন

খবরটি শুনে প্রমিতা খুব খুশি।
রচনাকে ধর্ম, গবেষণা, ভাষা এবং দর্শন সংক্রান্ত থিসিস নির্বাচন কমিটির প্রধান করা হয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক দায়িত্ব; কঠিনও। অক্সফোর্ডে যারা থিসিস জমা দেন তারা মেধা আর মননে কেউ কারও চেয়ে কম নয়। সারা পৃথিবীর মেধাবীদের থিসিস থেকে কয়েকটি বাছাই করা মারাত্মক জটিল এবং বিব্রতকর কাজ। প্রমিতা আসলে ভাগ্যবতী। পরিচিত একজন তার থিসিস নির্বাচন কমিটির প্রধান।
প্রমিতার থিসিস প্রপোজাল গৃহীত হওয়া মানে আমার থিসিস প্রপোজাল গৃহীত হওয়া। স্বস্তি নিয়ে রচনা ছাড়া সবাই পুরো অক্সফোর্ড শহর ঘুরলাম। রচনা ইদানীং খুব কর্মমুখী হয়ে গেছে। না-হয়েও উপায় নেই। গভীর রাত অবধি কাজ করতে হয়। মানুষ যত দায়িত্ববান হয়, জীবন তত সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
পরদিন কলেজে যাওয়ার সময় রচনা জানাল, আমি ভাইভা বোর্ডে থাকছি না।
কারণ?
তাকে আমি বোন ডেকেছি। সে আমার বোন।
তাতে অসুবিধা কী? এ তো তুমি ছাড়া কেউ জানে না। সে ভারতীয়, তুমি বাংলাদেশি। নামে-বংশে কোথাও কোনো মিল নেই।
পরিচিত কোনো প্রার্থী থাকলে ওই বোর্ডে থাকা উচিত নয়। এটি নৈতিক সততার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিচারে নিরপেক্ষ না থাকলে মানুষের আর কী থাকে? যাচাই-বাছাই বোর্ডে আমি সবার জন্য শিক্ষক।
নিরপেক্ষ থেকে ন্যায়বিচার করলেই তো হলো। তুমি থাকলে মেয়েটি সাহস পাবে— এ আর কী! সে তো যথেষ্ট মেধাবী।
ভাব্বা, ন্যায়বিচার কেবল করলে হয় না। বাহ্যিক আচরণ দিয়ে তা দেখাতেও হয়। এটি অন্যকে আমার সিদ্ধান্তের যথার্থতার প্রতি আস্থাশীল রাখে। অধিকন্তু, নিজের গ্রহণযোগ্যতা এবং আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। আমি যদি থাকি প্রমিতা মনে করতে পারে, তার কৃতকার্যে আমার সহায়তা ছিল। আবার অনেকে মনে করতে পারে আমি হয়তো তাকে কৃতকার্য হওয়ার জন্য সাহায্য করেছি। যেটিই হোক— দুটোই অনুচিত। কারও জন্য মঙ্গলকর নয়।
“বাট”, আমি বললাম, “চ্যারিটি বিগেইনস অ্যাট হোম।”
ভাব্বা, এটি চ্যারিটি নয়; বিচার। দান নয়; পরীক্ষা; দয়া নয়, দক্ষতার মূল্যায়ন। আত্মীয়তা নয়, অভিজ্ঞতার পরিচর্যা। মূল্যায়ন, চ্যারিটি হোম নয়, দয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানে দয়া মানে অপরাধ। সারা বিশ্বের প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠদের বাছাই করতে হবে। পৃথিবীর কল্যাণের জন্য আরও উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য এদের বাছাই করা হয়। আমি আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে কাউকে ছাড় দিলে পক্ষান্তরে পৃথিবীই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পৃথিবীর সদস্য হিসেবে এর ক্ষতি আমার স্বজনরাও এড়াতে পারবে না। পারবে কি?
না।
পনেরো দিন পর সিলেকশন কমিটির চূড়ান্ত সভা হলো। আমি উৎকণ্ঠার প্রহর গুণছিলাম, অপেক্ষায় ছিলাম রচনার ফোনের, এল না। রিং করলাম কয়েকবার— মোবাইল বন্ধ। এমন সিলেকশন সভার আগে সংশ্লিষ্টরা কৌশলগত কারণে মোবাইল বন্ধ রাখেন। ল্যান্ড ফোনের কাছেও যান না।
সন্ধ্যায় রচনা বাসায় ফিরল। আমি সকাল থেকে উদ্‌গ্রীব হয়ে আছি প্রমিতার খবর শোনার জন্য। ভেবেছিলাম আসামাত্র প্রমিতার কথা বলবে— মেয়েটি কিছুই বলল না। তার মুখ থেকে প্রমিতার ফল শোনার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। প্রফেসরের মন আমার মনের খবরে সাড়া দিল না। কৌতূহল আর দমিয়ে রাখতে পারলাম না।
বললাম, প্রমিতার খবর কী?
