কীভাবে হলো দেশের নাম (এশিয়া)
ড. মোহাম্মদ আমীন
সাউথ কোরিয়া (South Korea)
দক্ষিণ কোরিয়া পূর্ব এশিয়ার কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অর্ধাংশ নিয়ে গঠিত। এর উত্তরে উত্তর কোরিয়া, পশ্চিমে পীত সাগর, পূর্বে জাপান সাগর এবং দক্ষিণে পূর্ব চীন সাগর অবস্থিত। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ৩০% নিম্নভূমি এবং বাকি অংশ উচ্চভূমি বা পর্বতমালা। নিম্নভূমির অধিকাংশই সমুদ্র উপকূলে, বিশেষত পশ্চিম উপকূলে প্রধান প্রধান নদীর অববাহিকাতে অবস্থিত।
বর্তমানে কোরিয়া (Korea) নামের প্রাচীন বানান ছিল (Corea)। চায়না ভাষা হতে পর্যটক মার্কোপোলের প্রতিলিপিকৃত নাম কাওলি কোরিয়া নামের অন্যতম উৎস। চায়নিজ বর্ণে কোরিয়ান নাম হানজা। হানজা অক্ষরে আধুনিক কোরিয়াকে বলা হতো গোরিও বা কোরিও (Goryeo or Koryo)। কোরিও ছিল তৎকালীন রাজবংশ। এ রাজবংশ ৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১৩৯২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কোরিয়াসহ সে অঞ্চলের অধিকাংশ উপদ্বীপ শাসন করেছে। মার্কোপোলের ভ্রমণকালীন কোরিও রাজবংশের শাসন বলবৎ ছিল। এ রাজবংশের নাম হতে কোরিয়া নামের উৎপত্তি। বর্তমানে কোরিয়া দুই অংশে বিভক্ত। একটি উত্তর কোরিয়া আর একটি দক্ষিণ কোরিয়া।
দক্ষিণ কোরিয়ার মোট আয়তন ১,০০,২১০ বর্গকিলোমিটার বা ৩৬,৬৯১ বর্গমাইল। জলীয়ভাগের পরিমাণ ০.৩%। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে মোট জনসংখ্যা ৫,০৬,১৭,০৪৫ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা ৫০৫.১। আয়তন বিবেচনায় দক্ষিণ কোরিয়া পৃথিবীর ১০৯-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু মোট জনসংখ্যা বিবেচনায় ২৬-তম । অন্যদিকে, জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় এটি পৃথিবীর ১৩-তম জনবহুল দেশ।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপি (পিপিপি) ১.৮৫৩ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার (১৩-তম), সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ৩৬,৬০১ ইউএস ডলার(২৯-তম)। জিডিপি নমিনাল ১.৪৩৫ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার(১১-তম) এবং মাথাপিছু আয় ২৮.৩৩৮ ইউএস ডলার(২৮-তম)। মুদ্রার নাম উয়ান।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিচার ব্যবস্থায় প্রচণ্ড এক ভিন্নতা আছে। এ দেশে কেউ খুন বা ধর্ষণের মতো অপরাধ করার অপরাধে ধৃত হলে তাকে বেঁধে পুলিশ ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় এবং কীভাবে ওই অপরাধ সংঘটিত করেছে তা জনসমক্ষে অভিনয় করে দেখানোর জন্য বাধ্য করা হয়। এজন্য প্রয়োজন বোধে ভিকটিমের ডামি পুতুল বানিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে জেওঙ ওন সেওব (Jeong Won-seob) নামের একজনকে এক স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ ও খুনের অপরাধে ধৃত করে পুলিশ ঘটনাস্থলে নিয়ে কীভাবে ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তা অভিনয় করে দেখানোর জন্য বাধ্য করে। জেওঙ অপরাধী হোক বা না হোক, সে অভিনয় করতে শুরু করে। হাজার হাজার লোক চারিদিক থেকে চিৎকার করে বলতে শুরু করে- তাকে খুন করা হোক। বিমূঢ় জেওঙ শান্ত দৃষ্টিতে জনগণের দিকে চেয়ে থাকে। হতাশায় মুষড়ে পড়ে সে। এভাবে বিচার অনেক কোরিয়ানদের কাছে নিষ্ঠুর মনেও হলেও অধিকাংশ কোরিয়ান এটাকে সমর্থন করে।
দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ যা কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশটি নিয়ে গঠিত। এর সরকারি নাম কোরীয় প্রজাতন্ত্র। দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তরে উত্তর কোরিয়া, পূর্বে জাপান সাগর, দক্ষিণে ও দক্ষিণ-পূর্বে কোরিয়া প্রণালী, যা জাপান থেকে দেশটিকে পৃথক করেছে, এবং পশ্চিমে পীত সাগর। সিউল দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি কোরিয়ার সাম্রাজ্যের পতাকা গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে বর্তমানে ব্যবহৃত পতাকা গ্রহণ করা হয়
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে কোরীয় উপদ্বীপের উত্তর অংশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা এবং দক্ষিণ অংশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা দখলে রেখেছিল। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে এ থেকে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া রাষ্ট্রদ্বয়ের উদ্ভব। ১৯৫০-১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে কোরীয় যুদ্ধের পরে ধ্বংসপ্রায় দক্ষিণ কোরিয়া এখন বিশ্বের বড় অর্থনীতির অন্যতম দেশ।
অবিভক্ত কোরিয়া মূলত জাপানিদের দখলে ছিল। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাবার সময় জাপানিরা সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তার ফলে অবিভক্ত কোরিয়া ২ ভাগে ভাগ হয়ে যায়। তখন উত্তর কোরিয়া ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের মতাদর্শে সমাজতান্ত্রিক ব্লকে চলে যায়। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া আমেরিকার মতাদর্শে পুঁজিবাদি ব্লকে যোগ দেয়। তখন থেকে অভিবক্ত-কোরিয়া উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া নাম নিয়ে দুটি পৃথক রাষ্ট্র হিসাবে শাসন কার্য শুরু করে। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট দক্ষিণ কোরিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ অক্টোবর বর্তমান সংবিধান কার্যকর হয়।
কোরিয়ায় কোনো শিশু জন্মগ্রহণের পরপরই তার বয়স এক বছর গণ্য করা হয়। সুতরাং একজন কোরিয়ানের বয়স, সবসময় তার প্রকৃত বয়সের চেয়ে এক বছর বেশি হয়। কোরিয়ায় প্রকাশ্যে অ্যালকোহল পান বৈধ। যে কেউ ইচ্ছা করলে প্রকাশ্যে অ্যালকোহল বহন ও পান করতে পারে। কোরিয়ানরা শপিং-পাগল জাতি হিসাবে পরিচিত। পৃথিবীর কয়েকটি বৃহত্তম শপিং মলের কয়েকটি দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত। এগুলো সকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। অন্যদিকে, রেস্টুরেন্টগুলো রাত ১১ ঘটিকার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়।
লাল লাল কালি দিয়ে কোনো ব্যক্তির নাম লেখার অর্থ হলো ওই ব্যক্তি মারা গেছেন অথবা মুমূর্ষু অবস্থায় আছেন। অতএব লাল কালি দিয়ে কারও নাম লেখা কোরিয়ায় অশোভনীয় এবং রুঢ় আচরণ হিসাবে গণ্য করা হয়। ৪ সংখ্যাকে দক্ষিণ কোরিয়ায় অপয়া সংখ্যা ও মৃত্যু হিসাবে গণ্য করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার লোকেরা সারা রাত ফ্যানের নিচে থাকলে ফ্যান পড়ে মরে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করেন। এটাকে ফ্যান ডেথ কনসেপ্ট বলা হয়। এখানে নানা রঙের ট্যাক্সি ক্যাব পাওয়া যায়। ধূসর ও সাদা রঙের ট্যাক্সি অত আরামদায়ক নয় এবং চালকও তত দক্ষ নয়। তবে কালো ট্যাক্সি ক্যাবের ড্রাইভার দক্ষ এবং তা বিলাসবহুল বলে ধরে নিতে হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার হ্যাইজিংডাঙ (Haeshindang নামের একটি পার্ক আছে। এটাকে বলা হয় পেনিস ল্যান্ড (চবহরং খধহফ)। এ পার্ক পেনিস বা পুরুষ লিঙ্গের শত শত স্ট্যাচু নানা অঙ্গিভঙ্গীতে নানা কৌশলে স্থাপন করা হয়েছে।। নারী পুরুষেরা বিশালাকৃতির পেনিস স্টাচুতে ওঠে মনের আনন্দে নাচানাচি করে।
দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপির ২০% আসে স্যামসাঙ হতে। সারা বিশ্বে স্যামসাঙ এর সেলফোন, টিভির খ্যাতি আছে। এ ছাড়া এ কোম্পানিটি ভ্যাকুয়ামস, নির্মাণ সামগ্রী, চিকিৎসা সামগ্রী ইত্যাদিসহ আরও অনেক কিছু প্রস্তুত করে। ইংরেজি যারা জানেন তাদের অনেক দাম কোরিয়ায়। ইংরেজি শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ সুবিধা অত্যন্ত বেশি। কোরিয়ায় ইংরেজি শিক্ষকদের বেতন পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। এখানে প্লাস্টিক সার্জারি অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রতি ৭৭ জন কোরিয়ার ১ জন প্লাস্টিক সার্জারি করে।
এশিয়া : এশিয়া মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ
আফগানিস্তান (Afghanistan) : ইতিহাস ও নামকরণ
আযারবাইজান (Azerbaijan) : ইতিহাস ও নামকরণ
আর্মেনিয়া (Armenia) : ইতিহাস ও নামকরণ
বাহরাইন (Bahrain) : ইতিহাস ও নামকরণ
বাংলাদেশ (Bangladesh) : ইতিহাস ও নামকরণ
ভুটান (Bhutan) : ইতিহাস ও নামকরণ
ব্রুনাই (Brunei) : ইতিহাস ও নামকরণ
চায়না (China) : ইতিহাস ও নামকরণ
কাম্বোডিয়া (Cambodia) : ইতিহাস ও নামকরণ
সাইপ্রাস (Cyprus) : ইতিহাস ও নামকরণ
জজিয়া (Georgia) : ইতিহাস ও নামকরণ
ইন্ডিয়া / ভারত (India) : ইতিহাস ও নামকরণ
ইন্দোনেশিয়া (Indonesia): ইতিহাস ও নামকরণ
ইসরায়েল (Israel) : ইতিহাস ও নামকরণ
বার্মা (Burma) : ইতিহাস ও নামকরণ
কিরগিজিস্তান (Kyrgyzstan) : ইতিহাস ও নামকরণ
জাপান (Japan) : ইতিহাস ও নামকরণ
জাপান (Japan) : ইতিহাস ও নামকরণ
জর্ডান (Jordan) : ইতিহাস ও নামকরণ
কাজাখস্তান (Kazakhstan) : ইতিহাস ও নামকরণ
কুয়েত (Kuwait): ইতিহাস ও নামকরণ
লেবানন (Lebanon) : ইতিহাস ও নামকরণ
নেপাল (Nepal) : ইতিহাস ও নামকরণ
নর্থ কোরিয়া ( North Korea) : ইতিহাস ও নামকরণ
পাকিস্তান (Pakistan) : ইতিহাস ও নামকরণ
প্যালেস্টাইন (Palestine) : ইতিহাস ও নামকরণ
ফিলিপিনস (Philippines) : ইতিহাস ও নামকরণ
কাতার (Qatar) : ইতিহাস ও নামকরণ
রাশিয়া (Russia) : ইতিহাস ও নামকরণ
সৌদি আরব (Saudi Arabia) : ইতিহাস ও নামকরণ
সিঙ্গাপুর (Singapore) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।