স্যমন্তক: দ্বাদশ ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ পর্ব
পরদিনই রাকু চলে এল।
ভেবেছিলাম ড্রাইভারকে আচ্ছামতো বকা দেব, দিলাম না। সে রাকুর বাবার লাশ পরিবহণের কাজে ব্যস্ত ছিল। অবশ্য ইচ্ছা করলে পাবলিক বুথ হতে একটা ফোন করতে পারত, করেনি। কিন্তু রাকুর মৃত বাবার জন্য যা করেছে তাতে তার সব দোষ ক্ষমা করে দেওয়া যায়। মাসুম একজন ড্রাইভার, আমি অফিসার। তার চেতনা আমার মতো হবে—এমন ভাবা উচিত নয়।
বাবুলের পরিবর্তে রাকুর নামে নতুন করে চেক লিখতে হলো। অজিত ও হাসান আন্তরিকভাবে সহায়তা করায় সব কাজ ভালোয় ভালোয় বেশ তাড়াতাড়িই মিটে গেল। একাজে যারা সংশ্লিষ্ট ছিল তাদের প্রত্যেকের আন্তরিকতা ছিল অতুলনীয়। কাজ করেছে আবেগে, ভালোবেসে। আবেগ, আন্তরিকতার উৎকৃষ্ট জ্বালানি।
আমি রাকুর হাতে চেক তুলে দিলাম। রাকু সেটি আমার হাতে ফেরত দিয়ে পায়ে উপুড় হয়ে পড়ল— স্যার, আমি জানি না আপনার কী উদ্দেশ্য। তবে আমি আপনার উদ্দেশ্যকে বিন্দুমাত্র অসম্মান করব না।
: কী করবে?
: যা বলেন তাই করব, আপনিই আমার ভালো-মন্দ, আপনিই আমার ন্যায়-অন্যায়। আপনার ইচ্ছা পূরণই আমার প্রার্থনা হয়ে গেল।
: মেয়ে, এত আবেগপ্রবণ হলে চলবে না। অতি আবেগ অতি গতির মতোই বিপজ্জনক।
: ঠিক বলেছেন স্যার, আবেগ মানুষের বেগকে বিপজ্জনক করে তোলে। কিন্তু আমার পথ পরিষ্কার। দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কা ক্ষীণ, তবে এটাও ঠিক যে, দুর্ঘটনা ঘটলে বেঁচে থাকার আশাও ক্ষীণ। তাই আফসোস নেই। মৃত্যু সব সমস্যার সমাধান করে দেয়। স্রষ্টার কাছে আবেগপ্রবণ না-হয়ে পারা যায় না। খান স্যারের কথা মনে পড়ছে।
: আমারও।
: ঢাকা গিয়ে খান স্যারকে চেকটা দেব?
: কেন?
: তিনি আর আপনি মিলে আমার হাতে তুলে দেবেন।
: ঠিক বলেছ মেয়ে। তুমি আমার চেয়ে বিচক্ষণ। এই মহান লোকটির সম্মতি আর আন্তরিক সহায়তা ছাড়া আমি কিছুই করতে পারতাম না।
: তিনি এই কাজে সম্মতি না-দিলে আমার চাকরিটা হতো।
: তখন আমরা একজন কেরানি পেতাম।
: এখন কী পাবেন, স্যার?
: গবেষক, চিকিৎসক, প্রফেসর, বিজ্ঞানী, ভাষাবিদ …; অন্তত কেরানি নয়। কী হতে চাও তুমি?
: স্যার, আপনি যা বলেন তাই হবো।
ঢাকায় গিয়ে খান স্যারের হাতে চেকটা দিলাম। তিনি রাকুর হাতে চেকটা তুলে দিয়ে বললেন, জানি না ভাগ্যবান কেÑ তুমি না আমি?
রাকু চেকটা নিয়ে আমার হাতে দিয়ে খান স্যারের পা ছুঁয়ে শ্রদ্ধা জানাতে জানাতে বিড়বিড় করে বলল,
ভগবান, তমি যুগে যুগে দূত পাঠায়েছ বারে বারে
দয়াহীন সংসারে
খান স্যার রাকুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, তোমাকে নিয়ে আমাদের আশা অনেক বেশি। আমাদের স্বপ্নশিশু তোমার কোলে তুলে দিলাম, মা।
: স্যার, আশীর্বাদ করবেন। যেন আপনাদের সম্মান রাখতে পারি।
খান স্যার বললেন, সৃষ্টির নেশা তোমাকে যেন সবুজের মতো বিমল আকর্ষণে সারক্ষণ প্রকৃতির মতো ব্যস্ত রাখে। তুমি যেন শিকড় থেকে শেখরে গিয়েও বারবার ফিরে আস শিকড়ের কাছে।
রাকু এসে আমার পাও ছুঁয়ে দিল। আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম মমতায়। রাকু খান স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনাদের স্বপ্নশিশু আমার অস্তিত্বের ধারক হয়ে থাকবে। শিকড় আমার শেখরের পলি, বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি আত্মহত্যা করতে যাব কেন?
