১১. সংস্কৃত ছাড়া অন্য কোনো উৎসের শব্দের বানানে ‘ঋ’, ‘ৃ’, ‘ণ’ ও ‘ষ’ ব্যবহার করা হবে না। যেমন: মাষ্টার, ব্যারিষ্টার, ‘পোষ্ট’, ‘ঠাণ্ডা’, ”মডার্ণ’, ‘এণ্ড’, ‘ষ্টোর’ ইত্যাদি বানান লিখতে হবে যথাক্রমে— মাসটার, ব্যারিসটার, ‘পোস্ট’, ‘ঠান্ডা’, ‘মডার্ন’, ‘অ্যান্ড’, ‘স্টোর’ ইত্যাদি। তবে কিছু কিছু অতৎসম শব্দে মূর্ধন্য-‘ষ’ ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। যেমন: ষাঁড়, ষাট, পোষা, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি।
১২. নিশ্চয়ার্থক ‘ই’ শব্দের সঙ্গে কার-চিহ্ন রূপে যুক্ত না-হয়ে পূর্ণ রূপে শব্দের পরে যুক্ত হবে। যেমন: আমাকে এখনই যেতে হবে। তখনই তোমাকে ফোন করেলিশা। আজই আমাকে বাড়ি যেতে হবে। তোমার জন্যই আজ আমার এ অবস্থা। বিষয়টা আমাকেই দেখতে হবে। ইত্যাদি।
১৩. কোনো শব্দের বানান সংক্ষিপ্তভাবে লিখতে হলে ডট ( . ) চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে। যেমন: মোহাম্মদ = মো.। বিশেষ দ্রষ্টব্য: = বি. দ্র.:। বরকত = ব.। ডাক্তার = ডা.। খন্দকার= খ। ইত্যাদি।
১৪. বিসর্গ ( ঃ ) কোনো বিরামচিহ্ন নয়। এটি এক বর্ণ। তাই শব্দ সংক্ষেপণে বা কোলন( : )-এর পরিবর্তে বিসর্গ ব্যবহার করা যাবে না। (১) ‘যেমনঃ’ অশুদ্ধ, শুদ্ধ হচ্ছে ‘যেমন:’। (২) . ‘মোঃ’ অশুদ্ধ, শুদ্ধ হচ্ছে ‘মো.’। (৩) ‘উত্তরঃ’ বা ‘উঃ’ অশুদ্ধ, শুদ্ধ হচ্ছে ‘উত্তর:’ বা ‘উ.:’। ইত্যাদি। প্রসঙ্গত, প্রমিত বাংলা বানানে শব্দের শেষে ‘বিসর্গ’ বর্জনীয়। যেমন: মূলত (‘মূলতঃ’ ভুল), ক্রমশ (‘ক্রমশঃ’ ভুল), পুনঃপুন (‘পুনঃপুনঃ’ ভুল), বস্তুত (ভুল বস্তুতঃ) ইত্যাদি।
১৫. কিছু শব্দ আছে, যেগুলোর অন্ত্য-‘অ’-এর সংবৃত (‘ও’-এর মতো) এবং হলন্ত উচ্চারণের জন্য অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। এধরনের শব্দের বানানে সংবৃত উচ্চারণ বোঝাতে অন্ত্যে ‘ও’-কার ব্যবহার করতে হবে। যেমন: ভালো, হতো, মতো, ইত্যাদি। তবে, যেসকল শব্দে ‘অ’-ধ্বনির সংবৃত কিংবা হলন্ত উচ্চারণের জন্য অর্থগত কোনো সমস্যা দেখা দেয় না, সেসকল শব্দে ‘ও’-কার ব্যবহার করা অনুচিত। বিশেষ করে ক্রিয়াপদের শেষে ‘ও-কার’ ব্যবহার করা মোটেও বিধেয় নয়।। ভবিষৎ অনুজ্ঞাবাচক বাক্য ছাড়া অন্যান্য কালের ক্ষেত্রে ক্রিয়াপদের শেষে ‘ও’-কার বর্জন করা উচিত।
যেনম: ক. ‘ভাল’ শব্দটির অন্ত্য-‘অ’-এর উচ্চারণ সংবৃত (ভালো) হলে শব্দটি দিয়ে গুণ বোঝানো হয় এবং হলন্ত (ভাল্) হলে ‘কপাল’, ‘ভাগ্য’, ‘ললাট’ ইত্যাদি বোঝায়। তাই, ‘গুণ’ অর্থে ব্যবহৃত ভালো বানান অবশ্যই ‘ও’-কার দিয়ে লিখতে হবে।
খ. ক্রিয়া: কর, বল, পড়, হল, যাব, পড়ব ইত্যাদি বানান ‘ও’-কার ছাড়া লেখাটাই উত্তম। কারণ, বাক্যে উল্লেখ-করা শব্দগুলো ব্যবহার করলে ‘কর্’ (tax), ‘বল্’ (force), ‘হল্’ (hall) ইত্যাদি অর্থ ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে, ভবিষৎ অনুজ্ঞাবাচক বাক্যগুলোয় ‘ও’-কার ব্যবহার করতে হবে। এধরনের বাক্যে চাইলে আদিতেও ‘ও’-কার ব্যবহার করা যাবে। যেমন:
