সহজ সূত্রে বাংলা বানান
ড. মোহাম্মদ আমীন
২১. চাচ্ছি, গেছেন, গেছিলেন, যেয়ে, গাচ্ছি প্রভৃতি রূপও অশুদ্ধ। শুদ্ধ হচ্ছে— চাইছি, গিয়েছেন, গিয়েছিলেন, গিয়ে, গাইছি প্রভৃতি।
২২. যেসকল ক্রিয়াপদের বানানের শেষে ‘ই’ এবং ‘য়’ উভয় শুদ্ধ, উত্তম পুরুষের (আমি, আমরা) ক্ষেত্রে সেসকল ক্রিয়াপদের বানান হ্রস্ব-‘ই’ দিয়ে লিখতে হবে। যেমন—
ক. আমি মাঠে যাই।
খ. আমরা স্কুলে খাই।
গ. আমি লাল জামাটি চাই।
যেসকল ক্রিয়াপদের বানানের শেষে ‘ই’ এবং ‘য়’ উভয়ই শুদ্ধ, নাম পুরুষের (তারা, সে, টম ইত্যাদি) ক্ষেত্রে সেসকল ক্রিয়াপদের বানান ‘য়’ দিয়ে লিখতে হবে। যেমন—
ক. সে স্কুলে যায়। কামাল বইটি চায়।
খ. তারা পড়তে চায়। তারা ঘুমোতে যায়।
গ. অথই আম খায়।
২৩. বাক্যের শেষে একাধিক যতিচিহ্নের (।।।, !!!!, ??? ইত্যাদি) ব্যবহার ব্যাকরণসিদ্ধ নয়। এটি হাস্যকর এবং অকারণ ও দৃষ্টিকটু। তাই, বাক্যের শেষে একাধিক যতিচিহ্ন দেওয়া সমীচীন নয়। অনেকে লিখেন- কী দারুণ!!!। এমন ঠিক নয়, লিখতে হবে- কী দারুণ!
২৪. বিদেশি শব্দের বানানে ক্ষেত্র-অনুযায়ী ‘এ’ বা ‘এ’-কারের জন্য ‘অ্যা’ বা ‘্যা’ লিখতে হবে। যেমন: অ্যাসিড, ক্যাট, ব্যাংক, ম্যাচ, অ্যান্ড (And), অ্যাকাডেমি ইত্যাদি।
২৫. করবা, পারবা, পড়বা, চলবা, মানবা ইত্যাদি রূপের ব্যবহার চলিত বা লেখ্য রীতিতে শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হচ্ছে— করবে, পারবে, পড়বে, চলবে, মানবে ইত্যাদি। অর্থাৎ, ক্রিয়াপদের শেষে ‘-বা’ যুক্ত করা যাবে না। তবে কোনো রচনা তথা গল্প বা উপন্যাসে আঞ্চলিক কথোপকথন প্রকাশে ক্ষেত্রে লেখা যাবে।
২৬. নাই, দিব, লিখা, বুঝা, ভিতর, উপর, উঠা, উড়া, শুনা, ফিরা, জিতা প্রভৃতি রূপ কেবল সাধু রীতিতে ব্যবহার করা যাবে। চলিত রীতিতে বানানগুলো লিখতে হবে যথাক্রমে— নেই/নি, দেব, লেখা, বোঝা, ভেতর, ওপর, ওঠা, ওড়া, শোনা, ফেরা, জেতা ইত্যাদি।
২৭. টা, টি, গুলো, গণ, রা, সমূহ, বৃন্দ, মালা, সহ, সব ইত্যাদি নির্দিষ্টতা জ্ঞাপক ও বহুবচনবোধক শব্দ পূর্ববর্তী শব্দের সঙ্গে ফাঁকা না-রেখে লিখতে হবে। যেমন: খাতাটা, বলটি, কলাগুলো, অতিথিগণ, ছাত্ররা, উদাহরণসমূহ, অতিথিবৃন্দ, পর্বতমালা, ব্যাখ্যা-সহ, ভাইসব, শিক্ষকমণ্ডল ইত্যাদি।
২৮. ঊর্ধ্ব-কমা যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। যেমন: ।দুইটি’ নয়, লিখতে হবে ‘দুটি’। ‘হ’তে নয়, লিখতে হবে ‘হতে’। কয়েকজন = ক’জন নয়, লিখতে হবে ‘ক’জন’। ইত্যাদি।
২৯. সম্মাননীয় ব্যক্তি, যাঁদের সাধারণত ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করা হয়, তাঁদের প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত সর্বনামে ‘চন্দ্রবিন্দু’ ব্যবহার করা উটিক। যেমন: তাঁরা, যাঁরা, তাঁদের, তাঁর, ওঁকে, তাঁহাদের, যাঁহাদের, তাঁহার ইত্যাদি। তবে, অনুনাসিক বর্ণযুক্ত (ঙ, ঞ, ণ, ন, ম ইত্যাদি) সর্বনামে ‘ঁ’ যুক্ত করতে হবে না। যেমন: তিনি (‘তিঁনি’ ভুল), যিনি (‘যিঁনি’ ভুল), উনি (‘উঁনি’ ভুল) ইত্যাদি। কারণ, অনুনাসিক বর্ণগুলো নিজেরাই চন্দ্রবিন্দুর কাজ করে। এজন্য ‘খান’ বানানে ‘দন্ত্য-ন’ আছে, তাই চন্দ্রবিন্দু নেই। কিন্তু ‘খাঁ’ লিখলে চন্দ্রবিন্দু দিতে হয়।
৩০. জাতিবাচক শব্দের শেষে ও ভাষার নামের শেষে হ্রস্ব-‘ই’-কার লিখতে হবে। যেমন: বাঙালি, ইংরেজি, জাপানি, ফরাসি, আফগানি, ইংরেজি, হিন্দি, পাকিস্তানি, সিঙ্গাপুরি ইত্যাদি।
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন
শব্দের ফাঁকফোকড় : ফাঁক অফাঁক : কখন সেঁটে কখন দূরে
সহজসূত্রে বাংলা বানান : বাংলা বানান শেখার নিয়ম/১
সহজসূত্রে বাংলা বানান : বাংলা বানান শেখার নিয়ম/২
সহজসূত্রে বাংলা বানান: বাংলা বানান শেখার নিয়ম/৪
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন