Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব – Page 56 – Dr. Mohammed Amin

সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব

সন্মিত্রা: ষষ্ঠপঞ্চাশত্তম (৫৬) পর্ব / ড. মোহাম্মদ আমীন

ফিসে ঢুকতেই অফিস সহায়ক সোহরাব একটা টেলিফোন নম্বর দিয়ে বললেন, টিআই চৌধুরী নামের একজন রিং করেছিলেন। আপনাকে এই নম্বরে রিং করতে বলেছেন।
টিআই চৌধুরী মানে কল্পনার স্বামী। ইংরেজরা বলে টাহসিন চৌডুরি। নম্বরটা বাংলাদেশি। অবাক লাগল, সে বাংলাদেশে এল অথচ আমাকে জানাল না! আমার মোবাইলেও রিং করতে পারত। তাড়াতাড়ি মোবাইলটা বের করলাম পকেট থেকে, বন্ধ। মাঝে মাঝে এমন হয়। ঘুমাতে যাওয়ার সময় বন্ধ করে শুই। অনেক সময় সকালে আর খোলার কথা মনে থাকে না। এজন্য কত বার যে কত জনের কাছে বিব্রত হতে হয়েছে এবং কত অসুবিধায় পড়তে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।
মোবাইল ওপেন করলাম, তাহসিন পঞ্চাশ বারের অধিক রিং করেছে।
অফিসের টেলিফোন থেকে রিং করলাম তাহসিনের দেওয়া নাম্বারে।
বিশ সেকেন্ডের মধ্যে তাহসিনের গলা শোনা গেল, স্যার আমি বড়ো বিপদে। জীবন আমার, মরণের গর্তে ঢুকে যাচ্ছে। বাঁচার জন্য আপনার কাছে ছুটে এসেছি। আমাকে বাঁচান।
কী হয়েছে?
এসব কথা ফোনে বলা যাবে না। আমি কোথায় আসব বলুন?
তুমি কোন হোটেলে উঠেছ?
সোনারগাঁও।
আমি আসছি।
তাহসিন অক্সফোর্ড থেকে এসেছে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। বিষয়টা সাংঘাতিক। দেরি করা আদৌ উচিত হবে না। এখন এগারোটা। এসময় রাস্তাঘাট তুলনামূলকভাবে ফাঁকা থাকে। দেরি না করে রওনা দিলাম। কতক্ষণ লাগবে জানি না। ইতোমধ্যে আরও দুই বার রিং করে ফেলল তাহসিন।
রিসেপশনে পায়চারি করছিল সে। আমাকে দেখে লোকজনের সামনেই ডুকরে কেঁদে জড়িয়ে ধরে বলল, স্যার আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি হয়তো আর বাঁচতে পারলাম না। আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
কী হয়েছে? বলে তার দিকে তাকালাম।
মুখ নয় যেন, কষ্টের পাহাড়। ফরসা মুখটা ভীষণ কাতর। চোখ দুটি লাল। ভয় পেয়ে গেলাম। কোনো মানুষকে এত বিপর্যস্ত কখনো দেখিনি। এমনকি ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার মুখেও। দায়িত্বের অংশ হিসেবে অনেক মানুষের ফাঁসির মঞ্চে উপস্থিত থাকতে হয়েছে। কিন্তু তাহসিনের মতো এমন সুন্দর মানুষের এত অসুন্দর মুখ দেখিনি। আমাকে শঙ্কিত করে দিল তার অবয়ব।
গলায় মাফলার। হাতটাও কাঁপছে। প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছে—বুঝতে কারও কষ্ট হবে না। এত সুন্দর মুখে সামান্য অসুন্দরও উৎকট লাগে। কথাগুলোও জড়িয়ে আসছে। শরীরের কাঁপন চুলেও প্রবাহিত।
কী ব্যাপার?
কল্পনা আমার সঙ্গে থাকতে চাইছে না।
কখন এসেছ?
সকালে।
জানালে না যে?
রাতে রিং করেছিলাম মোবাইলে। সুইচ অফ ছিল। তাছাড়া আমিও খবর দিয়ে আসতে চাইনি। আমি আমাতে নেই। কী করতে হবে না হবে বুঝতে পারছিলাম না। ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন।
এই গরমে গলায় মাফলার কেন?
মাফলার সরিয়ে নিল তাহসিন। তাকিয়ে শিউরে উঠলাম, একটা লম্বা ব্যান্ডেজ। নিশ্চয় ছুরি বা ধারালো কিছু দিয়ে পোঁচ দেওয়া হয়েছে।
কী করে হলো?
কল্পনা রিভলভারের আগা দিয়ে আঘাত করেছে।
হাত কাঁপছে কেন?
মগ ছুড়ে দিয়েছিল গায়ে। মাথা বাঁচাতে গিয়ে ওখানে লেগেছে।
কী করেছ তুমি?
আমি কিছু করিনি।
নিশ্চয় এমন কথা বলেছ, যেখানে আমার অবমূল্যায়ন ছিল, নইলে সে কিছুতেই তোমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে পারে না। আমি তাকে চিনি শিশু বয়স থেকে। তোমাকেও চিনি। দুজনের সম্পর্ক কখন কী হতে পারে তা আমি ভালো জানি। কল্পনার মগজের প্রতিটি কোষ আমার চেনা। আমার পর তুমিই তার ভালোবাসার মানুষ। সে কী করতে পারে না পারে এবং কখন আর কেন করবে সব আমার জানা আছে। যাই হোক, চলো, রুমে গিয়ে সব জানা যাবে।
রুমে ঢুকে দেখলাম, বিছনাটা এলোমেলো। বোঝা যায় সারা রাত শুধু এপাশ-ওপাশ করেছে। বাকি সব জিনিস যেমন রাখা হয়েছে তেমনই আছে। সকালে মনে হয় হাউজ কিপারদের ঢুকতে দেয়নি।
কল্পনা তোমাকে মারল কেন?
সকালে নাশতা করছিলাম। অনেকদিন থেকে কল্পনা আপনার সঙ্গে দেখা করার কথা বলে আসছিল।
নিয়ে আসনি কেন?
বলছিলাম, ছুটি নিয়ে আসব। পরশু রাতে হঠাৎ বলে উঠল, আজই আমি স্যারের সঙ্গে দেখা করতে যাব। তার শরীর ভালো না। তাই বললাম, শিশুটা আসুক তারপর যেও। সে বলল, রাখ তোমার শিশু। এ আসার আগে ভাব্বাকে দেখতে না পেলে এটাকে নষ্ট করে দেব। তাহলে তো আর কোনো প্রবলেম থাকবে না, না কি! ভাব্বাকে দেখতে ইচ্ছে করছে, দেখবই।
একথা শুনেই তোমার রাগ উঠে যায় হঠাৎ, তাই না?
ঠিক বলেছেন স্যার। আমার রাগ উঠে যায় হঠাৎ। বললাম, তোমার তো ভাব্বা আছে। চলে যাও, খুব মজায় থাকবে। সারাক্ষণ ভাব্বা, ভাব্বা, সে তোমার কে? এত কী? বিবাহিত হয়ে সবসময় পরপুরুষের কথা বলতে লজ্জা করে না? সে তো তোমার রক্তসম্পর্কের কেউ নয়।
তারপর, তারপর কী হলো? আমি লজ্জাকে ঢেকে রেখে বললাম।
কল্পনা তার হাতে থাকা গরম দুধের মগটা প্রচণ্ড জোরে আমাকে ছুড়ে দিয়ে বলল, বেয়াদব, বর্বর, তোমার মতো লাখ তাহসিনও আমার ভাব্বার নখের সমান হবে না। স্বামী মাত্রই ছোটোলোক। তুমি নীচ, তোমার অক্সবিজম অক্স হয়ে গেছে আমার কাছে। ষাঁড় কোথাকার? তুমি ভাব্বাকে অপমান করেছ।
এরপর তুমি আরও রেগে গেলে। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললে, তাই তো?
হ্যাঁ। বললাম, বিয়ের পর পরপুরুষের জন্য এমন করা ভালো মেয়ের লক্ষণ নয়। তুমি আমার স্ত্রী। তোমার সব ভার এখন আমার। কল্পনা বলল, আমার অবস্থান এত নাজুক নয় যে, অন্য কারও ওপর ভর করে তার প্রকাশ ঘটাতে হবে। আমার কীর্তি এত নগণ্য নয় যে, তুমি তাহসিনের ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে। আমি তোমার ওপর ভর করে উঠিনি যে, ধপাস করে ফেলে দিলে ভেঙে যাব। আমি পড়তে পড়তে উঠেছি। তাই পড়ে গেলেও আমার কিছু হবে না। আমার ভাব্বাকে নিয়ে অপমানজনক কথা বলেছ। তোমাকে আমি শেষ করে দেব, বলেই ড্রয়ার থেকে রিভলভার বের করে তার আগা দিয়ে গলায় আঘাত করে।
তাহসিন, তোমার গলায় যে দাগ সেটি রিভলভারের ডগার আঘাত বলে মনে হয় না, বলো তো কী হয়েছে?
তার কাছে একটা ছুরি আছে। আপনি দিয়েছিলেন।
হ্যাঁ, বোলি চাকু।
ওই চাকুর ভোঁতা অংশ দিয়ে আঘাত করেছে। ধারালো অংশ দিয়ে কাটতে চেয়েছিল। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভোঁতা অংশ এসে গেছে এবং আমি বেঁচে গেলাম। তারপর আমি পালিয়ে চলে এসেছি। চাকুটি আপনি না কি আমাকে জবাই করার জন্য তাকে দিয়েছেন ।
আমি হেসে বললাম, তাহসিন, আমি একদিন বলেছিলাম না, তোমার কপালে খারাবি আছে! বলেছিলাম— সে এত মারাত্মক ধারালো যে, খুব সাবধানে নড়চড়া করতে হবে।
ভাব্বা, আমার ভুল হয়ে গেছে।
তোমাকে ভুগতে হবে প্রচুর। মনে হচ্ছে, সারা জীবন।