Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব – Page 57 – Dr. Mohammed Amin

সন্মিত্রা : এক মলাটে সন্মিত্রা: সন্মিত্রা সম্পূর্ণ উপন্যাস : প্রথম থেকে শেষ পর্ব

সন্মিত্রা: সপ্তপঞ্চাশত্তম (৫৭) পর্ব / ড. মোহাম্মদ আমীন

খাবার রুমেই আনিয়ে নিল তাহসিন। সে খাচ্ছে না, কাঁদছে। সারাদিন খায়নি। চেহারায় ক্লান্তি। সঙ্গে বিষাদ আর ক্ষুধা। সবগুলো একসঙ্গে মাথাচাড়া দিয়েছে।
চারটা খেয়ে নাও।
খেতে ইচ্ছে করছে না।
রিং করলাম কল্পনাকে। রিং পেয়ে কল্পনা মহোচ্ছ্বাসে বলল, ভাব্বা, কেমন আছেন?
তাহসিন কোথায়?
ভাব্বা আপনি কেমন আছেন বলুন না। গতকাল কেন রিং করেন-নি?
ভালো, তাহসিন কোথায়?
মনে হয় বাংলাদেশে।
কেন?
আপনার সঙ্গে দেখা করতে গেছে।
কে বলেছে?
অনুমান করছি। কোন ঘটনার পর কোন ঘটনা ঘটাতে পারে তা যদি না বুঝতে পারি, তাহলে কেন তার স্ত্রী হলাম; কিন্তু সে পারবে না আমি কোথায় তা বলতে।
তোমাদের মধ্যে কি ঝগড়া হয়েছে?
না তো! তবে তার সঙ্গে আমি সংসার করব না।
কেন?
ঝগড়া হতে পারে তাই। আমার সঙ্গে ঝগড়া হওয়া মানে তার মৃত্যু। বিপদ আসার আগে প্রস্তুতি নিয়ে থাকা ভালো। ডিভোর্সের সব কাগজপত্র রেডি। এলেই হাতে ধরিয়ে দেব।
তোমার পেটে তার শিশু।
ভাব্বা, এটি আমার খোকা। যদি তার শিশু হয়, আমার পেটে কেন। তার শিশু হলে তার পেটে থাকত। সে যদি বলে, এটি তার খোকা তাহলে এটাও শেষ করে দেব। তার কোনো জিনিস আমার কাছে থাকবে না।
শোনো, কথার ওপর কথা বলিও না। এটি শোভন নয়।
সরি, ভাব্বা।
খাওয়াদাওয়া করেছ?
করেছি।
মন কেমন?
উচ্ছ্বসিত হাসি দিয়ে আমার কানকে মধুর করে দিয়ে বলল, ভাব্বা জীবনে এই প্রথম আপনি আমাকে বকা দিলেন। আমি বুঝতে পারলাম, নিশ্চয় আমি কোনো একটা ভুল করতে যাচ্ছিলাম। এখন বলুন আমার মন কেমন?
ফুরফুরে। একটুও কষ্ট হচ্ছে না? তাই তো?
হ্যাঁ।
তাহসিনের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে।
আপনাকে নিয়ে কেউ সামান্য কিছু বললে, পৃথিবীসুদ্ধ উলটে দেব। তাহসিন আপনার তুলনায় আমার কাছে হাতের নখের অপ্রয়োজনীয় অগ্রভাগ। আসলে, মেয়েদের জন্য স্বামী একটা উৎকট ঝামেলা। এজন্য আমি বিয়ে করতে চাইনি। আপনি বাধ্য করেছেন। ইস, আপু কী ভালো আছে।
শোনো, ওই শিশু তোমারও নয়, তাহসিনেরও নয়।
তাহলে কার?
পৃথিবীর। মা-বাবা কেবল লালন-পালনের দায়িত্বে থাকে। প্রকৃতি তোমাদের মাধ্যমে শিশুটিকে আনিয়েছে। এটাই তোমাদের কৃতিত্ব। আর কিছু না। কেউ যদি তার সন্তানকে মেরে ফেলে তা কি খুন নয়?
অবশ্যই খুন।
সুতরাং …।
ভাব্বা, আমি বুঝেছি। আপনি আমাদের কোনো স্বার্থ ছাড়া বড়ো করে তুলেছেন। আমার পেটের শিশুর রক্ষণাবেক্ষণে কোনো অবহেলা করা চলবে না। আপনার এই নির্দেশ পালিত হবে।
