শুবাচের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ
ড. মোহাম্মদ আমীন
শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)-এর উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদের ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২রা জুলাই পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পরও তার পরিবার-পরিজন পশ্চিবঙ্গেই থেকে গিয়েছিলেন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে হায়াৎ মামুদ পিতার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। কর্মজীবনের শুরুতে কিছুদিন চাকুরি করেন বাংলা একাডেমিতে। ১৯৭৮ থেকে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন।
১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ঢাকায় আসার একবছর পর ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে মার্চ পূর্ববাংলার নাম পরিবর্তন করে পূর্ব-পাকিস্তান রাখা হয়।
বন্ধুজি পশ্চিমবঙ্গে থাকাকালীন কোন স্কুলে পড়তেন?
খাজুরদহ বি. বকাউল্লাহ স্কুল। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। ওখানে অনেক খাজুর গাছ ছিল। শীতকালে লোকের খাজুর গাছের ডাল দহ করে আগুন পোহাত। তাই স্কুল এলাকাটির নাম খাজুরদহ। ঢাকায় এসে ভর্তি হন সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুলে। কিছুদিন নটরডেম কলেজে পড়েছিলেন।
ইন্টারমেডিয়েট পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে লেখাপড়া শুরু করেন। বাংলা ভাষার তাঁর দক্ষতা এবং বিশ্লেষণী ক্ষমতা ছিল অদ্ভুত। শিক্ষকরা খুব খুশি। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, তিনি পাস হওয়ার জন্য পড়তেন না। জানার জন্য পড়তেন। ছোটবেলার এই অভ্যাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তা আরো জেঁকে বসল। তিনি বইয়ের সব লেখা ভালোভাবে পড়তেন। পাঠ্য বইয়ের চেয়ে পড়তেন বাইরের বই। কুইনাইন খেতে আর কতো ভালো লাগে। কত ভালো লাগে শুধু ভাত খেতে। পরীক্ষায় পাসের জন্য যাঁরা পড়তেন, তাঁরা অল্প পড়ে ভালো পাস দিতেন। আমার বন্ধুর এদিকে কোনো ঝোঁক ছিল না। তবু তিনি ভালো পাস দিয়ে এম এ করে নিলেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ। এসময় এমএ পাস চাট্টিখানি কথা নয়, তাও আবার বাংলায়।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা সেপ্টেম্বর শুবাচ প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি শুবাচ-এর প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক , অনুবাদক ও অধ্যাপক। মৃত্যুচিন্তা রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য জটিলতা তার বিখ্যাত গ্রন্থ। গ্রন্থটি ১৯৬০-এর দশকে প্রকাশিত হয়। তিনি শিশুদের জন্য অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার অনূদিত মাক্সিম গোর্কি বিরচিত চড়ুইছানা সকলমহলে উচ্চ প্রশংসা লাভ করেছে।
হাসান আজিজুল হক কে নিয়ে রচিত তার জীবনীগ্রন্থ উন্মোচিত হাসান একটি প্রামাণিক গ্রন্থ। তিনি রুশ ভাষা থেকে বহু গল্প বাংলায় অনুবাদ করেছেন। শিশু-কিশোরদের জন্য জীবনীগ্রন্থ রচনা ছিল তার প্রিয় বিষয়।
শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। জীবনব্যাপী শিশুসাহিত্য রচনার জন্য তাকে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৪১৮) দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন এবং ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন । তাঁকে নিয়ে ড. মোহাম্মদ আমীন একটি উপন্যাস রচনা করেছেন। উপন্যাসটির নাম ‘ প্রিয়সখা প্রিয়জন’।
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন : চুম চুমা চুমু এবং চুমো