এবি ছিদ্দিক
খোকন স্যার ব্ল্যাকবোর্ডে সাদা চক দিয়ে বড়ো বড়ো করে লিখলেন— টম ‘সাম্যবাদী’-র পাঠ খুবই উপভোগ করেছে।
স্যার বাক্যটি লেখা সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বললেন, “বাক্যটিতে টম কেবল সাম্যবাদী কবিতাটি পড়েছে, না কি সাম্যবাদী কাব্যটি (কাব্যগ্রন্থটি)?” উত্তর দেওয়ার জন্যে ক্লাসের মেধাবিনী ছাত্রী সানা দাঁড়িয়ে যেতে বিলম্ব করল না। সে উত্তর

দিল, “টম কেবল সাম্যবাদী কবিতাটি পড়েছে।”
শ্রেণিকক্ষের একদম বাম পাশের কলামের দ্বিতীয় বেঞ্চটিকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা ছাফিয়া সেদিনও একই জায়গাতেই বসেছিল। সানার উত্তর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই ছাফিয়া দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল, “ না না, স্যার! টম কেবল সাম্যবাদী কবিতাটি পড়েনি, সম্পূর্ণ কাব্যটিই পড়েছে। গত সপ্তাহে আমার সামনেই তো পড়ল!” ছাফিয়ার জবাব শুনে গোটা ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গেল৷ পেছন থেকে সাফা ফিসফিস করে বলে দিল, “খোকন স্যার তোর টম স্যারের কথা থোড়াই বলেছেন।” একটু পরেই খোকন স্যারের ধমকে শ্রেণিকক্ষের সকলেই চুপচাপ হয়ে গেল। এবার স্যার, ছাফিয়াকে বললেন, “তোমার উত্তর যথার্থ হয়েছে। কিন্তু বোর্ডে লেখা বাক্যটিতে সাম্যবাদী কেবল কবিতার নাম না-হয়ে কেন গ্রন্থের নাম হলো, তা কি তুমি আমাদের বুঝিয়ে দিতে পারবে?” ছাফিয়া এই সুযোগটির জন্যেই অধীর-উদ্গ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছিল। কেননা, সে গত সপ্তাহেই টমের কাছ থেকে বিরামচিহ্নের ব্যবহার শিখে নিয়েছে। অবশেষে কামাল দেখিয়ে দেওয়ার কাঙ্ক্ষিত সুযোগ পেয়ে গিয়ে মনে মনে বলল, “এতক্ষণে-না মোদ্দায় কথায় এলেন!” এবার ছাফিয়া বলতে শুরু করল—
“স্যার, সাম্যবাদী শব্দটিতে ব্যবহার করা আপনার উদ্ধৃতিচিহ্নই বলে দিচ্ছে যে, বাক্যটিতে সাম্যবাদী একটি গ্রন্থের নাম। বাংলা ভাষায় উদ্ধৃতিচিহ্ন দুই ধরনের হতে পারে। একটি হচ্ছে একক উদ্ধৃতিচিহ্ন, এবং অন্যটি হচ্ছে দ্বৈত উদ্ধৃতিচিহ্ন। এদের ব্যবহার একেবারেই সহজ। কেননা, বাক্যের মধ্যে কেবল প্রত্যক্ষ উক্তি নির্দেশ করতে এবং কোনো গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা প্রভৃতির নামে গুরুত্ব আরোপ করতে দ্বৈত উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। এই দুটি ক্ষেত্র ব্যতীত বাকি সকল ক্ষেত্রে— বই, শিল্পকর্ম, পত্রিকা, চলচ্চিত্র প্রভৃতির নাম; তত্ত্ব, ধারণা, মতবাদ, সূত্র প্রভৃতির নাম; উদ্ধৃতির ভেতরে উদ্ধৃতি; বাক্যের অন্তর্গত কোনো শব্দ বা বাক্যাংশকে গুরুত্ব দেওয়া— একক উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেহেতু আপনার লেখা বাক্যটিতে সাম্যবাদী শব্দটি কেবল একটি উদ্ধৃতিচিহ্ন দিয়ে লেখা হয়েছে, সেহেতু এখানে সাম্যবাদী একটি বইয়ের নাম। অর্থাৎ, টম কেবল সাম্যবাদী কবিতা নয়; বরং সাম্যবাদী কাব্যটিই (কাব্যগ্রন্থটিই) পড়েছে। স্যার!”
ছাফিয়ার বলা শেষ হতেই শ্রেণিকক্ষে সুনসান-নীরবতা নেমে এল। সে নীরবতার ক্ষান্তি দিয়ে এবার খোকন স্যারের মুখ দিয়ে শব্দ বের হলো: “তোমার সহপাঠীদের অভিভূত-নিশ্চুপ অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছে তোমার বিশ্লেষণ কতটা নিখুঁত!”
প্রয়োগ:
১. ছাফিয়া বলল, “আমি আপুনিকে একদম ভয় পাই না।”
২. ইশমাম বলল, “গতকাল তানিয়া ম্যাম এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার ছিদ্দিক ভাইকে কেবল গণিতটা ক্লিয়ার করে দিতে বোলো।’ “
৩. ‘প্রথম আলো’ বাংলাদেশের সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা।
৪. ‘স্যমন্তক’ বাস্তব কাহিনির পুঁজিতে রচিত এক অনবদ্য উপন্যাস।
৫. নিউটনের ‘মহাকর্ষ সূত্র’ আমার কাছে মোটেও জটিল মনে হয় না।
৬. দাদিকে বঙ্কিমের “বিড়াল” (প্রবন্ধ) পড়িয়ে শোনানোর পর তাঁর হাসি থামছেই না।
৭. ‘মোনালিসা’ একটি বিশ্ববিখ্যাত চিত্রকর্ম।
৮. ‘The Shawshank Redemption’ সিনেমাটির কোনো তুলনা হয় না।
৯. আজ আমি ‘উদ্ধৃতিচিহ্ন’-এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করব।
১০. “বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” পাঠ করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থীকেই ‘হিম’ আর ‘শিম’ মিশিয়ে খেতে হয়!
[ জ্ঞাতব্য: প্রত্যক্ষ উক্তির ক্ষেত্রে দ্বৈত উদ্ধৃতিচিহ্নের পরিবর্তে একক উদ্ধৃতিচিহ্নও ব্যবহার করা যায়। ]
সূত্র: সূক্ষ্ম পার্থক্য: উদ্ধৃতিচিহ্নের প্রয়োগ, এবি ছিদ্দিক, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/২
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন /৩
ইউরোপ মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক
কি না বনাম কিনা এবং না কি বনাম নাকি
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
ভূ ভূমি ভূগোল ভূতল ভূলোক কিন্তু ত্রিভুবন : ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
প্রশাসনিক প্রাশাসনিক ও সমসাময়িক ও সামসময়িক
লক্ষ বনাম লক্ষ্য : বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন
ব্যাঘ্র শব্দের অর্থ এবং পাণিনির মৃত্যু
যুক্তবর্ণ সরলীকরণ আন্দোলন : হাস্যকর অবতারণা
প্রায়শ ভুল হয় এমন কিছু শব্দের বানান/২