Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব – Page 42 – Dr. Mohammed Amin

সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব

সন্মিত্রা: দ্বিচত্বারিংশ (৪২) পর্ব / ড. মোহাম্মদ আমীন

মানুষের সম্পর্কসমূহের মধ্যে শালি-দুলাভাই সম্পর্ক সবসময় অন্যরকম চিরন্তন টাটকা আর অফুরান টসটসে। শুধু উপমহাদেশের নয়, পৃথিবীর প্রত্যেক দেশে এমন দেখা যায়। কথায় বলেশালির মাঝে  দুলাভাই, তার-ওপর আর স্বজন নাই।

অমুয়ার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা হাসির চেয়েও সুন্দর। শালির ইংরেজি সিস্টার-ইন-ল। যার বাংলা আইনগত বোন। অনেকে বলে— আইনে পাওয়া বোন। তার মানে যতদিন বউয়ের সঙ্গে আমার আইনগত সম্পর্ক থাকবে অমুয়া ততদিন আমার শ্যালিকা থাকবে। অন্যথা হলে সব হয়ে যাবে ইতিহাস।  অমুয়ার জন্য হলেও বউয়ের সঙ্গে সম্পর্ক  রাখা চাই।
আইনে পাওয়া বোন হলেও অমুয়া আমার অনেক প্রিয়। সত্য বলতে কী— বউয়ের চেয়েও।  সে বেড়াতে এলে আমার হাসির সংখ্যা বেড়ে যায়। মনটা অযথা আনন্দে কিলবিল করে। কেন বেড়ে যায় জানি না। তারপরও হাসির সংখ্যা কমিয়ে রাখার চেষ্টা করি, অন্তত মুখে। ভেতরের বিষয় আলাদা।
এটার একটা কারণ আছে।
সাধারণভাবে আমি সাতাশ বার হাসলেও শ্যালিকা এলে ষোলোবারের বেশি হাসি না। হাসি এলেও জোর করে আটকে দিই। শ্যালিকার বয়স ষোলো বছর। আমার মনে হয়, হাসি বাড়ালে ষোড়শী শ্যালিকার বয়সও বেড়ে যাবে। নিজের বয়সের মতো আমি শ্যালিকার বয়সও বাড়াতে চাই না। শালিকা, চিরদিন থেকে যাক চঞ্চল বালিকা।
তাই কবি বলেন—
শ্যালিকা—
নব্বই বছর বয়স হলেও ফুটফুটে বালিকা।
যার নেই শালি—
বাড়াভাতে তার কচকচ সাত সাগরের বালি।
আসলে শ্যালিকার চেয়ে আদুরে শালিক হয় না। আমি জানি, যার নাই শালি, তার বুক খালি। বাগানের জন্য মালী, জীবনের জন্য শালি। এসব কথা বউয়ের সামনে বলা যায় না। শুনলে মুখ সেলাই করে দেবে ছালার গলা বন্ধ করার সুঁই সুতো দিয়ে। চোখ ফুটো করে দেবে ছেনি দিয়ে। তাই অমুয়া এলে ভেতরে ভেতরে হেসে কুটি কুটি হলেও ওপরে ওপরে গম্ভীর থাকার চেষ্টা করি।
তবু বউ বলে, তুমি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি হাসছ।
কোথায় বেশি হাসছি?
এই যে কিছুক্ষণ আগে যে হাসলে।
তোমার জন্য হাসলাম।
এই হাসি আমার জন্য নয়। আমার জন্য দেওয়া হাসি আমি বুঝি। ওই হাসি তুমি বিয়ের তিন বছরের মধ্যে ভুলে গেছ। এটি অমুয়ার জন্য। আমাকে ফাঁকি দেওয়া চেষ্টা করো-না শামীম।
অমুয়া না থাকলে তো আরও বেশি হাসি।
এখানেই তো সন্দেহ। নিজেকে লুকাতে গিয়েই অধিকাংশ চোর ধরা পড়ে। পুরুষেরা কিছুই লুকাতে পারে না, মেয়েরা শুধু গর্ভটা লুকাতে পারে না। স্বাভাবিক থাকলে হয়তো ধরাই পড়তে না। সোয়ামি, তুমি ধরা পড়ে গেছ।
তুমি কী যে বলো!
আমি সর্বদা সত্যটাই বলি।  এজন্য অনেকের ভালো লাগে না। কোন বউয়ের কোন কথা কোন স্বামীর ভালো লেগেছে শুনি?
অমুয়া এলে আমার হাসির সংখ্যা কমে যায় না?
ঠিক কথা, অমুয়া এলে তোমার হাসির সংখ্যা কমে যায়, কিন্তু হাসির আলো এত ফকফকা হয়ে ওঠে কেন? আর কমবেই বা কেন? তুমি তো মেহমান অপছন্দ করার লোক নও। বিশেষ করে ষোড়শী শালি হলে বিদেশ যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দাও। দাও না?
বউয়ের সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না। সব প্রশ্নের উত্তর দিলেও ফুল-মার্ক পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। অন্তত বউয়ের পরীক্ষায়। অনেক সময় চুপ করে থাকলে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। এখানে সাদা-খাতায় শতে শ পাওয়ার সম্ভাবনা ভারি উজ্জ্বল থাকে। ভালো নম্বরের আশায় কিছু না বলে রুমে এসে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করি।
বউ এসে ধাক্কা মারে, কী গো?
কী?
শুনছ?
শুনছি।
চোখ বন্ধ করে কী ভাবছ?
ঘুমানোর চেষ্টা করছি।
তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করছ না।
 কী করছি?
মনে মনে চোখের কোনায় তোমার প্রিয় শ্যালিকা অমুয়াকে ভাবছ।
কীভাবে বুঝলে?
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন। তিনিও অমন করতেন।তিনি নিজেই লিখে গিয়েছেন। লেখকরা একটু লুচ্ছা টাইপের হয়। মৈত্রীয় দেবীর কথা মনে করো। তুমিও তো লেখক। অবশ্য আমি তোমাকে লুচ্চা বলছি মনে করো না। তুমি খুব ভালো মানুষ।
তাহলে বই পড়ি?
বই! বই তো বউয়ের বজ্জাত সতিন। বইয়ের পাতায় চোখ রেখে লেখাগুলো অমুয়া করে দেবে। বুঝি-না বোঝো? এখন বই পড়তে পারবে না।
তাহলে অমুয়ার সঙ্গে গল্প করি?
না।
কী করব?
তুমি বরং বাজারে গিয়ে শালির জন্য কিছু শালি ধানের চিড়ে নিয়ে এসো। দেখ, আবার শালির কথা ভাবতে ভাবতে গাড়ির নিচে চাপা পড়-না যেন। চাপা পড়লে পত্রিকায় তোমার ছবি ছাপা হবে। এসব ঝামেলায় যেও না।
আমি মরলেই তো তোমার শান্তি।
বউ বলল, তুমি আমার ডিম পাড়া সোনার হাঁস। মরবে কেন গো?
তাহলে মরব না?
না। অনন্তকাল বেঁচে থেকে ডিম দিয়ে যাবে।
আমি মরব। মরবই।
মরতে পারবে না। মরতে দেব না। যতবার মরতে যাবে হারকিউলিসের মতো ততবার বাঁচিয়ে রাখব।
কেন?
আমার জীবনে তুমি অমর।
তাহলে এত বকাবকি করি কেন?
বকাবকির নিচেই তো মাখামাখি, ধ্যাৎ; তুমি কিচ্ছু বুঝ না।