ক. তুমি কাল হলেও কাজটি করো/কোরো।
খ. কখনো মিথ্যা বলো/বোলো না।
১৬. ‘অধিকন্তু’ অর্থে ব্যবহৃত ‘ও-কার’কে চিহ্ন হিসেবে না-লিখে বর্ণ হিসেবে লিখতে হবে। যেমন: আরও, তোমারও, আপনিও, এখনও, আবারও, আজও, পরশুও আজও, কালও, আগামীকালও ইত্যাদি।
১৭. রেফের পর ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব হবে না। যেমন: ক. ‘কার্য্য’ না-লিখে লিখতে হবে ‘কার্য’। খ. ‘কর্ম্ম’ না-লিখে ‘কর্ম’ লিখতে হবে। একইভাবে, বর্ত্তমান > বর্তমান; অর্জ্জন > অর্জন; কার্ত্তিক > কার্তিক, বর্ম্ম> বর্ম, কর্ত্তা> কর্তা ইত্যাদি।
১৮. পরা/পড়া: শরীরের কোনো অংশে পরিধানযোগ্য হলে ‘পরা’ (wear) এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘পড়া’ লিখতে হবে। যেমন: কাপড় পরা, রিং পরা, জুতো পরা। তব বই পড়া, পিছলে পড়া, বৃষ্টি পড়া, আকাশ থেকে পড়া, নামাজ পড়া, গাড়িতে পড়া ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ‘বিলম্বে’ অর্থে ‘পরে’ বানান ‘র’ দিয়ে লিখতে হবে। যেমন: আমি পরে (‘বিলম্বে’ বা ‘এখন নয়’ অর্থে) আসব।
১৯. বিশেষণ পদ সর্বদা পরবর্তী পদ থেকে আলাদাভাবে লিখতে হবে। যেমন: ভালো ছেলে, লাল ফুল, টক দই ইত্যাদি। উল্লেখ্য, বাংলা স্ত্রীবাচক বিশেষ্যের বিশেষণ এবং বিধেয়
বিশেষণের লিঙ্গভেদ হয় না। মনে রাখতে হবে, যদি বিশেষণ, বিশেষিত পদের পরে বসে, তবে তাকে বিধেয় বিশেষণ বলা হয়। এক্ষেত্রে, যদি স্ত্রীজাতীয় পদের বিশেষণ থাকে, তবে বিশেষণটির স্ত্রীলিঙ্গ না-হয়ে পুংলিঙ্গবাচক রূপটি ব্যবহৃত হয়। যেমন:
ক. বালিকটা খুব সুন্দর (সুন্দরী হবে না)।
খ. অথই অনেক বুদ্ধিমান। ইত্যাদি।
২০. চলিত রীতিতে ঘটমান বর্তমান কালের ক্ষেত্রে করতেছে, করতেছি; পড়তেছে, পড়তেছি; আসতেছে, আসতেছি; বলতেছে, বলতেছি; শুনতেছে, শুনতেছি; লিখতেছে, লিখতেছি ইত্যাদি রূপ শুদ্ধ নয়। লিখতে হবে— করছে, করছি; পড়ছে, পড়ছি; আসছে, আসছি; বলছে, বলছি; শুনছে, শুনছি ইত্যাদি। সাধু রীতিতে লিখতে চাইলে করিতেছি, পড়িতেছে, আসিতেছে, লিখিতেছি ইত্যাদি লেখা যাবে। এক-কথায়, চলিত রীতিতে ক্রিয়াপদের শেষে ‘-তেছ’, ‘-তেছে’, ‘-তেছি’, ‘-তেছেন’ ইত্যাদি যুক্ত করা যাবে না।
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন
শুদ্ধ বানান : ব্যাকরণগতভাবে অশুদ্ধ হলেও বহুলপ্রচলিত কিছু বাগ্ভঙ্গি
শব্দের ফাঁকফোকড় : ফাঁক অফাঁক : কখন সেঁটে কখন দূরে
শব্দের ফাঁকফোকড় : ফাঁক অফাঁক : কখন সেঁটে কখন দূরে
সহজসূত্রে বাংলা বানান : বাংলা বানান শেখার নিয়ম/১
সহজসূত্রে বাংলা বানান : বাংলা বানান শেখার নিয়ম/৩