Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
সাইপ্রাস (Cyprus) : ইতিহাস ও নামকরণ – Dr. Mohammed Amin

সাইপ্রাস (Cyprus) : ইতিহাস ও নামকরণ

কীভাবে হলো দেশের নাম (ইউরোপ)

ড. মোহাম্মদ আমীন

সাইপ্রাস (Cyprus)

সাইপ্রাস ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এর পশ্চিমে গ্রিস, পূর্বে লেবানন, সিরিয়া ও ইসরাইল, উত্তরে তুরস্ক  এবং দক্ষিণে মিসর। সাইপ্রাসের ম্যাপ দেখতে ইঁদুরের মতো।সাইপ্রাস ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। তবে এটি একটা বিভক্ত দ্বীপ। এ দ্বীপের উত্তরাংশকে তার্কিস রিপাবলিক অব নর্দান সাইপ্রাস বলা হয়। এটি তুর্কিদের দ্বারা শাসিত। তবে তুরস্ক ছাড়া এ নামটিকে অন্য কোনো দেশ স্বীকৃতি দেয়নি। এটা অনেকে কাছে দখলকৃত সাইপ্রাস (Occupied Cyprus) নামে পরিচিত। দ্বীপের দক্ষিণাংশ ইন্ডিপেন্ডেট রিপাবলিক অব সাইপ্রাস নামে পরিচিত। এ অংশকে বলা হয় গ্রিক সাইপ্রাস। যদিও এটি গ্রিসের কোনো অংশ নয়।

ল্যাটিনিকরণ গ্রিক শব্দ কিউপ্রোস (Kupros)) হতে সাইপ্রাস শব্দের উদ্ভব। মাইসেনিয়ান গ্রিক উচ্চারণ (Kupirijo, “Cypriot)। বলা হয় গ্রিক kyparissos(cypress) বা kypros হতে সাইপ্রাস নামের উদ্ভব। উল্লেখ্য kypros অর্থ মেহেদি। সাইপ্রাস নামের উদ্ভব সম্পর্কে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রবাদটি কপার প্রবাদ নামে পরিচিত। গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষায় মেটাল বা ধাতু বুঝাতে কপার শব্দটি ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে সাইপ্রাস নামক অঞ্চলটি কপার উৎপাদন সরবরাহের জন্য বিখ্যাত ছিল। বিশ্বে কপারের অন্যতম উৎস ছিল সাইপ্রাস। এখান থেকে বিভিন্ন দেশে প্রচুর মেটাল বা কপার সরবরাহ হতো। তাই এর নাম হয়  সাইপ্রাস।

কথিত হয়, সাইপ্রাস গ্রিক পুরাণে বর্ণিত ভালবাসার দেবতা আফ্রোদিতির জন্মস্থান। তাই সাইপ্রাস সারাবিশ্বে ভালবাসার দ্বীপ হিসাবে পরিচিত। এছাড়াও সাইপ্রাসে ভালবাসার ঘটনার আরও দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বলা হয়, এ দ্বীপটি অ্যান্টনি তার প্রিয়তমা ক্লিওপেট্রাকে উপহারস্বরূপ দিয়েছিলেন। ক্লিওপেট্রা তার রূপচর্চার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুতের উদ্ভিজ্জ ও রাসায়নিক রসদ এখান থেকে সংগ্রহ করতেন। এখানে তিনি রোপন করেছিলেন রূপচর্চার জন্য প্রয়োজনীয় ওষধিবৃক্ষ। ভালবাসার বিষয়ে এখানে আরও একটি গল্প প্রচলিত আছে। সিংহ হৃদয় রিচার্ড ক্রুসেডকালীন স্থানীয় এক মহিলার প্রেমে পড়ে একবছর এখানে বসবাস করেছিলেন।

দেবি আফ্রোদিতির জন্মস্থান হিসাবে সাইপ্রাসকে দেবীর শহরও বলা হয়। সাইপ্রাসের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকা ‘ইতোকরেমনস’ মানব বসতির আদিভূমি হিসাবে খ্যাত। এটি অত্যন্ত প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে  প্রত্নতত্ত্ববিদরা মানুষের জীবাশ্মের সঙ্গে একই সমাধিতে একটি বিড়ালের জীবাশ্ম পান। এটি প্রায় ৯,৫০০ বছর পূর্বের জীবাশ্ম। এ পর্যন্ত জ্ঞাত মানুষের পোষা বিড়ালের মধ্যে এটিই প্রথম।

সাইপ্রাসের আয়তন ৯,২৫১ বর্গ কিলোমিটার, তন্মধ্যে জলীয় ভাগ ৯%। দেশের মোট জনসংখ্যা  ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে ১,১৪১,১৬৬ এবং প্রতি বর্গমাইলে জনসংখ্যা ১২৩। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহের মধ্যে কেবল লু´েমবার্গ ও মাল্টার জনসংখ্যা সাইপ্রাসের চেয়ে কম। আয়তন, জনসংখ্যা ও জনসংখ্যার ঘনত্বে সাইপ্রাসের বিশ্ব অবস্থান যথাক্রমে ১৮৮-তম,  ১৫৮-তম এবং  ৮২-তম। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে সাইপ্রাসের জিডিপি (পিপিপি) ২৭.৫১৬ বিলিয়ন এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ৩০,৮৮২ ইউএস ডলার (৩৭-তম)। জিডিপি নমিনাল হচ্ছে ২৩.২৬৩ ইউএস ডলার এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ২৬,১০৯ ইউএস ডলার (৩১-তম) ডলার। দেশটির গিনি ২৯ এবং এইচডিআই ০.৮৪৫ (বিশ্বের ৩২-তম)। সাইপ্রাসের মুদ্রার নাম ইউরো।

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে  কোসোভো তার পতাকায় দেশের মানচিত্র সংযোজন করে। এর পূর্বে সাইপ্রাসই ছিল একমাত্র দেশ, যার পতাকায় দেশের মানচিত্র সংযোজিত। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ আগস্ট সাইপ্রাসের পতাকা প্রথম গৃহীত হয়। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ আগস্ট তা কিছুটা পরিবর্তন করে পুনরায় গৃহীত হয়। গ্রিক পুরাণে বর্ণিত দেবতার বাসস্থান নামে খ্যাত বিখ্যাত পর্বত মাউন্ট অলিম্পাস সাইপ্রাসের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এটি ট্রোডোস রেঞ্জে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৬৪০০ ফুট।

খ্রিষ্ট-জন্মের ১০ হাজার বছর আগে এখানে শিকারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারীদের বসতি গড়ে উঠেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব  ২৪০০ বছর আগে এ দ্বীপে আনাতোলিয়া থেকে প্রথম সভ্য মানুষের আগমন ঘটে। গ্রিকরা আসে খ্রিষ্টপূর্ব  ১৬০০ বছর আগে। সাইপ্রাস বিভিন্ন সময় গ্রিক, রোমান, পারসীয় এবং মিসরীয় শাসকদের অধীনে শাসিত হয়। ৩৯৫  খ্রিষ্টাব্দে  এটি বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। ৬৪৩  খ্রিষ্টাব্দে  সাইপ্রাস আরবরা দখল করে নেয় । ১১৯১ খ্রিষ্টাব্দে  তৃতীয় ক্রুসেডের সময় ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ড সাইপ্রাস দখল করে। ১৫৩৯  খ্রিষ্টাব্দে  অটোমানরা সাইপ্রাসের দখল নিয়ে নেয়। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে  দ্বীপটি ব্রিটেনের সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত হয়। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে  দ্বীপটিকে ব্রিটিশরা নিজেদের কলোনি বলে দাবি করে। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ আগস্ট এক চুক্তির মাধ্যমে সাইপ্রাস স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর তা কার্যকর। ১ অক্টোবর সাইপ্রাসের স্বাধীনতা দিবস।

দেশটির সরকারব্যবস্থা রাষ্ট্রপতিশাসিত। রাষ্ট্রপতি প্রতি পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। নির্বাহী বিভাগ পরিচালনা করেন সরকার, আইন বিভাগ পরিচালনা করেন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। ১৯৬০ সালে প্রণীত সংবিধানে বলা হয়, দেশটির প্রেসিডেন্ট হবেন অবশ্যই একজন গ্রিক সাইপ্রিয়ট বা জাতিগত গ্রিক এবং তুর্কি সাইপ্রিয়ট হবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট যিনি ওই গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে  তুর্কি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত অংশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তবে এ পর্যন্ত তুরস্ক ছাড়া আর কোনো দেশে তাদের সমর্থন করেনি। দেশটির হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্যসংখ্যা ৫৯ জন। এর মধ্যে ৫৬ জন সরাসরি নির্বাচিত হন এবং বাকি তিনটি আসন মেরোনাইট, আর্মেনিয়ান এবং ল্যাটিন সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত।

এখানকার আবহাওয়া সাধারণত গরম এবং শুষ্ক। নভেম্বর থেকে মার্চ শীতকাল এবং ফসলের মৌসুম। এ মৌসুমে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল। সাইপ্রাসের গড় বৃষ্টিপাত ৫৫০ মিলিমিটার। গড় তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তাপমাত্রার এ অবস্থা দেশটিতে বিশাল পর্যটন শিল্প বিকাশে ভূমিকা রেখেছে।

গ্রিক সাইপ্রিয়টদের বেশিরভাগই গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের সদস্য এবং তুর্কি সাইপ্রিয়টদের বেশিরভাগ মুসলিম। ইউরোবেরোমিটার ২০০৫ অনুসারে, সাইপ্রাস হচ্ছে ইউরোপের প্রধান পাঁচটি ধার্মিক দেশের একটি। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত যে পাঁচটি দেশে রাষ্ট্রধর্ম আছে সাইপ্রাস তাদেরও একটি। সাইপ্রাসের রাষ্ট্রধর্ম হচ্ছে ‘সাইপ্রিয়ট অর্থোডক্স চার্চ’।

সাইপ্রাসের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। সরকারি ও  বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। দেশের মোট জিডিপির ৭ শতাংশ ব্যয় হয় শিক্ষার জন্য। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। সাইপ্রাসে একাধিক বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এদেশের অধিবাসী ক্রিস্টোফার পিসারিডস ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে  অর্থনীতি শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

বুলগেরিয়া (Bulgaria) : ইতিহাস ও নামকরণ

ক্রোয়েশিয়া : ইতিহাস ও নামকরণ

সূত্র:  কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক