ড. মোহাম্মদ আমীন
পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ
ডিসেম্বরের মধ্যভাগ। চতুর্দিক থেকে অগ্রগামী মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণ এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর অনবরত ভারী গোলাবর্ষণের মুখে জেনারেল নিয়াজির অসহায় হয়ে পড়েন। এ অবস্থায়, নিয়াজি আত্মসমর্পন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে দলিলে স্বাক্ষর করেন- যৌথবাহিনী প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং পরাজিত পাকিস্তানের পক্ষে দলিলে স্বাক্ষর করেন- জেনারেল এ এ কে নিয়াজী। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার। তবে, তাঁর কোনো ভূমিকা ছিল না।
আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরের টেবিল
যে টেবিলে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল তা ঢাকা ক্লাব থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই টেবিলটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ৩৭ সংখ্যক প্রদর্শনী কক্ষে সংরক্ষিত আছে।
পিস্তল হস্তান্তর
পরাজয়ের প্রতীক স্বরূপ জেনারেল নিয়াজি পুর্বাঞ্চলীয় রণক্ষেত্রের ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পিস্তল হস্তান্তর করেন। বাংলাদেশে তখন পাকিস্তানি সৈন্য আর বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী মিলিয়ে ৯৪ হাজার সদস্য আটকা পড়েছিল।
পাকিস্তান বাহিনীর অস্ত্রসমর্পণ ও মে. জেনারেল জ্যাকবের বক্তব্য
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব “স্যারেন্ডার অ্যাট ঢাকা: বার্থ অব আ নেশন” বইয়ে লিখেছেন, পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজি রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ না করে সেনানিবাসে তাঁর সদর দপ্তরেই আত্মসমর্পণের ব্যাপারে চাপাচাপি করছিলেন। জ্যাকব আরো লিখেছেন, আত্মসমর্পণ নিয়ে আলোচনায় সাব্যস্ত হয় যে, ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হলেও নিয়াজি ও তার বাহিনী তখনই অস্ত্র সমর্পণ করবে না। জেনারেল জ্যাকব ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের অস্ত্র রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন। ফলে পাকিস্তানি বাহিনী যুদ্ধবন্দি হলেও ঢাকা সেনানিবাসে তাদের অবস্থান ছিল সশস্ত্র। পৃথিবীতে এমন নজির আর নেই।
আত্মসমর্পণের দলিলের নাম
আত্মসমর্পণের দলিলের নাম ছিল “INSTRUMENT OF SURRENDER” এটি এখন বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতের জনগনের সম্পত্তি। দিল্লি জাতীয় যাদুঘরে এটি রক্ষিত আছে। দলিলের লেখা ইংরেজিতে ছিল। দলিল অনুসারে পাকিস্তান বাহিনী বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি, ভারত-বাংলঅদেশ যৌথ বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান জগজিৎ অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। দলিলে পাকিস্তানি বাহিনীকে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সম্মান ও নিরাপত্তা দেওয়ার কথা উল্লেখ ছিল।
বিট্রায়াল অব ইস্ট পাকিস্তান
চাকুরি জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর নিয়াজি ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের অগাস্ট মাসে ‘Betrayal of East Pakistan’ নামক একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে তিনি তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে পাকিস্তান খণ্ডিত হওয়ার ঘটনাবলীর বর্ণনা দিয়েছেন। জেনারেল নিয়াজী ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি ৮৯ বছর বয়সে লাহোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ : মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহিদ প্রথম প্রতিরোধকারী
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ : মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বাহিনী
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ : বাংলাদেশ ভারত পরাশক্তি ও জাতিসংঘ
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ : বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা বধ্যভূমি