সার্বিয়া (Serbia) : ইতিহাস ও নামকরণ

কীভাবে হলো দেশের নাম (ইউরোপ)

ড. মোহাম্মদ আমীন

সার্বিয়া (Serbia)

সার্বিয়া, বা সার্বীয় প্রজাতন্ত্র মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। এটি পানোনীয় সমভূমির দক্ষিণাংশে এবং বলকান উপদ্বীপের মধ্যভাগে অবস্থিত। দেশটির উত্তরে হাঙ্গেরি, পূর্বে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া, দক্ষিণে আলবেনিয়া ও

প্রকাশক: পুথিনিলয়।

ম্যাসিডোনিয়া, এবং পশ্চিমে মন্টিনেগ্রো, ক্রোয়েশিয়া এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা। দেশটির রাজধানী বেলগ্রেড। বেলগ্রেড ছিল প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়ার রাজধানী। সার্বিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় পরিচালিত। প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়া ভেঙে যে ছয়টি  রাষ্ট্র হয়েছে তন্মধ্যে সার্বিয়া অন্যতম। অন্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে : বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ক্রোয়েশিয়া, মেসেডোনিয়া, মন্টেনেগ্রো, স্লোভেনিয়া এবং সার্বিয়া রাষ্ট্র গঠন করা হয়।

এবার দেখা যাক, যুগোশ্লাভিয়া নামের ব্যুৎপত্তি। যুগোশ্লাভিযা (Jugoslavija) শব্দ হতে যুগোশ্লাভিয়া (Yugoslavia) শব্দের উৎপত্তি। যুগোশ্লাভিয়া যুগ (jug) ও শ্লাভিযা (slavija) শব্দ সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌগিক শব্দ। মেসিডোনিয়ান (Macedonian), সার্বো-ক্রোয়েশিয়ান (Serbo-Croatia) ও শ্লোভেন (Slovene) ভাষায় জুগ শব্দের অর্থ দক্ষিণ এবং শ্লাভিয়া (slavija,উচ্চারণ শ্লাভিয়া) শব্দের অর্থ শ্লাভদের দেশ। সুতরাং যুগোশ্লাভিযা শব্দের অর্থ দক্ষিণ শ্লাভিয়া বা দক্ষিণ শ্লাভদের দেশ। এ নামকরণের মাধ্যমে ছয়টি দক্ষিণ শ্লাভিক জাতি, যথা- ক্রোয়েটস, মেসিডোনিয়ানস, মন্টেনগ্রিনস, মুসলিমস, সার্বস ও শ্লোভেনসকে (Croats, Macedonians, Montenegrins, Muslims, Serbs and Slovenes) একত্রিত করা হয়।

১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে  কিংডম অব সার্বস, ক্রোয়েটস এবং শ্লোভেনস Kingdom of Serbs, Croats and Slovenes) এর অধিনে যুগোশ্লাভিয়া গঠিত হয়। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে প্রথম আলেজান্ডার একনায়ক হিসেবে দেশটির সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণ করে নাম রাখেন কিংডম অভ য়ুগোশ্লাভিয়া (Kingdom of Yugoslavia)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সময় ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে  দেশটির নাম

প্রকাশক: পুথিনিলয়।

পরিবর্তন করে ডেমোক্র্যাটিক ফেডরেল য়ুগোশ্লাভিয়া (Democratic Federal Yugoslavia) রাখা হয়। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে  এর নাম রাখা হয় ফেডারেল পিপলস রিপাবলিক অব য়ুগোশ্লাভিয়া। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে  রাখা হয় সোসায়লিস্ট ফেডারেল অব য়ুগোশ্লাভিয়া।

সার্বিয়া নামের প্রকৃত উৎপত্তি কোত্থেকে সেটি এখনও অনিশ্চিত। সার্বিয়া নামের উৎপত্তি সম্পর্কে নানা মত রয়েছে। তবে এর মূল স্ল্যাভিক ভাষার বিভিন্ন শাখা, যেমন : শ্লোবোডান, মিরোশ্ল্যাভ, ভøাদিমির, ভুকাসিন, জোরান, জুবোমির (), ভেস্না প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত। সার্বিয়ার প্রথম রাজ্য রাস্কা নামে পরিচিত ছিল। যা ৯ম শতকে ভাস্তিমিরভিচ রাজবংশ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে এটি নিমানজিচ রাজবংশের অধীনে সার্বীয় রাজতন্ত্র ও সাম্রাজ্যে প্রসারিত হয়। আধুনিক যুগে বিভিন্ন সময়ে সার্বিয়া বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। যেমন : স্বায়ত্বশাসিত রাজ্য (১৮১৭-১৮৭৮),  স্বাধীন রাজ্য (১৮৭৮-১৯১৮), সার্ব, ক্রোট, ও  স্লোভেন দের রাজ্যের অংশ (১৯১৮-১৯৪১) (১৯২৯ হতে ইযুগোস্লাভ রাজ্য নামে পরিচিত), নাৎসি অধিকৃত রাষ্ট্র (১৯৪১-১৯৪৪), ইযুগোস্লাভ যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্ত সমাজবাদী প্রজাতন্ত্র (১৯৪৫-১৯৯২), গণতন্ত্রী ইযুগোস্লাভ যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্ত একটি প্রজাতন্ত্র, (১৯৯২-২০০৩), সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর অংশ (২০০৩-২০০৬) এবং সবশেষে সার্বিয়া প্রজাতন্ত্র (২০০৬ এর জুন ৫ এ ঘোষিত)। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে  সার্বিয়ার পতাকা প্রথম গ্রহণ করা হয়। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে  এটি পুনরায় গ্রহণ করা হয়।

সার্বিয়ার মোট আয়তন ৮৮,৩৬১ বর্গকিলোমিটার বা ৩৪,১১৬ বর্গমাইল। কসোভোসহ আয়তন ৭৭,৪৭৪ বর্গকিলোমিটার বা ২৯,৯১৩ বর্গমাইল। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে,সার্বিয়ার জনসংখ্যা ৭২,০৯,৭৬৪ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা ৯২.৮।

প্রকাশক: পুথিনিলয়।

আয়তন বিবেচনায় সার্বিয়া পৃথিবীর ১১৩-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় ১১২-তম জনবহুল দেশ। বেলগ্রেড সার্বিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এটি ইউরোপের প্রাচীনতম শহরের একটি। ৭০০০ বছর হতে এটি শহর। দাপ্তরিক ভাষা সার্বিয়ান। জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৮৩% সার্বিয়ান, ৩.৫% হাঙ্গেরিয়ান, ২% রোমা, ২% বসনিয়াক এবং ৯% অন্যান্য। সরকারিভাবে সার্বিয়ার অধিবাসীরা সার্বিয়ান নামে পরিচিত।

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, সার্বিয়ার জিডিপি (পিপিপি)৯৭.২৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ১৩,৫৭৭ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ৩৬.৫৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৫,০১২ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম সার্বিডান দিনার।

আন্তর্জাতিক একটি জরিপমতে, সার্বিয়ানরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অতিথিপরায়ণ জাতি। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, যে ব্যক্তি অতিথির প্রতি অকৃত্রিম আনুকূল্য ও দয়া প্রদর্শন করে না, ঈশ্বরও তাকে দয়া প্রদর্শন করে না। বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত ও প্রচারিত একমাত্র সার্বিয়ান শব্দ ভাম্পায়ার (vampire)। ঘড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে সার্বিয়ানরা সুইসদের চেয়ে প্রাচীন। ৬০০ বছর পূর্ব হতে

প্রকাশক: পুথিনিলয়।

সার্বিয়ানরা ঘড়ি প্রস্তুত করে আসছে। সুইসরা শুরু করে ৩০০ বছর পূর্ব হতে। অধিকাংশ সার্বিয়ানদের নামের শেষে (“রপ”) আছে। রোমান সাম্রাঝ্যের সম্রাট কন্সটন্টিন (Constantine) দ্যা গ্রেট ২৭৪ খ্রিষ্টাব্দে  সার্বিয়ার নিস (Nis) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। সার্বিয়ানরা খুব কপি খায় এবং সবখানে কপি পাওয়া যায়।

লাল রঙের দেখতে খুব সুন্দর রাজ্বরি বা রাস্পবেরি (raspberries) একটি সুস্বাদু ছোট ফল। এটি উৎপাদনে সার্বিয়া বিশ্বে প্রথম। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, পৃথিবীর ৯৫% রাস্পবেরি সার্বিয়ায় উৎপাদিত হয়। ইউরোপের সবচেয়ে বড় ঘাট ছিল সার্বিয়ার জের্ডা ঘাট (Djerdap Gorge)। এটি দানিয়ুব নদী ভেঙে ফেলেছে। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ নভেম্বর সার্বিয়া প্রথম স্বাধীনতা লাভ করে। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জুন রিপাবলিক অব সার্বিয়া গঠিত হয়।

সার্বিয়ার প্রধান ধর্ম খ্রিস্টান অর্থডোক্স। তবে এখানে ইসলাম, রোমান ক্যাথলিক, প্রটেস্ট্যান্ট ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও রয়েছে। ক্যাকাক অঞ্চলের  শহরতলিতে বর্তমানে অবস্থিত প্রাচীন ডাউনটাউন চার্চকে ১০ বার মসজিদে পরিণত করা হয়েছিল। কোনোর ধর্মপ্রতিষ্ঠানের এতবার ধর্মপরিবর্তনের সংখ্যা এটাই বিশ্বে সর্বাধিক। ইউএনএইচসিআর-এর হিসাবমতে  ইউরোপ মহাদেশে সার্বিয়াতে শরণার্থীর সংখ্যা সর্বাধিক। এ সংখ্যা ৩,১৪,০০০।

সার্বিয়া একটি দেশ হলেও পতাকা দুটি। একটি অফিসিয়াল বা দাপ্তরিক পতাকা এবং আর একটি জাতীয় পতাকা। দাপ্তরিক পতাকায় জাতীয় প্রতীক রয়েছে কিন্তু জাতীয় পতাকায় নেই। বেলগ্রেডে অবস্থিত সাবা গির্জা পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থডোক্স গির্জাসমূহের অন্যতম।


মন্টিনেগ্রো (Montenegro) : ইতিহাস ও নামকরণ

নেদারল্যান্ডস (Netherlands) : ইতিহাস ও নামকরণ

নরওয়ে (Norway) : ইতিহাস ও নামকরণ

পোলান্ড (Poland) : ইতিহাস ও নামকরণ

পর্তুগাল (Portugal) : ইতিহাস ও নামকরণ

রোমানিয়া (Romania) : ইতিহাস ও নামকরণ

রাশিয়া (Russia) : ইতিহাস ও নামকরণ

সান ম্যারিনো (San Marino) : ইতিহাস ও নামকরণ

সূত্র:  কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।

All Link

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

Knowledge Link

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

Language
error: Content is protected !!