তুমি তাহসিনকে মারলে কেন? এ তো ভালো না। খুব খারাপ কাজ করেছ।
কল্পনা খুব স্বাভাবিক গলায় বলল, পরিস্থিতিই আমাকে এমন খারাপ কাজটা করতে বাধ্য করেছে। ভাগ্যিস পালিয়ে গিয়েছিল। নইলে মেরেই ফেলতাম। প্রয়োজনে খারাপ না হলে ভাব্বা আমাকেই কারও খারাপ আচরণের শিকার হতে হবে। আপনিই তো এটি বলেছেন। আপনার বিরুদ্ধে কিছু বললে, কাউকে আমি ছাড়ব না, এমনকি আপনাকেও?
কী!
আপনি যদি কখনো আপনার বিরুদ্ধে কিছু বলেন, তাহলে আপনাকেও আমি ছাড়ব না। খুন করে ফেলব।
তুমি কি তাহসিনকে ভালোবাস?
ভালোবাসি।
তাহলে তাকে দূরে সরিয়ে দিও না। ক্ষমা করে দাও।
আমি ক্ষমা করতে পারব না।
ক্ষমা ভালোবাসার প্রাণ। তুমি যদি তার অভাব বুঝতে না পার তাহলে তোমাদের বন্ধন কখনো দৃঢ় হবে না। আসলে পরস্পরের অভাব বুঝতে পারাই ভালোবাসা। যা ক্ষমার মাধ্যমে পরিশীলিত হয়।
ক্ষমা করে দেব, কিন্তু ভুলতে তো পারব না। তাহসিনকে আজীবন পস্তাতে হবে। তবে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলে ক্ষমা করতে পারি; হয়তো ভুলেও যেতে পারি।
কথাগুলো শেষ করে ভাব্বা বলে কেঁদে দিল কল্পনা।
কাঁদছ কেন মা?
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
কেন?
বাচ্চাটা শুধু আঘাত দিচ্ছে। আপনি যদি আসেন আমার কষ্ট কমে যাবে। আসবেন, আসবেন তো?
আসব।
কখন?
তাহসিনের সঙ্গে।
থ্যাঙ্ক ইউ ভাব্বা, আই লাভ ইউ।
আই লাভ ইউ টু।
মোবাইল রেখে তাহসিনকে বললাম, কল্পনা তোমাকে আসলেই ভালোবাসে।
কিন্তু এমন করে কেন?
বেশি ভালোবাসার প্রকাশ এমনই হয়। প্রকৃত ভালোবাসা কখনো লোক দেখানো হয় না। এটি কথামালা নয়, অন্তর্মালা। মনের নিভৃতে থাকে। তা বুঝে নিতে হয়।
“কিন্তু একসময় সে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসত”, তাহসিন বলল, “এখন আগের মতো পাত্তা দেয় না।”
তাহলে ধরে নাও তোমাদের ভালোবাসায় পূর্ণতা এসেছে। অথবা তুমিও তাকে আগের মতো ভালোবাসা দিচ্ছ না। নদী যখন পূর্ণ হয় তখন স্রোত চোখে পড়ে না। তোমাদের দুজনের ভালোবাসা এখন সমান টইটম্বুর, তাই মনে হচ্ছে কমে গেছে। ভালোবাসা পাওয়ায় মজা আছে, কিন্তু তৃপ্তি নেই। তবে দেওয়ায় মজা এবং তৃপ্তি দুটোই আছে। ভালোবাসা দিতে শেখো, দেখবে ভালোবাসা কেমন জোয়ারের মতো এসে তোমাকে প্লাবিত করে দিচ্ছে। এটি কখনো অবদমন করে রেখ না। ঘৃণাকে ভালোবাসায় পরিণত করার এটিই একমাত্র উপায়। আমি এটি রচনার কাছে শিখেছি।
কল্পনা আমাকে ক্ষমা করে দিয়ছে তো? স্বাভাবিক হয়ে যাবে তো?
তোমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পুরো দায়িত্ব তোমাকেই পালন করতে হবে। নতুবা তোমার পক্ষে কল্পনার সঙ্গে একত্রে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে।