কীভাবে হলো দেশের নাম (ইউরোপ)
ড. মোহাম্মদ আমীন
সান ম্যারিনো (San Marino)
সান ম্যারিনো চারিদিকে ইটালির ভূভাগ দ্বারা বেষ্ঠিত একটি ছিটমহল। ইতালিয়ান নাগরিক সেন্ট ম্যারিনাস (Saint Marinus) এর নাম থেকে স্যান ম্যারিনো নামের উৎপত্তি। তিনি ছিলেন পাথর কেটে ভবন তৈরিতে অত্যন্ত দক্ষ একজন কারিগর। তৎকালীন

আর্বি (Arbe), বর্তমান ক্রোয়েশিয়ায় তিনি বসবাস করতেন। রোমান সম্রাট তাকে মৃতদণ্ডে দণ্ডিত করলে ম্যারিনাস জীবন রক্ষার জন্য ৩০১ খ্রিষ্টাব্দে মাউন্ট টিটানোতে আত্মগোপন করেন। সে এলাকায় তখন জনবসতি ছিল না। কঠোর পরিশ্রম করে তিনি গোপনে গোপনে এলাকাটিকে বাসযোগ্য ও সমৃদ্ধ করে তোলেন। ওখানে পাথর কেটে তিনি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছিলেন, যা ছিল সত্যি মুগ্ধকর। এজন্য লোকজন এলাকাটির নাম দেন সান ম্যারিনো।
সান ম্যারিনোর মোট আয়তন ৬১.২ বর্গকিলোমিটার বা ২৪ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ শূণ্য। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, সান ম্যারিনোর জনসংখ্যা ৩২,৫৭৬ জন এবং প্রতি বর্গকিলোমিটালে লোকসংখ্যা ৫২০ জন। আয়তন বিবেচনায় সার ম্যারিনো পৃথিবীর ২২২-তম বৃহত্তম দেশ। অর্থাৎ পৃথিবীর ২২১টি দেশ সান ম্যারিনোর চেয়ে আয়তনে বড়। ৩০১ খ্রিষ্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর দেশটি রোমান সাম্রাজ্য হতে স্বাধীনতা লাভ করে। এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্র।
২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, সান ম্যারিনোর জিডিপি (পিপিপি) ১.১৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৩৫,৯২৮ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ১.৪৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৩৫,৯২৮ ইউরো। মুদ্রার নাম ইউরো। রাজধানী সিটি অব সান ম্যারিনো। সরকারিভাবে সান ম্যারিনোর অধিবাসীদের স্যামারিনস বলা হয়। ৩০১ খ্রিষ্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর রোমান সাম্রাজ্য হতে স্বাধীনতা লাভ করে। সরকারি ভাষা ইটালিয়ান। অধিবাসীদের ৯৭% রোমান ক্যাথলিক।
৩০১ খ্রিষ্টাব্দ হতে স্বাধীন সান ম্যারিনো, ছোট একটি জনপদ। এত দীর্ঘদিন স্বাধীন থাকার সৌভাগ্য পৃথিবীর খুব কম দেশেরই হয়েছে। এটি সামারিনিজদের একটি গর্ব। ছোট দেশ হলেও সান ম্যারিনোতে শত শত স্যুভেনির বিক্রির দোকান রয়েছে। সান

ম্যারিনোর ওয়েম্বলি স্ট্যাডিয়ামে আসনসংখ্যা ৫৬,৩১৮, তবে সত্য কথা হচ্ছে তা সবসময় শূণ্য পড়ে থাকে। এ স্ট্যাডিয়ামের আসন সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। সান ম্যারিনো, নাউরু, টুভালু ও পালাউ জাতিসংঘের কম জনসংখ্যাবিশিষ্ট সদস্যরাষ্ট্র। ডোগানা হচ্ছে এ দেশের বৃহত্তম শহর।
সান ম্যারিনো পৃথবীর পঞ্চম এবং ভ্যাটিক্যান সিটি ও মোনাকোর পর ইউরোপের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র। পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান সান ম্যারিনোর। ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ অক্টোবর সান ম্যারিনোর বর্তমান সংবিধান গৃহীত হয়। এত বছর পরও সংবিধানকে পরিবর্তন করতে হয়নি। এর চেয়ে উত্তম সংবিধান পৃথিবীতে আর নেই। ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল সান ম্যারিনোর পতাকা প্রথম গৃহীত হয়।
১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্র সান ম্যারিনোর সঙ্গে কুটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনকে,

সান ম্যারিনো সরকার সম্মানজনক নাগরিকত্ব প্রদান করে। যখন ওয়াশিংটন ডিসিতে সান ম্যারিনোর দুতাবাস ছিল, তখন কিন্তু সান ম্যারিনোতে ওয়াশিংটনের দুতাবাস ছিল না, ইটালিতে ছিল। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সদস্য না হলেও, সান ম্যারিনো ইউরো ব্যবহার করে।
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম সামারিক ফোর্স সান ম্যারিনোর। জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব ইটালীয় সেনাবাহিনীর ওপর ন্যস্ত। আসলে যত ছোট, তার নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা তত কম। যে যত বড় সে তত বিপজ্জনক অবস্থায় থাকে। এ জন্য পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দেশের মধ্যে পঞ্চম হওয়া সত্ত্বেও তার কোনো সামরিক বাহিনি লাগে না।
এটি পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে মানুষের চেয়ে গাড়ির সংখ্যা বেশি। ইউরোপীয় কাউন্সিলের দেশসমূহের মধ্যে সান ম্যারিনোর জনসংখ্যা সবচেয়ে কম। এটি আট টি মাইনর মিউনিসিপালিটি নিয়ে গঠিত। সান ম্যারিনোর জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ২.২%। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে মোট ২ মিলিয়ন পর্যটক সান ম্যারিনো ভ্রমণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সান ম্যারিরোন নিরপেক্ষ ছিল। যদিও ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল যে, সান ম্যারিনো যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তবে সান ম্যারিনো জানায় যে, সে যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি এবং পত্রিকার প্রতিবেদন ঠিক নয়। সড়কপথের দৈর্ঘ্য ২২০ কিলোমিটার। দুটি নদী দেশটির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও কোনো বন্দর নেই।
পোলান্ড (Poland) : ইতিহাস ও নামকরণ
পর্তুগাল (Portugal) : ইতিহাস ও নামকরণ
রোমানিয়া (Romania) : ইতিহাস ও নামকরণ
রাশিয়া (Russia) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক