ড. মোহাম্মদ আমীন
১. সর্বসাধারণকে জানানো যাচ্ছে যে —-।
২. সর্বসাধারণই একটি দেশের প্রকৃত শক্তি।
৩. সর্বসাধারণের কল্যাণের জন্য গৃহীত প্রকল্প।
নানা স্থানে নানা উপলক্ষ্যে উপর্যুক্ত-প্রকৃতির লেখা দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ‘সর্বসাধারণ’ শব্দটির ব্যবহার ব্যুৎপত্তি অনুযায়ী কতটুকু যৌক্তিক তা পর্যালোচনা করা যাক।
‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ অনুযায়ী বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘সাধারণ (স+ আধারণ)’ শব্দের একমাত্র অর্থ হলো সকল নরনারী। অন্যান্য অভিধানেও বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ‘সাধারণ’ শব্দটির অর্থ অনুরূপ নির্দেশ করে বলা হয়েছে — সকল শ্রেণির মানুষ, সকল নারী-পুরুষ, সকল মানুষ (নর-নারী)। অন্যদিকে, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘সর্ব(√সৃ+ব)’ শব্দের অর্থ সকল, সমুদয়, সমগ্র।
‘সর্ব’ ও ‘সাধারণ’ শব্দের অর্থ অনুযায়ী ‘সর্বসাধারণ’ শব্দের অর্থ হয়, ‘সকল সকল নরনারী’। সুতরাং ব্যুৎপত্তি বিচারে ‘সর্বসাধারণ’ শব্দটির ‘সর্ব’ শব্দাংশ বাহুল্য এবং নিষ্প্রয়োজন। এ বিবেচনায় বলা যায়, ‘সর্বসাধারণ’ সংগত শব্দ নয়। যদিও বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান ‘সর্বসাধারণ’ শব্দটিকে বিশেষ্যে ‘নারী-পুরুষ জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল লোক’ অর্থে বিশেষ মর্যাদায় স্থান দিয়েছে।
এমন করা হলো কেন?
সাধারণের বহুল ব্যবহার এবং ব্যাপক প্রচলন ও জনপ্রিয়তার কারণে অসংগত হওয়া সত্ত্বেও ‘সর্বসাধারণ’ শব্দটি বাংলা একাডেমির অভিধানে নতুন ভুক্তি হিসেবে ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। আসলে, সাধারণ জনগণ এক হলে কী না হয়? কী না পারে তারা! যদিও বাংলা একাডেমি এরূপ অনেক জনপ্রিয় শব্দকে সংস্কৃতের প্রতি দুর্বলতা এবং ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি’র প্রভাবের কারণে ‘বাংলা একাডেমি’র অভিধানে স্থান দেয়নি। তেমন শব্দসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে, ‘নিচে’।