তাই যেন হয়, মা; খান স্যার বললেন।
: আমি আজ থেকে আপনাদের স্বপ্নশিশু ছাড়া আর কারও জন্য ভাবব না।
: কিন্তু মা, এত স্বার্থপর হওয়া কী ভালো হবে?
: আমি যদি স্বার্থপর না-হই স্বার্থ আমাকে পর করে দেবে, স্যার। স্বার্থকে, স্বার্থ দিয়ে বাঁধতে হয়— বস্তির জীবন আমাকে এটাই শিক্ষা দিয়েছে। ক্ষুধার জ্বালায় দুহাতে ডাস্টবিনে খাবার খুঁজেছি। পলিথিন মোড়ানো পচা ভাত পেলে মনে হতো এক যুগের সাধনা। ভাগাড়কে মনে হতো আলাদিনের বাতি—যা

চাইব তাই পাওয়া যাবে। কী আর চাইতাম—এক মুঠো পচা ভাত। ক্ষুধার মতো লাজহীন স্বাদ পৃথিবীর আর কিছুতে নেই। আমি স্যার স্বার্থকে স্বার্থ দিয়েই বেঁধে রাখব ভালোবাসার সুতায়। আপনাদের হাতে যেন আমার নাটাইটা থাকে।
: স্বার্থ যেন তোমাকে পর করে না দেয়।
রাকু বলল, মা আমাদের ভাতের মধ্যে কাঁকর ছিটিয়ে দিতেন। পেটে প্রচণ্ড ক্ষিধে থাকলেও কাঁকরমাখা ভাত খেতে ইচ্ছে করত না। অল্প খেয়ে উঠে যেতাম। মা ভীষণ কষ্টে হেসে হেসে বলতেন, পেট ভরেছে তো?
খান স্যার আমাকে বললেন, টাকাগুলো কী করবে?
: রাকুর নামে পোস্ট অফিসে জমা করব। সাড়ে চৌদ্দ পার্সেন্ট ইন্টারেস্ট। পোস্ট অফিসের সঙ্গে কথা হয়েছে। আয়কর, সুদ ও আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিলেও মাসে ছত্রিশ হাজার টাকার বেশি থাকবে। এ দিয়ে রাকুরা বেশ ভালোভাবে চলে যেতে পারবে।
: এটাই করো।
আমি বিনীত গলায় বললাম, এখন আসি স্যার?
খান স্যার বললেন, কাজ সেরে চলে এসো। দুপুরে একসঙ্গে খাব। তোমার ভাবিও আসবে। তোমাকে, বিশেষ করে রাকুকে দেখার খুব ইচ্ছে তার।
: থ্যাংক ইউ স্যর।
পোস্ট অফিস আর ব্যাংক পাশাপাশি। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে পোস্ট অফিসে জমা করতে বেশিক্ষণ লাগল না। সেভিংস-এর কাজটা শেষ করে খান স্যারের অফিসে চলে গেলাম।
খান স্যার আমাদের জন্য অপেক্ষ করছিলেন। আমাদের দেখে হাত দিয়ে নিজের সামনে থেকে সিগারেটের ধোঁয়া তাড়াতে তাড়াতে বললেন, রাকুকে নিয়ে এমন রিস্কি প্রকল্পের কথা শুনে তোমার ভাবি হাইলি ইমপ্রেসড।
রাকু বলল, ম্যাম কী করেন?
আমি বললাম, ভাবি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজকর্মী।
কিছুক্ষণের মধ্যে চলে এলেন ভাবি। রাকু আর আমি একসঙ্গে ভাবিকে সালাম দিলাম। ভাবির পেছনে বয়স্ক এক লোক, সম্ভবত ড্রাইভার, হাতে একটা হারমোনিয়াম। হারমোনিয়ামটি রেখে লোকটি চলে গেল।
রাকুর দিকে তাকিয়ে ভাবি বললেন, এই তাহলে তোমাদের রাকু?
খান স্যার বললেন, রাইট।
ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আর এই হচ্ছে সেই সাহসী যুবক, ঠিক বলেছি না?
