হ-এর কথা নিমোনিক: ব্যাকরণ ছাড়া প্রমিত বাংলা বানান শেখার কৌশল
ড. মোহাম্মদ আমীন
হরিণ ও হরিনাম: হরিণ একটি চঞ্চল, কিন্তু নিরীহ বন্যপশু। এর বানানে ‘মূর্ধন্য-ণ’ আবশ্যক। কিন্তু ‘হরিনাম’ বানানে ‘দন্ত্য-ন’। কারণ, হরিনাম করতে হরিণ লাগে না। ‘হরি’ আর ‘নাম’ হলেই চলে। অধিকন্তু, বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য হরিণের লম্বা পা লাগে। মূর্ধন্য-ণ’-এর পা ‘দন্ত্য-ন’ এর চেয়ে লম্বা।

হর্ম্য: ‘হর্ম্য’ অর্থ প্রাসাদ। শব্দটির বানানে ‘য-ফলা’ অনিবার্য। কেননা, প্রাসাদ শক্তপোক্ত করতে হলে ‘য-ফলা’র মতো জটিল ও শক্ত ভিত লাগে। লোহাকে বাঁকাতে হয়।
হস্তী— ‘হস্তী’ তৎসম। তাই বানানে ‘ঈ-কার’। হাতি বানানে ই-কার, এটি অতৎসম। বঙ্গদেশের জমিদারগণ হাতির পিঠে ছাতা দিয়ে চলত। তাই হাতি বানানে ছাতা মানে ‘ই-কার’।
হাজার হাজার: হাজার হাজার মানে অসংখ্য, অগণিত। অগণিত বা হাজার হাজার লোক একসঙ্গে বসতে পারে না। তাই ফাঁক করে বসতে হয়। এজন্য ‘হাজার হাজার মানুষ যাচ্ছে’ লিখেতে ‘হাজার হাজার’ লিখতে হবে।
হাট, হাঁটা, হাঁড়ি, হাঁটু: ‘হাট’ বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই। হাঁটা বানানে আছে। হেঁটে, হাটে যাবার সময় সওদা আনার জন্য মাথায় ঝুঁড়ি নিয়ে যেতে হয়। ওটাই চন্দ্রবিন্দু। হাঁড়ি বানানেও চন্দ্রবিন্দু আছে। নইলে হাঁড়ির মুখ ঢাকা হবে কী দিয়ে। হাঁটতে হাঁটু লাগে। তাই হাঁটু বানানেও চন্দ্রবিন্দু। যেখানে হাঁটা সেখানে হাঁটু এবং সেখানেই চন্দ্রবিন্দু। তবে দৌড়তে গেলে চন্দ্রবিন্দু রেখে যাওয়া উত্তম। নইলে পড়ে যাবে। তাই দৌঁড় বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই।
হাঁস ও হাস: তুই হাস তো একটু দেখি? কী সুন্দর একটা হাঁস পুকুরের জলে ভাসছে! তার মানে, হাসি বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই, কারণ মুখে চন্দ্রবিন্দু রেখে হাসা যায় না। আরও কারণ আছে। হাসা, চন্দ্রবিন্দুর চেয়েও সুন্দর। তাই ‘হাসি’ বানান চন্দ্রবিন্দুমুক্ত। কিন্তু পুকুরে ভাসতে হলে ‘হাঁস’-এর হ-য়ে চন্দ্রবিন্দু লাগে। এটা ধরতে পারেন নৌকো। তাই হাঁস বানানে চন্দ্রবিন্দু। সংস্কৃত ‘হংস’ থেকে ‘হাঁস’। ‘হংস’ অনুস্বার ছেড়ে চন্দ্রবিন্দু নিয়ে তৎসমত্ব হারিয়ে বাংলায় এসেছে। স্বাগত তোমায় হংস থেকে হাঁস।
সূত্র: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
——————————————-