সুহ্ম প্রাচীন বাংলার একটি জনপদ। এর অবস্থান দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলায় ধরা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের পতঞ্জলির বর্ণনায় সর্বপ্রথম বঙ্গ ও পুন্ড্র জনপদের সঙ্গে সূহ্মের উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারতে কর্ণ ও ভীমের বিজয়ের বর্ণনাকালে ‘তাম্রলিপ্ত/দামলিপ্ত’ জনপদের (বর্তমানের তমলুক) অধিবাসীদের সুহ্ম জনপদের অধিবাসী হতে স্বতন্ত্র উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে দশকুমারচরিত ‘সুহ্ম’ ও ‘তাম্রলিপ্ত’কে অভিন্ন সম্প্রদায় উল্লেখকরে তাম্রলিপ্তকে সুহ্মর অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কালিদাসের রঘুবংশে, দক্ষিণে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত ভাগীরথী ও কাঁসাই অঞ্চলের মধ্যবর্তী এলকাকে সুহ্মদের আবাসভূমি দেখান হয়েছে। আচারঙসূত্র নামক জৈন গ্রন্থে বর্ণিত কিংবদন্তি অনুযায়ী বজ্যভূমি ও শুভ্যভূমি নিয়ে রাঢ় গঠিত ছিল। শুভ্যভূমিকে সাধারণত সুহ্ম বা সূহ্মভূমির অপভ্রংশ হিসেবে ধরা হয়। ধোয়ী-র পবন দূত-এ সুহ্ম-র অবস্থান ভাগীরথী অববাহিকায় দেখান হয়েছে। নীহাররঞ্জন রায় অনুমান করেন যে, সুহ্ম অঞ্চলের পাশাপাশি ব্রহ্ম বা ব্রহ্মোত্তর নামক আর একটি বসতি ছিল।
অতএব, সূহ্ম-ব্রহ্মোত্তর উক্তিটি সম্ভবত সুহ্মকে নির্দেশ করে, যার উত্তরে ব্রহ্ম সংলগ্ন। এটি সাধারণভাবে স্বীকৃত যে, ‘সুহ্ম’ বাংলার পুরো পশ্চিমাঞ্চলকেই বোঝায়, খুব সম্ভব তার দক্ষিণ অংশকেও। পশ্চিম বাংলার মেদিনীপুর জেলার বর্তমান তমলুক এর আশেপাশে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নির্দেশ করে যে, দামলিপ্তই সম্ভবত উপকূলবর্তীয় সুহ্ম অঞ্চল ছিল। সুতরাং বলা যায়, গঙ্গা-ভাগীরথীর পশ্চিম তীরের দক্ষিণ ভূভাগ, বর্ধমানের দক্ষিণাংশ, হুগলির বৃহদাংশ, হাওড়া এবং বীরভূম জেলা নিয়ে সূহ্ম দেশের অবস্থান ছিল।
বাংলার প্রাচীন বাংলা কয়েটি জনপদে বিভক্ত ছিল। জনপদগুলোর নাম ও বর্ণনা নিচে দেওয়া হল। ক্লিক করে জনপদগুলোর সংক্ষিপ্ত, কিন্তু তথ্যবহুল বিবরণ জেনে নিতে পারেন।