Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
সারমেয়: কুকুরকে সারমেয় বলা হয় কেন – Dr. Mohammed Amin

সারমেয়: কুকুরকে সারমেয় বলা হয় কেন

ড. মোহাম্মদ আমীন 

সারমেয়: কুকুরকে সারমেয় বলা হয় কেন

কুকুর কেন সারমেয় তা জানার আগে সারমেয় শব্দের অর্থটা জেনে নেওয়া যাক। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সংস্কৃত সারমেয় (সরমা+এয়) অর্থ (বিশেষ্যে) অপরাধী শনাক্তকরণ, মাদকদ্রব্য উদ্ধার, অকুস্থল বা রোগ নির্ণয় প্রভৃতি বিশেষায়িত কাজের জন্য প্রশিক্ষিত করা যায় এমন প্রখর ঘ্রাণশক্তিসম্পন্ন চতুষ্পদ মাংসাশী স্তন্যপায়ী মেরুদণ্ডী প্রাণী, কুকুর, কুক্কুরী। অর্থাৎ সারমেয় মানে গোয়েন্দা কাজে লাগানো যায়— এমন কুকুর বা কুকুরী।
কিন্তু নামটা কেন সারমেয়?
এর উত্তর পাওয়া যায় ঋগ্‌বেদে।ঋগ্‌বেদ-এর দশম মণ্ডলের ১০৮ সূক্তে বর্ণিত আছে—পণি নামে পরিচিত একদল বিদেশি ডাকাত বা বেনে, একবার গোপনে এসে দেবতৃবৃন্দের কিছু গোরু ও অন্যান্য সম্পদ চুরি করে পালিয়ে যায়। দেবতৃবৃন্দ সম্পদের জন্য তেমন চিন্তাতুর ছিলেন না। তবে পোষা গোরু চুরি হয়ে যাওয়ায় তারা মর্মবেদনা অনুভব করছিলেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও হৃত গোরুর হদিস পাওয়া গেল না। অতঃপর হারানো গোরু খুঁজে বের করার জন্য এক কুক্কুরীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ওই কুক্কুরীর নাম ছিল সরমা।
এই সরমা থেকে সারমেয় নামের উদ্ভব। সারমেয় শব্দের ব্যুৎপত্তিতেও তা লক্ষণীয়।সরমা অল্প সময়ের মধ্যে হারানো গোরুর সন্ধান পেয়ে যায়। সরমার সংবাদের ভিত্তিতে দেবতৃগণ হৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। সে হতে সরমার উত্তর পুরুষরা গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত।কথিত হয়, বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন সরকারি বাহিনী যে কুকুর-কুকুরী গোয়েন্দা বা নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করে থোকে তা ঋগ্‌বেদে বর্ণিত সরমজির উত্তর পুরুষ।
এখনো মানুষ গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে যে কাজ পারে না তা কুকুর-কুকুরী করে দেয়।

ঋগ্‌বেদের এই বর্ণনা গোয়েন্দা  কাজে কুকুর নিয়োগের সর্বপ্রথম ঘটনা।  মহাভারতেও গোরু চুরির কথা আছে। তবে ওখানে গোয়েন্দা হিসেবে কুকুর ব্যবহারের কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। মহাভারতে বর্ণিত আছে, পাণ্ডবগণ মহানন্দে ইন্দ্রপ্রস্থে অবস্থান করছিলেন। এসময় এক বৃদ্ধ ব্রাক্ষ্মণ অর্জুনের কাছে এসে অভিযোগ করেন যে, দস্যুরা তার গরু চুরি করে পালিয়েছে। প্রসঙ্গত, তখন পৃথিবীতে সম্পদবিষয়ক একমাত্র অপরাধ ছিল চুরি। সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান ছিল গোরু তাই চোরদেরও লক্ষ্য থাকত গোরুতে।

সিঁধেল চোর: সিঁধকাঠি দিয়ে সিঁধকেটে যারা চুরি করে তাদের বলা হয় সিঁধেল চোর।  সিঁধ কেটে চুরি করা সবচেয়ে কঠিন ও মারাত্মক সাহসের একটি কাজ। এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হলে দীর্ঘদিন একাগ্র সাধনা ও প্রচুর পরিশ্রমের প্রয়োজন। সিঁধেল চুরি বিদ্যায় অভিজ্ঞ হতে হলে প্রশিক্ষণার্থীকে একাগ্রমনে পরম ভক্তি সহকারে গুরুর কাছে এ ‘বিদ্যা’ অর্জন করতে হয়। সিঁধকাঠি শাবল বা খুন্তির মতো দণ্ডবিশেষ। সিঁধেল চোরগণ সিঁধকাঠি দিয়ে মাটির কাঁচাবাড়ির দেওয়ালে গর্ত বা সুরঙ্গ করে, গোপনে ঘরে অনুপ্রবেশ করে চুরি করে। অভিধানমতে, সংস্কৃত সুরঙ্গ থেকে  উদ্ভূত সুড়ঙ্গ অর্থ পাহাড়, নদী প্রভৃতির তলদেশে ছিদ্র করে তৈরি পথ। তবে বাংলায় সুড়ঙ্গ  শব্দ দিয়ে দেওয়ালে বা মাটির নিচে খোঁড়া গর্তও বোঝায়। চোরগণ সিঁধ কাটি দিয়ে যে গর্ত করে গৃহে প্রবেশ করে তাও সুড়ঙ্গ নামে পরিচিত। অন্তত চোরগণ তাই বলে।

চুরি পৃথিবীতে সম্পদবিষয়ক প্রথম অপরাধ। জাতক-মালা এবং অন্যান্য সংস্কৃত সাহিত্যেও  চৌর্যবৃত্তির উল্লেখ রয়েছে। জৈন ও বৌদ্ধ গ্রন্থসমূহেও চৌর্যবৃত্তির কথা পাওয়া যায়। বৈদিক শব্দ ‘তায়ু’ অর্থ চোর এবং সংশ্লিষ্ট তিনটি শব্দ স্তেন, স্তেয় এবং অস্তেয় অর্থ যথাক্রমে চোর, চুরি; চুরি করা এবং চুরি না করা।  তায়ু শব্দটি ইরানীয় জেন্দ-আবেস্তা গ্রন্থেও পাওয়া যায়। অনেকের মতে, তায়ু হতে ইংরেজি thief শব্দটির উদ্ভব।  সেসময় প্রধান অপরাধ ছিল চুরি এবং প্রধান সম্পত্তি ছিল গোরু।ঋগ্‌বেদ ও বাইবেল প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থেও চুরির কথা আছে। চর্যাপদেও চোরের কথা আছে। তবে এই চোর খুবই মারাত্মক:

জো সো বুধী সৌ নিবুধী।

জো যো চৌর সৌ দুষাধী।।

ব্যাচ্যার্থ:যা সেই বুদ্ধি, তাই নিকৃষ্ট বুদ্ধি। যে সে চোর, সে-ই কোটাল। 

শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com
তিনে দুয়ে দশ: শেষ পর্ব ও সমগ্র শুবাচ লিংক