ড. মোহাম্মদ আমীন
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড বলতে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের জ্ঞানী-গুণী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের হত্যা করাকে বুঝায়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পরাজয় অনিবার্য জেনে নবগঠিত দেশকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য ১৪ই ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ গৃহ হতে তুলে এনে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই পরিকল্পিত গণহত্যাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। ১৯৭১ এর ১৪ ডিসেম্বরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের স্মরণে করে প্রতিবছর ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিদ গয়। বুদ্ধিজীবী হত্যার স্মরণে বাংলাদেশের ঢাকায় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে।
বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী
ধারণা করা হয় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি। স্বাধীনতার পর বঙ্গভবন থেকে তাঁর স্বহস্তে লিখিত ডায়েরি পাওয়া যায়, যাতে অনেক নিহত ও জীবিত বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা ছিল। অধিকন্তু, আইয়ুব শাসন আমলের তথ্য সচিব আলতাফ গওহরের সাক্ষাৎকার হতে জানা যায়, ফরমান আলীর তালিকায় গওহরের বন্ধু কবি সানাউল হকের নাম ছিল। আলতাফ গওহরের অনুরোধে রাও ফরমান আলি ডায়েরির তালিকা থেকে সানাউল হকের নাম কেটে দেন। এছাড়া আলবদরদের জন্য রাও ফরমান আলীই গাড়ি ব্যবস্থা করেছিলেন বলে তার ডায়েরির একটি নোট পাওয়া যায়।
বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান ঘাতক
বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান ঘাতক ছিল বদর বাহিনীর অপারেশন ইন-চার্জ চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও প্রধান জল্লাদ আশরাফুজ্জামান খান। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বরের পর আশরাফুজ্জামান খানের নাখালপাড়ার বাড়ি থেকে তার একটি ব্যক্তিগত ডায়েরি উদ্ধার করা হয়, যার দুটি পৃষ্ঠায় ২০ জন বুদ্ধিজীবীর নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কোয়ার্টার নম্বর লেখা ছিল। মঈনুদ্দিনের গাড়ির ড্রাইভার মফিজুদ্দিনের দেওয়া সাক্ষ্য অনুযায়ী রায়ের বাজারের বিল ও মিরপুরের শিয়ালবাড়ি বদ্ধভূমি হতে বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর গলিত লাশ পাওয়া যায়। যাদের মঈনুদ্দিন চৌধুরী নিজ হাতে গুলি করে মেরেছিলেন। চৌধুরী মঈনুদ্দীন ৭১ খ্রিষ্টাব্দে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি অবজারভার ভবন হতে বুদ্ধিজীবীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে রাও ফরমান আলী ও ব্রিগেডিয়ার বশীর আহমেদকে পৌঁছে দিতেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা
বাংলাপিডিয়ায় প্রদত্ত তথ্য মতে,শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা হলো : শিক্ষাবিদ, ৯৯১ জন; সাংবাদিক ১৩ জন; চিকিৎসক ৪৯ জন; আইনজীবী ৪২ জন; অন্যান্য তথা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী এবং প্রকৌশলী ১৬।
বধ্যভূমির সংখ্যা
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি খোঁজার জন্য ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ডিসেম্বর থেকে “ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি” কাজ করে যাচ্ছে। তারা সারা দেশে প্রায় ৯৪২টি বধ্যভূমি শনাক্ত করে। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন প্রকাশিত পত্রিকা, বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গ্রন্থ, এবং মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবার এবং স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব বধ্যভূমি সনাক্ত করা হয়।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ : মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহিদ প্রথম প্রতিরোধকারী
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ : মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বাহিনী
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ : বাংলাদেশ ভারত পরাশক্তি ও জাতিসংঘ