Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব – Page 52 – Dr. Mohammed Amin

সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব

সন্মিত্রা:  দ্বাপঞ্চাশত্তম (৫২) পর্ব / ড. মোহাম্মদ আমীন

সকালে বের হবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
এসময় রিং করল ঋধিতা, তুমি কোথায়?
বের হচ্ছি। কাজ আছে।
আগের বউ নিয়ে মনে হয় ভালোই কাটছে দিন, কী বলো?
‘আগের বউ’ কথা শুনে মনে পড়ে গেল কামাল সিদ্দিকীর কথা। বিয়ের বছর খানেক পরের ঘটনা। আমি আর ঋধিতা কথা বলতে বলতে বিয়াম হল রুমে ঢুকছিলাম। সামনে ড. কামাল সিদ্দিকী। আমাদের দেখে তিনি অমায়িক গলায় প্রাশাসনিক স্নেহ ঢেলে বললেন, কেমন আছ?
ভালো, সালাম দিয়ে বলেছিলাম।
আমার দেখাদেখি ঋধিতাও সালাম দিয়েছিল। কামাল সিদ্দিকী চোখে প্রশ্নবোধক বিস্ময় নিয়ে ঋধিতার দিকে তাকালেন। তাঁর মুখ থেকে কোনো প্রশ্ন আসার আগে পরিচয় করিয়ে দিলাম ঋধিতাকে, আমার স্ত্রী।
কথাটা বলেই বুঝতে পারলাম, বিপদ ঘটতে পারে। মনে পড়ে গেল— বিমানবন্দরের কথা। আমি তখন অবিবাহিত। প্রথম যুক্তরাজ্য যাচ্ছে রচনা। তাকে পৌঁছে দিতে এসেছি বিমানবন্দরে। উভয়ে হাত ধরে হাঁটছিলাম। আকস্মিক দেখা কামাল সিদ্দিকীর সঙ্গে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছিলেন। আমাকে লক্ষ করে রচনাকে দেখিয়ে বলেছিলেন, নিশ্চয় ভাবি?
আমি উত্তর দেওয়ার আগে রচনা হেসে সালাম দিয়ে বলেছিলেন, আপনার অনেক প্রশংসা শুনেছি। কামাল সিদ্দিকী রচনার হাসিমাখা উত্তর শুনে হয়তো মনে করেছিলেন, রচনাই তাঁর ভাবি, মানে আমার স্ত্রী। বিস্তারিত পরিচয় দেওয়ার আগেই তিনি তাঁর পথে চলে গেলেন।
আজ আবার আরেক জন হয়ে গেল ভাবি। শরীরটা কাঁপছিল। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করলে ঋধিতার কাছে মরণ ছাড়া কিছুই হবে না। ভাবলাম, তিনি বুদ্ধিমান মানুষ। বিমানবন্দরের প্রসঙ্গ এনে এখানে এমন কোনো প্রশ্ন করবেন-না, যা আমাদের দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য বিব্রতকর হয়। কিন্তু আমাকে রীতিমতো অবাক করে দিয়ে সিদ্দিকী সাহেব বললেন, ইনি যদি তোমার স্ত্রী হন, বিমানবন্দরে যাকে দেখেছিলাম, তিনি তোমার কে?
কামাল সিদ্দিকীর কথায় শ্লেষ ছিল না, তবে কৌতূহল ছিল। ঋধিতার কাছে নিজেকে স্বচ্ছ রাখার জন্য বললাম, ওই দিন যাকে দেখেছিলেন সে আমার মেয়ে।
সিদ্দিকী সাহেব ঋধিতার দিকে তাকিয়ে বললেন, মায়ের চেয়ে কন্যা বড়ো হয় কীভাবে? আমি কী উলটো দেশে – – -।
সিদ্দিকী সাহেব হয়তো আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। মাথা থেকে মুখেও চলে আসছিল। বের হয়ে যাওয়ার মুহূর্তে আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট দুটো চেপে ধরে কথাকে আটকে দিলেন। এতক্ষণ পর বুঝতে পারলেন, যা করেছেন ঠিক করেননি। ইডিয়টের মতো কাজ করেছেন।
মুখটা হঠাৎ ব্রেক কষে থামিয়ে দেওয়ায় গতিশীল গাড়ির মতো ঠোঁট দুটো কেঁপে উঠল। আমার দিকে তাকিয়ে ঋধিতাকে বললেন, ভালো থাকুন ভাবি। আবার দেখা হবে।
আপনিও ভালো থাকুন ভাই, ঋধিতা বলেছিলেন।
কামাল সিদ্দিকী চলে গেলেন। ঋধিতা থম ধরে আছে। খাবার টেবিলে বসার পর বুঝলাম, আমি সত্যি সত্যি বড়ো বিপদে পড়ে গেছি।
ঋধিতা ভোজে আসতে চাইছিল না। এসব ভোজ তার ভালো লাগে না। তার চেয়ে বাসার সাধারণ খাবারই তার প্রিয়। আমিই অনেক বলে-কয়ে— বলা যায় একপ্রকার জোর করে নিয়ে এসেছিলাম।
তুমি কি আগে একটা বিয়ে করেছিলে?
ঋধিতা এমনভাবে প্রশ্নটা করেছিল, যেভাবে পুলিশ রিমান্ডের আসামিকে জেরা করে। তাকে থামানো দরকার। চারদিকে অনেক লোক, অধিকাংশই পরিচিত এবং প্রায় সবাই সহকর্মী। আওয়াজ আর একটু বড়ো করলে লজ্জায় বরফের মতো জমে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। মনে মনে বিপদভঞ্জন আয়াত আওড়াতে শুরু করি। আয়াত কোনো কাজ দিল না।
অনুনয়ের গলায় বললাম, প্লিজ, এখন থামো। বাসায় গিয়ে বলব।