স্যার বললেন, আমার গিন্নি কি ভুল করতে পারে?
ভাবিও স্যারের মতো চৌকশ। চোখের গভীরতায় আভিজাত্যের বর্ণাঢ্য উৎসব এবং মুখের হাসিতে স্নেহের স্নিগ্ধ আহ্বান। সবুজ শাড়ির উপর নানা রঙের মার্জিত মিশেলে ভাবিকে পৌরাণিক দেবির মতো লাগছিল। ঠোঁটে হাসি, হাসিতে প্রজাপতির মতো খেলছে আপনহারা আপন। এ হাসি যে কাউকে মাতৃমমতায় মাতেয়ারা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
ভাবি রাকুকে বলল, হারমোনিয়ামটা তোমার জন্য এনেছি।
আমি বললাম, এই তো অনেক দামি!
: যাকে দিচ্ছি সে আরও দামি। রত্ন গলায় যত্ন হার, মুগ্ধ সবাক অহংকার।
রাকু কৃতজ্ঞতায় বিস্মিত হয়ে বলল, থ্যাংক ইউ ম্যাম, থ্যাংক ইউ। আই’ম ভেরি গ্রেটফুল।
ভাবি খান স্যারের দিকে তাকিয়ে বললেন, রাকুর জন্য তোমরা যদি কিছু করতে না-পারতে তাহলে আমি করতাম। তোমরা একটা মহৎ কাজ করেছ, যদিও বিধিসম্মত হয়নি। তবে বিধিকে আমি মনে করি, অপনিধি। এজন্য রবীন্দ্রনাথ বলছেন, কী বলেছেন রাকু?
আজ খেলা ভাঙার খেলা খেলবি আয় – – -।
আমি বললাম, নজরুল বলেছেন—
“আমি মানি নাকো কোনো আইন,
আমি ভরা-তরি করি ভরা-ডুবি, আমি র্টপেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!”
খান স্যার বললেন, অষষ বিষষ-নবরহম ফব লঁৎব, সব মঙ্গল কাজই বিধিসম্মত। কাগেজ কী লেখা আছে তা ডাস্টবিনে নিক্ষেপে করো, যদি সাহস আর সুযোগ থাকে। যারা তোমার বিধিবহর্ভূত মঙ্গল কাজকে বাঁকা চোখে দেখে সেসব কুলাঙ্গারদের এড়িয়ে চলো।
খাওয়া-দাওয়ার পর আবার গল্প শুরু হলো। ঘড়িতে চোখ দিয়ে দেখি, গল্পগুজবে অনেকটা সময় চলে গেছে। অনেক কাজ তখনও বাকি, রাকুদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
ভাবি আর স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে এলাম।
খান স্যারের পিয়ন কামাল হারমোনিয়ামটা আমার গাড়িতে তুলে দিলেন। আমি ও রাকু দরজার দিকে রওনা দিতেই খান স্যার বললেন, রাকু তুমি যাও। গাড়িতে গিয়ে বোসো। তোমার স্যারের সঙ্গে কথা আছে আমার।
রাকু বের হয়ে যেতেই খান স্যার বললেন, ওদের বস্তি থেকে এনে কোথায় তুলবে?
: সিদ্ধেশ্বরী-মৌচাকের কাছাকাছি একটা ভালো বাসা নিয়ে তুলে দেব।
: বস্তিতে কখনো গিয়েছ?
: না।
: বস্তির শিশুদের মাথায় প্রচুর উকুন আর শরীরে নানা পরজীবী থাকে। রাকুকে বলিও, নতুন বাসায় উঠার আগে ভাইবোনদের মাথাগুলো যেন ন্যাড়া করে আনে। বাসায় এনে প্রথমে সাবান দিয়ে ভালোভাবে গোসল করতে বলবে।
: স্যার।
: তুমি মনে হয় সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছ। দায়িত্ব যখন নিয়েছ এটি পালন করা তোমার কর্তব্য হয়ে গেল। না পারলে মরতে হবে, বস্তার নিচে চাপ পড়ে যেমন মরে রুগ্ণ শ্রমিক। যে কর্তব্য অবহেলা করে কিংবা দায়িত্ব পালন করতে পারে না আমি তাকে সুস্থ মানুষ মনে করি না। কি বলেছি বুঝতে পেরেছ?
