Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব – Page 49 – Dr. Mohammed Amin

সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব

সন্মিত্রা: ঊনপঞ্চাশত্তম (৪৯) পর্ব / ড. মোহাম্মদ আমীন

পুরো একদিন এক মিনিটে শেষ।
রচনাদের সঙ্গে কয়েক দিন থাকার ইচ্ছা ছিল। সম্ভব হলো না। চাকুরেরা যেখানে যাক খুঁটি থাকে কর্মস্থলে। রশি থাকে নিয়োগদাতার হাতে। অধিকন্তু কল্পনা বাংলাদেশের উদ্দেশে লন্ডন ছাড়ার জন্য ছটফট করছিল। তাই একদিন পর হিথরো থেকে উড়োজাহাজে চড়ে আবার উড়াল দেবার সিদ্ধান্ত নিতে হলো। গন্তব্য বাংলাদেশ। তবে টিকিট ঢাকার নয়।
“ভাব্বা আমরা কোথায় যাচ্ছি?” হিথরো বিমানবন্দরে ঢুকতে ঢুকতে কল্পনা বলেছিল, “বাংলাদেশ যাবে এমন উড়োজাহাজের তথ্য এখন কোথাও পাচ্ছি না তো”। এখনো সব মনে আছে।  সংশয়ের মাঝেও তার চোখে আনন্দ ছিল, কপালে ছিল বিস্ময়।  তবু সন্দেহ কাটছিল না। আকস্মিক এত প্রাপ্তি তাকে ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে—ভাব্বা কীভাবে রাজি হয়ে গেলেন এত সহজে?
বিমান ছাড়ার আগে ঘোষণা দিল, পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো যাবে।
ঘোষণা শুনে কল্পনা আমার দিকে তাকাল। এতক্ষণের সংশয়টা চোখেমুখে তার বিশাল প্রশ্ন হয়ে দেখা দিল।
কিছু বলবে?
আমরা কোথায় যাচ্ছি?
বাংলাদেশ।
কিন্তু- – –
কিন্তু কী?
ইংল্যান্ড থেকে ঢাকার দূরত্ব ৮০০০ কিলোমিটার। কমপক্ষে আট ঘণ্টা লাগার কথা। ঘোষণা করছে, পাঁচ ঘণ্টা। আমরা কি বাংলাদেশ যাচ্ছি না?
তাহলে কোথায় যাচ্ছি?
সম্ভবত তো আর্মেনিয়া। এমনই তো শুনলাম। দূরত্বও তাই বলছে।
উড়োজাহাজে যাই হোক, গন্তব্যে গিয়ে বাংলাদেশ দেখতে পেলেই তো হলো, না কি?
আমরা আর্মেনিয়া যাচ্ছি। 
ওখানেই ইউরোপের বাংলাদেশ থাকে। তোমার দেশের নামের আর একটি দেশ। ইউরোপে বাংলাদেশ দেখতে দেখতে নতুন একটা দেশও দেখা হয়ে যাবে।
কিন্তু স্বর্গ তো বাংলাদেশ, ওখানে আপনি থাকেন— বলে কল্পনা আমার কাঁধে মাথা এলিয়ে দিল। তারপর কয়েক মিনিটের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে। আমার কোলে মাথা দিলে ঘুম তার মৃত্যুর মতো অনিবার্য এবং বর্তমানের মতো দ্রুত গভীর হয়ে যায়। উড়োজাহাজ তার ঘুমেই কেটে গেল।
উড়োজাহাজ থেকে নেমে তার মনটা খারাপ হয়ে গেল, ভাব্বা, আমাকে কোথায় নিয়ে এলেন?
বাংলাদেশ।
এটা তো দেখছি ইয়ারেভেনে। আর্মেনিয়ার রাজধানী।
এখানে একটা বাংলাদেশ আছে বললাম না।
আমার কণ্ঠে ভয় পেয়ে গেল সে। তার অবিশ্বাস ভেঙে খানখান হয়ে যাওয়ার আগে আবার আমার মুখের দিকে তাকাল। অবিশ্বাস করাটা নিজের অস্তিত্বহীনতার চেয়ে কষ্টকর। আমার উপর আস্থা হারালে তার আর নির্ভরতার কিছু থাকবে না। সবকিছু বিশ্বাস হয়ে যাবে। মানুষের সবকিছু যখন বিশ্বাস হয় যায়, তখন মানুষের অজ্ঞতা জানোয়ারের কাছাকাছি চলে যায়।
সরি, ভাব্বা।
প্রথমত, তোমাকে বুঝতে হবে আমি তোমার ক্ষতি করব না। দ্বিতীয়ত, তোমাকে এমনভাবে খুশি করব না, যাতে ওই খুশি সহজে অখুশির আবরণে ঢেকে যায়; তৃতীয়ত, তোমার সঙ্গে প্রতারণা করব না, চতুর্থত—
“এমন কিছু করবেন না যাতে ঋধিতা ম্যামের কাছে আপনার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।” আমার কথার সঙ্গে জুড়ে দিল কল্পনা।
বুঝতে পারলে চুপচাপ থাকো। বাংলাদেশ দেখার ইচ্ছা তোমার চেয়ে আমার প্রবল।
আমরা এখন কোথায় যাব?
মালাতিয়া সেবাস্তিয়া।
এটা কী?
আর্মেনিয়ার একটি জেলা।
কল্পনা কিছু বলল না। থম ধরে আছে। তার মন ভালো নেই। মুখ দেখে বুঝলাম। মন ভালো করে দেওয়া দরকার। জানার কিছু জানালে তার মন ভালো হয়ে যাবে। ইমিগ্রেশনের দিকে হাাঁটতে হাঁটতে বললাম, এমন একটা দেশের নাম বলো, যে দেশের স্কুল-কলেজে দাবা আবশ্যক বিষয় হিসেবে পঠিত।
