স্লোভাকিয়া (Slovakia) : ইতিহাস ও নামকরণ

কীভাবে হলো দেশের নাম (ইউরোপ)

ড. মোহাম্মদ আমীন

স্লোভাকিয়া (Slovakia)

 স্লোভাকিয়া মধ্য ইউরোপের একটি স্থলবেষ্টিত প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এর উত্তর-পশ্চিমে  চেক প্রজাতন্ত্র, উত্তরে পোল্যান্ড, পূর্বে ইউক্রেন, দক্ষিণে হাঙ্গেরি এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে অস্ট্রিয়া।  ১০ম শতক থেকে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্লোভাকিয়া হাঙ্গেরির অংশ ছিল।

প্রকাশক: পুথিনিলয়।

১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে  এটি চেক অঞ্চল বোহেমিয়া ও মোরাভিয়ার সঙ্গে মিলিত হয়ে ও সাইলেসিয়ার একটি ক্ষুদ্র অংশ সঙ্গে নিয়ে চেকোস্লোভাকিয়া গঠন করে। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর কিছুদিন আগে আডল্ফ হিটলারের চাপে দেশটি স্বাধীনতা ঘোষণা করে, কিন্তু ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে  আবার এটি চেকোস্লোভাকিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়।  ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চেকোস্লোভাকিয়ার ক্ষমতায় ছিল সোভিয়েত-অনুসারী সরকার। ১৯৯৩  খ্রিষ্টাব্দে  দেশটি চেক প্রজাতন্ত্র ও  স্লোভাকিয়ায় বিভক্ত হয়ে পড়ে।

চেক ও শ্লোভাকদের দেশ বা ভূমিকে চেকোশ্লোভাকিয়া বলা হয়। চেক, শ্লোভাক শব্দের সঙ্গে ইয়া প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠিত হয় চেকোস্লোভাকিয়। এর আক্ষরিক অর্থ চেক ও স্লোভাক জাতির লোকদেও আবাসভূমি। চেক ও শ্লোভাকদের ভূমির নাম চেকোশ্লোভাকিয়া। এর পূর্বে দেশটির নাম ছিল চেকোশ্লাভাক নেশন। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে  স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশটির নাম পরিবর্তন করে চোকোশ্লাভিকিয়া রাখা হয়। বহেমিয়ান উপজাতিগোষ্ঠীর লোকের চেক নামে পরিচিত ছিল। চেক ও স্লোভা জাতিগোষ্ঠীভুক্ত লোক একত্রিত হতে জনপদটি গড়ে তুলেছিলেন। তাই এর নাম চেকোস্লোভাকিয়া। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারি চেকোশ্লাভাকিয়া ভেঙে চেক রিপাবলিক ও স্লোভাকিয়া নামের দুটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্রে বিভক্ত হয়ে যায়। শ্ল্যাভিক ‘Slavs’ শব্দ হতে শ্লোভাকিয়া নামের উৎপত্তি। তবে শ্ল্যাভ শব্দের উৎপত্তি নিয়ে বির্তক রয়েছে। তবে গবেষকদের অভিমত, যে স্থানে শ্ল্যাভ উপজাতীয় গোষ্ঠীর লোক বসবাস শুরু করেছিল সে স্থানটি স্লোভাকিয়া।

স্লোভাকিয়ার মোট আয়তন ৪৯,০৩৫ বর্গকিলোমিটার বা ১৮,৯৩২ বর্গমাইল। তবে কোনো জলীয় অংশ নেই বললেই চলে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, স্লোভাকিয়ার জনসংখ্যা ৫৪,১৫,৯৪৯ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১১১ জন। আয়তন বিবেচনায় স্লোভাকিয়া পৃথিবীর ১২৯-তম এবং জনসংখ্যা বিবেচনায় ১১৬-তম বৃহত্তম দেশ। তবে জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় এটি পৃথিবীর ৮৮-তম জনবহুল দেশ। স্লোভাকিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর ব্রাতিসলাভা এবং দাপ্তরিক ভাষা স্লোভাক।

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, স্লোভাকিয়ার জিডিপি (পিপিপি) ১৫৮.৪২৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ২৯,২০৯ ইউএস ডলার। আবার জিডিপি (নমিনাল) ৮৭.৫২৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১৬,১৩৮ ইউএস

প্রকাশক: পুথিনিলয়।

ডলার। মুদ্রার নাম ই্উরো। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ অক্টোবর অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি হতে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি চেকশ্লোভাকিয়া হতে স্বাধীনতা লাভ করে। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১ মে দেশটি ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে যোগদান করে। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার পতাকা গৃহীত হয়। বর্তমানে স্লাাভাকিয়ার রাজনীতি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। সরকার-প্রধান হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

স্লোভাকিয়ায় রয়েছে ১৮০টি দুর্গ বা সুরক্ষিত প্রসাদ (castles) এবং ৪২৫টি সুরম্য অট্টালিকা (chateaux )। অথচ পুরো দেশের লোকসংখ্যা নিউ ইয়র্কেও চেয়ে কম। এ দেশের রয়েছে ৬০০০ গুহা। স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিস্লাভা অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরির সীমান্তে অবস্থিত। দুটি দেশের সীমান্তে অবস্থিত পৃথিবীর একমাত্র রাজধানী ব্রাতিস্লাভা হতে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। দুটো শহরই দানিউব নদীর তীরে অবস্থিত। নদীপথে ভিয়েনা হতে ব্রাতিস্লাভা যেতে মাত্র ৯০ মিনিট সময় লাগে।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ হতে সকল শিশু, ২৬ বছরের কম-বয়স্ক পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী, বিধবা বা ৬২ বছরের কমবয়স্ক বিধবা বা পেনশনভোগী এবং ৬২ বছরের বেশি বয়স্ক সিনিয়র নাগরিকগণ বিনা ভাড়ায় ট্রেন ভ্রমণের বিধান করা হয়েছে। এটি কেবল স্লোভাকিয়ার নাগরিক এবং ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

লেভোকা (Levoca) স্লোভাকিয়ার মধ্যযুগের একটি প্রাচীন শহর। শহরটি বিশ্বের দীর্ঘতম কষ্ঠ- বেদীর জন্য বিখ্যাত। মাস্টার

প্রকাশক: পুথিনিলয়।

পাউল (Master Paul) এ বেদীটি প্রস্তুত করেন। লেভোকার ঐতিহাসিক কেন্দ্র সেন্ট জেমস গির্জার দক্ষিণে এটি অবস্থিত। ১৮.৬ মিটার উঁচু ও ৬ মিটার প্রশস্ত এ বেদী নির্মাণে একটি পেরেকও ব্যবহার করা হয়নি। পুরো লেভোকা শহর ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য সাইটের অন্তর্ভুক্ত। স্লোভাকিয়া ১৩০০টি খনিজ প্রস্রবন Mineral spring) রয়েছে। ইউ সিটি গাইডের জরিপমতে পৃথিবীর সুন্দরতম নারী বিবেচনায় স্লোভাকিয়া পৃথিবীর ৩টি দেশের অন্যতম। পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই, যে ব্রাতিস্লাভার রাস্তায় হেঁটেছে অথচ তাদের নারী দেখে মুগ্ধ হয়নি।

আইভনা বেলা প্রথম স্লোভাক মহাশূণ্যচারী তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের রাশিয়ান-ফ্রান্স- স্লোভাক মিশনে ৯ দিনের জন্য মহাশূণ্য স্টেশন মির গমন করেন। ৯টি ন্যাশনাল পার্ক ও ১৪টি সংরক্ষিত প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য নিয়ে গঠিত স্লোভাকিয়াকে অনেকে পৃথিবীর স্বর্গ বলে থাকেন। বিশ্বের লোক-স্থাপত্যবিদ্যার প্রথম সংরক্ষণ রয়েছে স্লোভাকিয়ায়। এটি দেখার জন্য স্লোভাকিয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।


মন্টিনেগ্রো (Montenegro) : ইতিহাস ও নামকরণ

নেদারল্যান্ডস (Netherlands) : ইতিহাস ও নামকরণ

নরওয়ে (Norway) : ইতিহাস ও নামকরণ

পোলান্ড (Poland) : ইতিহাস ও নামকরণ

পর্তুগাল (Portugal) : ইতিহাস ও নামকরণ

রোমানিয়া (Romania) : ইতিহাস ও নামকরণ

রাশিয়া (Russia) : ইতিহাস ও নামকরণ

সান ম্যারিনো (San Marino) : ইতিহাস ও নামকরণ

সার্বিয়া (Serbia) : ইতিহাস ও নামকরণ

 

সূত্র:  কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।

All Link

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

Knowledge Link

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

 

Language
error: Content is protected !!