: স্যার।
: রাকু আর তোমার কী সম্পর্ক হবে সেটি তোমাদের ব্যাপার। তবে সে যদি কখনো তোমার আচরণ সৌজন্য বহির্ভূত মনে করে, সেদিন আমি তোমাকে ছাড়ব না। অপমান খুব ভালো অতিথি, কারণ বিনে দাওয়াতে সে কারও কাছে যায় না। তারাই অপমানিত হয়, যারা নিজেই নিজের অপমান ডেকে আনে।
: আমি আমার মর্যাদা রক্ষা করব।
: ওটাই হবে আমাকে উপযুক্ত সম্মান প্রদান। আমাকে অসম্মান করো না। যাও।
স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বারান্দায় এলাম। রাকু হাঁটাহাঁটি করছে, সে গাড়িতে যায়নি। কাছে এলে বললাম, অনেক্ষণ সময় চলে গেল।
রাকু বলল, আমার মনে হয়েছে এক মিনিট। ভালো মানুষের সঙ্গ ভালো বই পড়ার মতো মারাত্মক সময়-চোর। ভালো বই পড়তে যেমন মনে হয় না বই পড়ছি, তেমনি ভালো মানুষের সঙ্গে আলাপ করলেও মনে হয় না, সময় কাটাচ্ছি। সময় এত দ্রুতবেগে যায় যে, মনে হয় সময় থেমে আছে, সময় বলে কিছু নেই কেবল ঘড়ির কাঁটাটাই খামোখা ঘুরে।
আমি বললাম, বস্তিতে আর একদিনও নয়, যথেষ্ট হয়েছে।
: কোথায় থাকব স্যার?
: ফ্ল্যাট বাড়িতে।
রাকু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ফ্ল্যাট বাড়ি দেখে অবাক হয়ে চেয়ে থাকতাম, কত আরামে থাকে ওখানকার মানুষগুলো। একবার এক ফ্ল্যাট বাড়িতে মিসকিন হিসাবে খাওয়ার দাওয়াত পাই। বস্তির মেয়ে বলে আমাদের ভিতরে ঢুকতে দিল না। বারান্দায় খাইয়ে বারান্দা থেকে বিদায় করে দিয়েছিল।

কল্পনার খুব সখ ফ্ল্যাট বাড়ি দেখা। এখন দেখতে পাবে।
: তুমি এখন পঁয়ত্রিশ লাখ টাকার মালিক।
: এ তো ঋণ, টাকা নয়; বোঝা।
: আমাদের চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড়ো ধনীটা ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। তার ঋণ কত জানো? ২০০০ কোটি টাকা।
: আপনার দয়া। বস্তিতে কখনো গিয়েছেন স্যার?
: অতীতের শংকায় সামনের পথ কণ্টকিত করো না। লাফ দাও; সামনে গর্ত? কোনো বাধা নয়, লাফ যদি দীর্ঘ হয়। সামর্থ্য যদি থাকে দীর্ঘ লাফের। সামর্থ্য নেই? অর্জন করে নাও।
: রাকু ফিসফিস করে বলল, স্যার, সব ঋণ কী শোধ করা যায়?
: জানি না। শুনেছি, শোধবোধ না-হলে নাকি কেয়ামত হবে না। কেয়ামত কিন্তু হবে। অতএব সব ঋণও শোধ হয়ে যাবে। আমি করছি তোমার জন্য, তুমি করবে আরেক জনের জন্য এভাবে।
: আমি সব ঋণ শোধ করার চেষ্টা করব।
: কীভাবে?
: যেভাবে আপনি চান। আপনার সেবাই আমার ধর্ম।
: ঈশ্বরের কী হবে?
: স্যার, আপনিই আমার ঈশ্বর।
: রাকু, একটা প্রশ্ন করি?
: করুন স্যার।
: আমার আচরণে যদি তুমি কখনো অপমানিত বোধ কর?
: স্যার, এ কী বললেন! আপনি আমার ঈশ্বর। যেভাবেই হোক, যখনই হোক, আপনার ইচ্ছাপূরণই আমার প্রার্থনা। যেদিন পায়ে মস্তক রেখেছি সেদিনই সবকিছু দিয়ে দিয়েছি। মানুষের মস্তকের চেয়ে উন্নত আর কিছু আছে কি?
: মানুষ প্রকৃতির প্রধান উপাদান। মানুষের মন প্রকৃতির মতো চঞ্চল।
রাকু আবেগঘন গলায় প্রবল বিশ্বাস এনে বলল, স্যার, আপনি আমার কাছে মানুষ নন— ঈশ্বর। ঈশ্বরের কোনো কাজ অস্বাভাবিক হয় না।
————————————–
ইদানীং ও ইদানীং-এর বিপরীতার্থক শব্দ