স্বর্ণ ও স্মরণ বানানে ব ম অনু্চ্চারিত থাকার কারণ : ব-ফলা ও ম-ফলা
ড. মোহাম্মদ আমীন
বাংলায় দুটো ‘ব’। একটি স্বাধীন সত্তার অধিকারী ‘বর্গীয়-ব’ এবং অন্যটি সত্তাহীন ও আজন্ম পরাশ্রয়ী ‘অন্তঃস্থ-ব’। যেসব ‘ব’ সবসময় এবং সর্বত্র ইংরেজি ‘ন’-বর্ণের মতো আওয়াজ দেয়, সেটি ‘বর্গীয়-ব’। যেমন: আব্বা, আহ্বান, উদ্বেগ, বল, বাঁশি, উদ্বোধন, বিহ্বল, লম্বা, কলম্বাস, ব্রিটেন, বলদ, বাল প্রভৃতি। ‘বর্গীয়-ব’ তার নিজ-বর্গীয় বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হলে নিশ্চিত বলা যায়— সেটি ‘বর্গীয়-ব’। যেমন: অম্বল, কম্বল, সম্বল, তাম্বুল, মহব্বত প্রভৃতি। এসব শব্দের সঙ্গে যুক্ত ‘ব’টি ‘বর্গীয়-ব’। তবে, ‘ব’ নিজ বর্গীয় বর্ণ ছাড়া অন্য-কোনো বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হলে তা ‘বর্গীয়-ব’ না কি ‘অন্তঃস্থ-ব’ সে বিষয়টি কঠিন অনুশীলন ছাড়া সঠিভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এজন্য ‘সব্জি’ নয়, লেখা হয় ‘সবজি’, উদ্বেগ নয়, লেখা হয় ‘উদ্বেগ’— যাতে উচ্চারণ বিভ্রাট না ঘটে।
উচ্চারণ বিভ্রাট এড়ানোর জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘উদ্’ উপসর্গের সঙ্গে যুক্ত `বর্গীয়-ব‘ সবসময় পৃথক রাখার পক্ষে ছিলেন। যেমন: উদ্বিড়াল, উদ্বাহু, উদ্ব্যক্ত, উদ্বেগী প্রভৃতি।
‘অন্তঃস্থ-ব’-এর কোনো স্বাধীনসত্তা নেই। সে কখনো ইংরেজি ‘b’-বর্ণের মতো উচ্চারিত হয় না। সবসময় পরশ্রয়ী হয়ে অন্য শব্দের সঙ্গে বসে। যাকে আমরা সাধারণভাবে ‘ব-ফলা’ বলে জানি। সত্তাহীন বলে শব্দে অবস্থানভেদে ‘অন্তঃস্থ-ব’ বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়। আবার কখনও অনুচ্চারিতও থেকে যায়। যেমন: স্বামী (উচ্চারণ নেই), বিশ্ব (আশ্রয় বর্ণকে দ্বিত্বতা প্রদান ) প্রভৃতি। ‘স্বর্ণ’ শব্দের আদিতে ‘স’-য়ে যুক্ত বর্ণটি ‘অন্তঃস্থ-ব’ বলে অনুচ্চারিত থেকে গিয়েছে।
‘ম-ফলা’র আসল কাজ ‘ম’-হিসেব আওয়াজ দেওয়া নয়, তার আসল কাজ আশ্রয়ী বর্ণকে নাসিক্য বা দ্বিত্ব দেওয়া। গ, ঙ, ট, ণ, ন, বা ল বর্ণের সঙ্গে ‘ম-ফলা’ যুক্ত হলেই কেবল, ‘ম’-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন: বাগ্মী (বাগ্মি), যুগ্ম (যুগ্মো), মৃন্ময় (মৃন্ময়), জন্ম (জন্মো), গুল্ম (গুল্মো)। কখনও কখনও ‘ম-ফলা’র ‘ম’ অনুচ্চারিতও থেকে যায়।যেমন: স্মৃতি (সৃতি বা সৃঁতি)।
শব্দের প্রথমে ‘ম-ফলা’ থাকলে সে বর্ণের উচ্চারণে কিছুটা ঝোঁক পড়ে এবং সামান্য নাসিক্যস্বর হয়। তবে ‘ম’-য়ের উচ্চারণ আসে না। যেমন: শ্মশান (শঁশান্), স্মরণ (শঁরোন্)। এজন্য ‘স্মরণ’ বানানের ম-ফলা রূপী ‘ম’ অনুচ্চারিত থেকে যায়।