কামাল সিদ্দিকীর মতো লোক তো আর মিথ্যা বলবেন না। নিশ্চয় তিনি তোমার ওই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। তুমি আস্ত একটা প্রতারক, ছি! আমার ঘেন্না হচ্ছে তোমার পাশে বসতে। আই হেট ইউ।
প্লিজ, এখন থামো গাড়িতে— সরি, গাড়িতে ড্রাইভার থাকবে; বাসায় গিয়ে আলাপ করব। তখন যা ইচ্ছে তাই বোলো।
ঋধিতা আর কিছু বলল না। মনে মনে কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে পারলাম না। কোনো রকমে খাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা ছেড়ে উঠে পড়ল সে। আমি ক্ষুধার্ত অধিকন্তু সামনে এত সুস্বাদু খাবারের লোভে জিহ্বা নাচছিল। তবু খাওয়া গেল না। মন ভালো না থাকলে পেট কিছু নিতে চায় না। গলা বিদ্রোহ করে বসে। ইচ্ছাটা অনিচ্ছার কবলে চলে যায়। জিহ্বার স্বাদগ্রন্থি ভরে উঠে বিস্বাদে। হলরুমের চৌকাঠ পেরোনের পরপরই ঋধিতা বলল, তুমি কি আমার আগে আর একটা বিয়ে করেছিলে?
সময় পেলাম কোথায়?
ওই মেয়ে কে ছিল?
রচনা।
রচনা-মচনা আমি চিনি না। তুমি আমার আগে আর একটা বিয়ে করেছিলে। কামাল সিদ্দিকী তো আর মশকরা করার লোক না। আমার অনুমান কখনো আমাকে প্রতারণা করে না।
কোনো জবাব দিলাম না। জবাব দিলে ঝগড়া শুরু হবে। জবাব থেকে ঝগড়া। জ এর পর ঝ। মাঝখানে কিছু নেই। গাড়ি কাছে আসতে উঠে পড়লাম দুজন। সুন্দর রাত। মধ্য ফেব্রুয়ারির বাসন্তী বাতাস রমণীর চুমোর মতো শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছিল। ইচ্ছা করছিল— রোমাঞ্চকর আলাপে মত্ত হয়ে প্রকৃতির প্রতি একটু সুবিচার করতে। সাহস হলো না। ঋধিতার মুখ দেখে আমার পুরো প্রকৃতি ভয়ংকর হয়ে গেল। কয়েক মিনিটের মধ্যে ঋধিতা আমার কোলে এলিয়ে পড়ল। সে গাড়িতে চড়লে এভাবে ঘুমিয়ে পড়ে। আমি আর চাঁদের আলো উভয়ে ঋধিতার অনিন্দ্য ঘুমশ্রী মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। কী সুন্দর মুখ!
এখনকার মতো মুক্তি পাওয়া গেল। কিন্তু আমাগীকাল সকাল থেকে শুরু হবে নতুন অধ্যায়। ঋধিতা একথা বিশ্বাস করুক বা না করুক, ভুলবে না কোনোদিন। মেয়েরা ভুলতে পারে না। না ভুললে ক্ষমা হবে কী করে? ক্ষমার অপর নাম ভুলে যাওয়া। যারা ভুলতে পারে না তারা ক্ষমাও করতে পারে না। ক্ষমা করলেও তা ক্ষমা হয় না। বরং কমা হয়ে পরবর্তী বাক্যকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকে। সত্যি বলতে কী— আমাকে এখনো প্রতিদিন কামাল সিদ্দিকীর কথার প্রতিক্রিয়া বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। বাকি জীবনও হয়তো বয়ে বেড়াতে হবে।
“ভাব্বা, কী ভাবছেন?” কল্পনার ডাকে বর্তমানে ফিরে এলাম।
চলো। সবাই আমাদের জন্য রিসেপশনে অপেক্ষা করছেন।
পরপর পাঁচ দিন কল্পনার প্রত্যাশিত দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করলাম। কল্পনা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ষষ্ঠ দিন দূরে কোথাও কোনো প্রোগ্রাম রাখলাম না। ছুটি শেষ হতে দুদিন বাকি।
আর কোথাও যাবে?
“না”, কল্পনা বলেছিল, “আগামী সকালে ফ্লাইট, আজ সারাদিন গল্প করব।”
তারপর?
আচ্ছা ভাব্বা, আমি বাংলাদেশ গেলে আপনার ক্ষতি কী?
তুমি থাকবে কোথায়?
আপনার সঙ্গে আপনার বাসায়।
তোমার স্বাধীনচেতা মনোভাব এবং অপরিসীম ব্যক্তিত্ব সহ্য করার মতো বিশাল মন আমার বাসার কারো নেই। তুমি কী এসব বিসর্জন দিয়ে থাকতে পারবে?
আপনার জন্য সব পারব।
কিন্তু তোমার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য চলে গেলে তুমি তো আর তুমি থাকবে না। আমার অসাধারণ মেয়েটা সাধারণ হয়ে যাবে। ঋধিতা আমাকে অপদস্থ করবে, তুমিও অপদস্থ হবে। সেও অপদস্থ হবে। আমরা সবাই অপদস্থ হব। তা কি ঠিক হবে?
না। তাহলে আমি কী করব?
কেন?
আপনাকে ছাড়া যে আমার কিছুই ভালো লাগে না।
ভালো লাগবে। অক্সফোর্ড চলে যাও।
যাব, কিন্তু শর্ত আছে।
কী?
প্রতি তিন মাসে কমপক্ষে একবার আমাকে দেখতে যেতে হবে। প্রতিদিন দুই বার রিং করব, আপনাকেও দুই বার রিং করতে হবে।
তাই হবে।