কীভাবে হলো দেশের নাম ( উত্তর আমেরিকা)
ড. মোহাম্মদ আমীন
সেন্ট কিটস এন্ড নেভিস (Saint Kitts and Nevis)
সেন্ট কিটস এন্ড নেভিস এর সরকারি নাম ফেডারেশন অব সেন্ট কিটস এন্ড নেভিস। এটি সেন্ট কিটস ও নেভিস নামের দুটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি দেশ। জনসংখ্যা ও আয়তন উভয় বিবেচনায় এটি দুই আমেরিকা মহাদেশের ক্ষুদ্রতম দেশ। ব্রিটিশের রানী দেশটির নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রধান। বৃহত্তম

দ্বীপ সেন্ট কিটসে অবস্থিত বাস্ত্রে (Basseterre) দেশটির রাজধানী। দেশটির ক্ষুদ্র দ্বীপ নেভিস কিটস এর ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। ইউরোপীয়ান অভিবাসীরা যে সব দ্বীপে প্রথম আগমন করেছিলেন সেন্ট কিটস তাদের অন্যতম। ক্যারিবিয়ান দ্বীপে সেন্ট কিটস হচ্ছে প্রথম ব্রিটিশ ও ফ্রান্স উপনিবেশ। এ জন্য এটাকে এখনও The Mother Colony of the West Indies বলা হয়।
সেইন্ট কিটস ও নেভিস নাম দুটোর মিলনে সেন্ট কিটস ও নেভিস নামের উদ্ভব। এখন কথাগুলোর অর্থ কী এবং কীভাবে কোথা হতে এল তা বিশ্লেষণ করা যায়। ক্যারিবস দীপপুঞ্জ (Island Caribs)অনেকের কাছে ক্যালিনাগো (Kalinago) বা সংক্ষেপে ক্যারিবস (Caribs) নামে পরিচিত। এরা ছিলেন ক্যারিবিয়ান লেসার এন্টিলসের আদিবাসী। দক্ষিণ আমেরিকার ক্যরিবস এর মূলভূমি বা ক্যালিনা হতে তাদের উদ্ভব। তারা যে ভাষায় কথা বলতেন সেটি আইল্যান্ড ক্যারিব নামে পরিচিত। এ উপজাতীয়দের ভাষার একটি শব্দ লিয়ামুইগা (Liamuiga) হতে সেন্ট কিটস নামের উদ্ভব। ক্যারিব ভাষার এ কথাটির বাংলা অর্থ উর্বর ভূমি। প্রাক-কলাম্বিয়ান নেভিসদের (Nevis’s) কাছে আরে নাম ছিল ওয়ালি (Oualie)। এর অর্থ সুন্দর জলের দেশ বা সুন্দর জলের ভূমি।
১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে ক্রিস্টোফার কলম্বাস বর্তমানে নেভিস নামে পরিচিত ভূখণ্ডটির নাম দিয়েছিলেন স্যান মার্টিন। বর্তমান নাম নেভিস স্পেনিশ নাম নুয়েস্ট্রা সেনোরা ডি লাস নেভিস (Nuestra Señora de las Nieves) হতে উদ্ভুদ। স্পেনিস এ নামের অর্থ আমাদের বরফ লেডি (Our Lady of the Snows)। নেভিস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার নেভিস পাহাড়ের চুড়োয় অলৌকিকভাবে শ্বেতশুভ্র বরফ দেখা যেত। যাকে বলা হতো ক্যাথরিক অলৌকিকতা। তবে পরবর্তীকালে স্পেনিশ দীর্ঘ নামটি নেভিস নামের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। নেভিস দ্বীপে ব্রিটিশ প্রশাসন কায়েম হওয়ার প্রাক্কালে এর নাম রাখা হয় দুলসিনা (Dulcina)। এর অর্থ সুমধুর কিছু (Sweet One) বা আকর্ষণীয় কিছু।
অনেকে মনে করেন, ক্রিস্টোফার কলম্বাস সেন্ট কিটস নামটা দিয়েছেন। তাদের মতে, কলম্বাস তার প্যাট্রন সেন্ট এর নামানুসারে দ্বীপটি নাম নাম সান ক্রিস্টোবাল (San Cristobal) রেখেছিলেন। তবে আধুনিক গবেষণায় দেখা যায়, কলম্বাস দ্বীপটির নাম রেখেছিলেন, সেন্ট ইয়াগো বা সেন্ট জেমস (Sant Yago/Saint James)। কলম্বাস একটি দ্বীপের নাম সান ক্রিস্টোবাল রেখেছিলেন। তবে সেটি সেন্ট কিটস নয়, বরং সেন্ট কিটস হতে ২০ মাইল

উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বর্তমান সাবা (Saba) দ্বীপ। কলম্বাসের দেওয়া সান ক্রিস্টোবাল নামটি ভুলের কারণে কাছাকাছি থাকা সেন্ট কিটসের নামের উপর আপতিত হয়েছে। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা এর নাম অনুবাদ করে রেখেছিলেন সেন্ট ক্রিস্টোফার আইল্যান্ড(St. Christopher’s Island)। পরবর্তীকালে ক্রিস্টোফার শব্দের সংক্ষেপ নাম কিটস (Kitts) বিখ্যাত হয়ে ওঠে। এর থেকে হয় সেন্ট কিটস (Saint Kitts)। সুতরাং এখানে কিটস মানে ক্রিস্টোফার এর সংক্ষেপ রূপ।
সেন্ট কিটস ও নেভিসের আয়তন মোট ২৬১ বর্গকিলোমিটার বা ১০৪ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ প্রায় শূণ্য। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, জনসংখ্যা ৫৪,৯৬১ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটার লোকসংখ্যা ১৬৪। আয়তন বিবেচনায় এটি পৃথিবীর ২০৭-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় পৃথিবীর ৬৪-তম জনবহুল দেশ।
২০১২ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, পানামার জিডিপি (পিপিপি) ৮৩.৪২১ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ২১,২৬০ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ৭৬৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১৪,৩১৪ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম ডলার। রাজধানী (Basseterre)। সেন্ট কিটস ও নেভিসের নাগরিকগণ নিজেদের কিটিটিয়ান বা নেভিসিয়ান পরিচয় দিয়ে থাকেন। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর দেশটি যুক্তরাজ্য হতে স্বাধীনতা লাভ করে। জনগণের প্রায় সবাই খ্রিস্টান। সরকারি ভাষা। নৃতাত্তিক গোষ্ঠীর মধ্যে ৯০.৪% কৃষ্ণ, ৫% মুলাটো (Mulatto), ৩% ইস্ট ইন্ডিয়ান, ১% হোয়াইট এবং ০.৬% অন্যান্য।
পোর্টারিকো, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এর নিকটতম প্রতিবেশী। চার্লস টাউন নেভিসের বড় শহর। এটি নেভিসের রাজধানী। একসময় সেন্ট কিটস ও নেভিসকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জিব্রাল্টার বলা হতো। ১,১৫৬ মিটার উঁচু লিয়ামুইগা এ দেশের উচ্চতম পর্বত। এ দেশের দুই দ্বীপে দুটি বিমান বন্দর রয়েছে। এখানে কালো বালি ও সাদা বালির সৈকত রয়েছে। চিনি প্রস্তুতের জন্য ইক্ষু চাষ, তুলা, লবণ ও পর্যটন এ দেশের জাতীয় আয়ের অন্যতম উৎস। মেশিনারি, খাদ্য, ইলেকট্রনিক্স, পানীয় ও তামাক প্রধান রপ্তানি দ্রব্য। এ দেশের জনগণের অধিকাংশ কৃষি কাজে জড়িত এবং জীবনযাত্রা খুব সহজ-সরল। পর্যটকদের তার খুব আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে এবং স্বাগত জানাতে অভ্যস্ত।
জ্যামাইকা (Jamaica) : ইতিহাস ও নামকরণ
মেক্সিকো (Mexico) : ইতিহাস ও নামকরণ
নিকারাগুয়া (Nicaragua) : ইতিহাস ও নামকরণ
পানামা (Panama) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
আফ্রিকা মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক