Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব – Page 25 – Dr. Mohammed Amin

সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব

সন্মিত্রা: পঞ্চবিংশ  পর্ব / ড. মোহাম্মদ আমীন

রাজ-রোজি?
ইয়েস, ড্যাড।
তোমাদের প্রমিতা ম্যাম কখন আসবে?
কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবেন।
কেমন লাগছে বাংলা?
“ড্যাড”, রেজি বলল, “বাংলা কেবল ভাষা নয়, লাইনে লাইনে সুর।”
রাজ সুর দিল,
পলাশ ঢাকা কোকিল ডাকা
আমার এদেশ ভাইরে
ধানের মঠে ঢেউ খেলানো
এমন কোথাও নাইরে- – -।
বিছানায় শুয়ে দিনের কর্মসূচী নিয়ে আলাপ করছিলাম। আমার ডান পাশে রচনা, বাম পাশে রোজি। রচনার পাশে রাজ। বিকেলে স্টিভেন হকিং-এর বাসায় যাব। লুসি আসবেন আমাদের নিয়ে যেতে।
হঠাৎ রিং বেজে উঠে।
ঢাকা থেকে মনে হয়। রচনার কোল থেকে মাথা তুলে মোবাইলের দিকে হাত এগিয়ে দিতে যাই। রচনার হাত আদুরে বাধা দিয়ে বলল, নিনি খুলবে।
নিনি খুলবে মানে?
এটি আপনার মোবাইলের আওয়াজ নয়।
কীসের আওয়াজ?
রাজ বলল, ড্যাড, এ তো কলিংবেলের আওয়াজ।
রোজি বলল, ড্যাড ফুল বনে যায় বারবার।
‘ফ্লাওয়ার বন’ মানে তো গার্ডেন?
ঘড়, ভড়ড়ষ; মানে বোকা। প্রমিতা ম্যাম শিখিয়েছেন ফুল মানে বোকা।
রচনার বাসার কলিংবেলের আওয়াজ এবং আমার মোবাইলের আওয়াজ একই রকম। কলিংবেল বাজলে মনে হয় আমার মোবাইলে রিং এসেছে। আবার মোবাইলে রিং এলে মনে হয় কলিংবেল বাজছে। মেয়েরা আমার আমার মোবাইল এবং তাদের বাসার কলিংবেলে একই সুর লাগিয়ে দিয়েছে। যন্ত্র দুটোর ডাক প্রায় সময় বিপাকে ফেলে দেয়। তাই রোজি বলে, আমি বারবার ফুল বনে যাই।
কতবার বললাম মোবাইলের আওয়াজটা চেঞ্জ করে দিতে। দিলে না। ফুল বনে যাই বারবার। কী করতে হবে বুঝেছি এবার।
কী করতে হবে? রচনা প্রশ্ন করল।
আমার বিষয় আমাকেই চেঞ্জ করতে হবে। কেউ আমার পক্ষ হয়ে তা করবে না। নিজেকে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হয়।
পারবেন না।
কেন পারব না?
আমরা যাদি রাজি না হই, তো কী হবে?
কিচ্ছু হবে না।
আপনার জীবন আমাদের সঙ্গে বাঁধা। কলিংবেল যতবার বাজে ততবার আপনি আমাদের কাছে শব্দে শব্দে প্রভব হয়ে উঠেন। আপনি ভিন্ন সুর দিলে আমাদের সুরও বেসুরো হয়ে যাবে। আপনার সুরের জন্য আমাদের কি বেসুরো করে দিতে পারবেন?
মাগো, এ তো কখনো ভাবিনি!
মানবজাতি একটি চেইন। প্রত্যেকটা মানুষ ওই চেইনের একেকটা আংটা। সব আংটা মিলে পুরো মানবজাতি। তাই একটা আংটার দায় নৈকট্য অনুযায়ী কমবেশি সব আংটায় গিয়ে পড়ে। আমাদের বেসুরো করে দিতে পারবেন না।
ইচ্ছে করলে পারব।
ভাব্বা, সবাই সবকিছু পারে না। এই যেমন আপনি পারলেন না আপনার মোবাইলের আওয়াজ বদলে দিতে। যদি দেন, তাহলে আমাদের কলিংবেলের আওয়াজটাও আমরা পালটে দেব, দিতে হবে। চেইনের দুর্বল আংটাই তার সর্বোচ্চ শক্তি । কোনো আংটাকে আমি দুর্বল হতে দিতে পারি না। তাহলে যে পুরো চেইনটাই দুর্বল হয়ে যাবে।
আমি ছোটোবেলা থেকে নিরীহ গোবেচারা।
মানুষের জীবনে তিন কাল। আমাদের জীবনে তিন কাল ছাড়াও আর একটি কাল আছে। সেটি ভাব্বাকাল। যিনি বহু যত্নে ভবিষ্যতের জন্য আমাদের বর্তমানকে অনবরত শক্তি দিয়ে যাচ্ছেন অতীতের মতো শেকড় থেকে শিখরে।
আমার প্রতি তোমাদের কৃতজ্ঞতা আমার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।
আপনার পরিবর্তন আমাদেরও পরিবর্তন। আপনি আমাদের আল্টিমেট ডেস্টিনেশন। এছাড়া আমাদের আর কোনো গন্তব্য নেই। যার ইচ্ছে স্বর্গে যাক, আমরা আপনাতে সমাহিত হব।
এসময় আল্পনা রুমে ঢুকে, সুসানা আর মাসাহিতো আন্টি এসেছেন।
কোথায়?
ড্রয়িংরুমে।
ওখানে কেন? নিয়ে এস।
যাচ্ছি, বলে যাওয়ার জন্য ফেরার আগে রুমে ঢুকলেন সুসানা ইয়োগানা। পিছনে প্রফেসর মাসাহিতো। তাদের দেখে আমি উঠতে গেলাম। রচনা হাত দিয়ে এবং সুসানা দূর থেকে নীরব ইশারায় নিবৃত্ত করল। আল্পনা খাটে উঠে আমার পায়ের নিচে বসে পড়ল। আমার পায়ে তার খুব আগ্রহ।
“বিমানে এভাবে আপনার কোলে শুয়েছিলাম”, সুসানাকে বললাম, “মনে আছে? মনে পড়েÑ মাতৃত্বের কী অগাধ সমুদ্রে আমাকে ফেলে দিয়েছিলেন সেদিন?”
কথাটি শেষ করে আবার মাথা তুলতে চাইলাম।
“আপনি উঠলে আমাদের চলে যেতে হবে”, সুসানা হেসে বললেন, যেভাবে শুয়ে আছেন সেভাবে শুয়ে থাকুন। আমরা দেখব আর অভিভূত হব।
প্লিজ, বসুন।
“আমরা আপনাদের সান্নিধ্য দিতে আগেভাগে চলে এসেছি।”, মাসাহিতো বললেন, “অনুভব দেখা যায় না, মনের মাঝে সুপ্ত থেকে যায়। মনের আকুতি সান্নিধ্যে আসার পর পরস্পরের অনুভবে মিলিত হলে তা দৃশ্যমান হয়ে উঠে। জলে যেমন চিনি মিশে যায় অনেকটা তেমনি। তখন স্বাদহীন জলও মিষ্টি হয়ে যায়। কিন্তু বাহির থেকে বোঝা যায় না। চিনি আর পানির কৃতিত্ব এটাইÑকী বলেন স্যার? চিনি আর পানি পাশাপাশি রেখে দিলে কেবল চিনিই মিষ্টি হয়, জলে মেশালে দুটোই মিষ্টি হয়ে যায়।
রাজ-রোজি চলে গেল পড়তে। প্রমিতা এসেছে তাদের বাংলা শেখানোর জন্য।
“কে আছে বলুন রচনার”, সুসানা বললেন, “কেবল আপনি ছাড়া? আমরা তার নিবিড় সময়গুলো ভরিয়ে দিতে এসেছি ভালোবাসায় ভালোবাসায় এবং সান্নিধ্যের মূর্ত কথিকায়। আপনি চলে গেলে সে একা হয়ে যায়। বিষণ্ন মনে আকাশে প্রকৃতি দেখে আপনি ভেবে। জানতে চাইÑ কী দেখো? বলেÑ আমার স্যারকে, ভাব্বাকে। স্যার, আপনিই তার প্রকৃতি।”
সুসানা আর মাসাহিতো আসার সংবাদ পেয়ে পাশের কক্ষ থেকে চলে এল কল্পনা। আমার মাথার বাম দিকে রচনার উলটো কোনায় শুয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ভাব্বা, শুয়ে পড়লাম।
শুয়েই তো পড়েছ; এ আবার কেমন অনুমতি?
আমি এরকমই, জানেন না?
জানি তো।
কল্পনার স্বামী তাহসিন আর আল্পনার স্বামী শ্যামস ব্রিস্টল গেছে। আমাকেও যেতে বলেছিল। যাইনি। ব্রিটেনে এলে রচনাকে ছাড়া কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। তোমার তাহসিন কখন আসবে?
আপনাকে বলেনি?
আগামী পরশু।
সুসানার মুখ কিছুটা ম্লান। তিনি কী মনে করে চেয়ার ছেড়ে খাটে এসে রচনার গা ঘেঁষে বসলেন। মাসাহিতোকে ডাকলাম। তাঁকে হেলান দিতে হয়। তাই খাটে বসতে পারেন না। চেয়ারটা টেনে খাটের কাছে এনে রচনার খুব নিকটে দাঁড় করিয়ে তার ওপর বসে পড়লেন।
একটু পর আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর এবং মোহনীয় বিষয়গুলো নাকি দেখা যায় না। কিন্তু আমি দেখেছি।
কোথায়? আমি সাগ্রহে জানতে চাইলাম।
রচনা এবং আপনার নিবিড় মমতার স্নিগ্ধ হাসিতে। অনেকে বলেন পৃথিবীর সুন্দর সুরটা নাকি কখনো শোনা যায় না। আমি এটাও শুনেছি। কোথায়? রচনা আর আপনার হাসির ঝরনা ঝরঝর কলকল মুখরে। এখানে সব তত্ত্ব অচল, কিন্তু কেন অচল চিকুচি থাকলে উত্তর পেতাম। তাই ডাইনিং রুমের মেহমান ডাইনি হয়ে বেডরুমে চলে এসেছি।
ডাইনি হলেন কেন? জানতে চাইলাম।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর এবং মোহনীয় জিনিসটা দেখার লোভে।
সেটা কী?
ভাব্বা আর রচনার প্রগাঢ় আদর।