আর্মেনিয়া। আমি কিন্তু ভাব্বা এখন আর্মেনিয়া ছাড়া আর কিছু বলব না। জানি বা না জানি। আপনি বলেন তো, পৃথিবীর কোন দেশে প্রথম রাষ্ট্রধর্ম খ্রিষ্টানিটি ঘোষণা করা হয়েছিল?
আমিও বলব আর্মেনিয়া। আমি কিন্তু এখন আর্মেনিয়া ছাড়া আর কিছু বলব না। জানি বা না জানি। তোমার ভাব্বার বুদ্ধি কী তোমার চেয়ে কম? আচ্ছা বলো তো— পৃথিবীর প্রথম চার্চ কোথায় নির্মিত হয়েছিল।
আর্মেনিয়া। আমি এটা দেখতে যাব।
অবশ্যই।
থ্যাঙ্ক ইউ বলে আমার ডান হাত জড়িয়ে ধরে হাঁটার গতি আমার সমান করে দিল। এটাই তার স্বাভাবিক আচরণ। আমি কিছুটা চিন্তামুক্ত হলাম। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে একটা জায়গায় মালামাল রেখে কল্পনাকে বলেছিলাম, ট্যাক্সি নিয়ে এসো।
কী বলব?
বলবে, বাংলাদেশে যাবে।
কয়েক মিনিটের মাথায় একটা ট্যাক্সি নিয়ে এল কল্পনা। তার চোখে জল নেই। মুখে মেঘ নেই। দুটোই রোদেলা হাসিতে ঝলমল করছে।
ট্যাক্সিতে উঠতে উঠতে বলেছিল, ভাব্বা, এ কেমন বাংলাদেশ? বাংলাদেশ কীভাবে আর্মেনিয়া চলে এল?
তুমিই বলো।
যেমনই হোক, বাংলাদেশ বাংলাদেশই। আপনি থাকলে আমাজানও আমার বাংলাদেশ। সাহারাও আমার বাংলাদেশ। ভাব্বা, স্থান নয় প্রিয়জনই আসল।
গাড়ি রওনা দিল বাংলাদেশে।
ত্রিশ মিনিটের মধ্যে পৌছে গেলাম। অনেকটা চট্টগ্রাম শহরের মতো। পাহাড় আছে, সবুজ আছে। আছে সুন্দর সুন্দর ভবন এবং দ্রুতযান। কিছুদূর যাওয়ার পর খুশিতে চিৎকার দিয়ে ওঠে কল্পনা, ভাব্বা! দেখুন।
চোখ দিলাম তার আঙুল সোজা।
বললাম, মাউন্ট আরারাত। আর্মেনিয়ানরা এই পর্বতকে পূজা করে। এদের কাছে এটি পরম শ্রদ্ধার। বড়ো বড়ো ভূমিকম্প এ পর্বত আটকে দেয়। অন্যান্য জায়গা হতে আর্মে নিয়ার দিকে আগত  সমস্ত পাপ আর দুর্দশা ওই পর্বতে আটকে যায়।
দারুণ!
আর একটা বিষয় আছে, জানো?
বলুন।
এই পর্বতে নোহার নৌকা আটকে গিয়েছিল।
তাই?
এখানে নোহা নবি নৌকা থেকে নেমে ভোজন করেছিলেন। ওই ভোজনে কী কী ছিল জান তো?
দেখতে যাব।
এই পর্বতটি আর্মেনিয়ার রাষ্ট্র সীমানায় নয়। আর্মেনিয়া থেকে এটি দেখা যায়, কিন্তু যাওয়া যায় না। তাই তুমি যেতে পারছ না। তবে সুখবর হচ্ছে— আর্মেনিয়া এমন একটি দেশ যেখানে টুরিস্ট এবং আর্মেনীয়দের মধ্যে কোনো তফাত করা হয় না। এর খুব টুরিস্টপ্রিয় জাতি।
মাউন্ট আরারাত তুরস্কের সীমানায় পড়েছে, তাই না?
হ্যাঁ। আর্মেনিয়ার লোকজন ওখানে যেতে পারেন না। শ্রদ্ধার বিষয় দূরে থাকাই ভালো। শ্রদ্ধাটা কমে না। যত কাছে আসা হয় শ্রদ্ধা তত কমে যায়।
গল্পে গল্পে আমরা পৌঁছে গেলাম বাংলাদেশে। বেশ সুন্দর। গাড়ি থেকে নামতেই অনেক লোক আমাদের দিকে এগিয়ে এল নানা রকমের ছোটোখাটো স্বাগত উপহার আর মৌখিক মমতা নিয়ে। বিশেষ করে কল্পনাকে মনে হচ্ছিল আর্মেনিয়ান। মনে হলো আমরা তাদের অনেক ঘনিষ্ট আত্মীয়, বহুদিন পর বাংলাদেশ থেকে ফিরলাম। একটা দেশের প্রতি মুগ্ধ হতে আর বেশি কিছু লাগে না। মুহূর্তের মধ্যে মুগ্ধ হয়ে গেলাম আর্মেনিয়ায়।
ভাব্বা, গির্জা আর মানুষের রং বাদ দিলে পুরোটাই তো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম।                                                                                                      হ্যাঁ। তবে আর একটা জিনিস বাদ দিতে হবে। বলো তো সেটি কী?                                                                                                                অপরিচ্ছন্নতা আর অনুদার ধর্মীয়  মনোভাব। তাই না?                                                                                                                              একদম ঠিক।