জানি না।
কী বলো?
সিলেকশন কমিটির সদস্যবর্গ যাদের যোগ্য মনে করেছেন, তাদের এক জনকেও বাদ দেননি। যোগ্য হলে অবশ্যই নির্বাচিত হবে।
তুমি কী করেছ?
সদস্যগণ যে প্রস্তাব এনেছেন, আমি না-দেখে অনুমোদন করে দিয়েছি।
দেখনি কেন?
যদি প্রমিতার নাম না-থাকে।
না থাকতে পারে।
এবং প্রস্তাব বিষয়ে যদি কোনোভাবে আমার ভিন্নমত থাকে।
থাকতে পারে।
সেক্ষেত্রে যদি আমার নিজস্ব মত দিয়ে ফল জারি করতে হয়।
কমিটির প্রধান হিসেবে তুমি তা করতেই পার। অসুবিধা কী?
যদি কেউ মনে করেন, প্রমিতা টিকেনি বলে এসব করছি।
প্রমিতার রেজাল্টের খবর কীভাবে জানা যায়?
প্রমিতার কাছ থেকে জেনে নিয়ে আপনাকে জানাই?
ঠিক তখনি রিং করল প্রমিতা, ম্যাম, আমি সিলেকটেড।
অভিনন্দন, রচনা বলল।
প্রমিতা?
হ্যাঁ। সে নির্বাচিত হয়েছে।
প্রমিতার ফলের কথা জানতে পেরে রচনা আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমো খেল। খুশি হলে মেয়েটা এমনই করে। এতক্ষণ সে প্রফেসর ছিল। যে মুহূর্তে ফল পেয়ে গেল সে মুহূর্তে বোন হয়ে গেল। মনে মনে বললাম— এমন আত্মীয়-বোন দিয়ে কলা খাব না কি!
অভিনন্দন জানানোর জন্য প্রমিতাকে রিং করতে যাব— এসময় সে হাজির। মুগ্ধ হলাম তার কৃতজ্ঞ-সচেতন মনোভাব দেখে।
প্রমিতা রুমে ঢুকে আগে আমাকে এবং আমার পর রচনাকে পায়ে ধরে শ্রদ্ধা জানাল। তারপর দুজনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। তার কান্নায় জল আর জলে তৃপ্তির ঢেউ— ঢেউয়ে পদ্ম, মৃণাল যার গ্রথিত ভূমির গভীর অন্তরে। আমি মাথায় হাত দিলাম। আবেগপ্রবণ প্রমিতা আমাকে আবার জড়িয়ে ধরল।
কাঁদছ কেন প্রমি?
আনন্দে।
ভাবতেই পারিনি স্কলারশিপ-সহ অক্সফোর্ডে পিএইচডি করার সুযোগ পাব।
আল্পনা-কল্পনা আর টুটুল-নিনিকেও জড়িয়ে ধরে কৃতজ্ঞতা জানাল। তারপর আবার এসে আমার পায়ে উবু হয়ে পড়ল—ঠিক রচনার মতো। জড়িয়ে ধরল নিবিড় পরশে। রচনার সব আচরণ রপ্ত করে নিয়েছে মেয়েটি। একে বলেই বুদ্ধিমত্তা, কৃতজ্ঞতা; লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার নান্দনিক কৌশল।
রচনা তার রুমে গেছে। প্রফেসর ড্রেস খুলে ফ্রেশ হয়ে আসবে। নিনির স্বামী হামিদ ফয়সল চৌধুরী মিষ্টি নিয়ে হাজির।
কী ব্যাপার ফয়সল, এত তাড়াতাড়ি মিষ্টি পেলে কোথায়?
আমি জানতাম প্রমিতা টিকবে। তাই আগেভাগে কিনে এনে লুকিয়ে রেখেছিলাম। রচনা ম্যাম এলে খাব।
টুটুল, কল্পনা আর আল্পনা বলল, এবার ইচ্ছেমতো গল্প শুনতে পারব।
শোনাব।
আজ কী হবে? রচনা হাতমুখ ধুয়ে কক্ষে ঢুকতে ঢুকতে বলল।
পার্টি হবে, রাজ-রোজি বলল।
কোথায়? জানতে চাইল প্রমিতা।
অ্যাকান্থাস রেস্টুরেন্ট।
চলো।