ড. মোহাম্মদ আমীন
লেখালেখি করছিলাম।বউ দরজার কাছে এসে বলল, আমি মেহমানকে এগিয়ে আনতে যাচ্ছি।
যাও।
কয়েক মিনিট পর ইন্টারকম বেজে ওঠল। দৌড়ে গিয়ে রিসিভার কানে দিলাম।বউ রিং দিয়েছে, নিশ্চয় জরুরি কিছু।
কিছু বলবে? জানতে চাইলাম।
বউ মোলায়েম গলায় আদর মেখে বলল, মাংসের ডিশটা চুলোয় বসিয়ে দাও। দশ মিনিট পর নামিয়ে রেখ কিন্তু। আমি দিতে ভুলে গেছি।
বউয়ের কথা শিরোধার্য। আমি মাংসের ডিশটা চুলোয় বসিয়ে আবার লেখালেখি শুরু করলাম। ঠিক দশ মিনিট পর চুলো থেকে নামিয়ে আবার লিখতে শুরু করি। কয়েক মিনিট পর বউ, কাঙ্ক্ষিত মেহমান ড. ফারজানাকে নিয়ে বাসায় ঢুকল, তিনি আমার বন্ধুর স্ত্রী এবং ছেলের বন্ধুর মা।
বেশ গল্পগুজব হচ্ছে। আমি ওসবে নেই। রিডিং রুমে বসে রাইটিং-এর কাজ করছি।রিডিং রুমে রাইটিং করা আদৌ উচিত কি না জানি না। তবে আমি রিডিং রুমেই লিখে থাকি। আসলে আমার বাসায় কোনো রাইটিং রুম নেই। মার্ক টোয়েনেরও ছিল না। তিনিও আমার মতো রিডিং রুমে বসে রাইটিং করতেন। আমি মার্ক টোয়েনের মতো হতে চাই, এজন্য রিডিং রুমে বসে রাইটিং করি। রবীন্দ্রনাথও না কি রিডিং রুমে রাইটিং করতেন।
ডাইনিং রুমে খাবার দেওয়া হচ্ছে, তাড়াতাড়ি চলে এস, বউয়ের গলা।
গলার রেশ কাটতে না কাটতে বউ সামনে এসে দাঁড়াল। তার চেহারার দিকে তাকিয়ে আমি ভয়ে আঁতকে। চোখেমুখে ক্ষোভ সমস্ত ভালোবাসাকে ঢেকে দিয়েছে। মেঘ যেমন ঢেকে দেয় আকাশ।
কোনো সমস্যা?
বউ ছোটোখাটো মেঘের মতো গর্জন করে বলল, আমার কপালটা এত খারাপ কেন? আমার কী হবে গো? কী করব আমি? তুমি তো পাগল হয়ে গেছ।
কী হয়েছে? আমি সভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম।
তোমাকে না বলেছিলাম মাংসের ডিশটা চুলোয় দিতে।
বললাম, দিয়েছি তো।
গরম হয়নি কেন?
আমি কী জানি? যতটা সম্ভব কোমল গলায় বললাম।
চুলোর উপর ডিশ দিয়েছ কিন্তু গ্যাস দাওনি, তাই তো?
অবাক বিস্ময়ে বললাম, গ্যাস দেওয়ার কথা তো বলোনি!
বউ আমাকে গাধা, রামছাগল, বেকুব, বোকা, অথর্ব, নির্বোধ, ক্ষীণমতি, গবা, মূর্খ, অর্বাচীন- প্রভৃতিসহ আরো কতিপয় বিশেষণে বলদ গরুর মাংসের মতো টুকরো টুকরো করে বলল, তুমি একটা বলদ।
আমি চুপ। বউয়ের কাছে মিউট থাকাই কিউট।
বউ আমার ফারজানা ভাবীর কাছে গিয়ে বলল, ভাবী, বড়ো খারাপ কপাল আমার। এমন স্বামী যেন শত্রুরও না হয়।রাতদিন জ্বালিয়ে মারছে, একটা কাজ করতে পারে না। এমন গর্দভ কীভাবে এত বড়ো চাকুরি করে? এজন্যই তো দেশের এমন দুরবস্থা।
ফারাজানা ভাবী বললেন, কী হয়েছে?
আমার স্বামীটা দিন দিন বলদ হয়ে যাচ্ছে। কী করি বলুন তো?
ফারজানা ভাবী আমি না-শোনার মতো গলায় ফিস ফিস করে বললেন, আপনার স্বামী বলদ হয়ে যাচ্ছে, আমারটা বিয়ের রাতেই বলদ হয়ে গেছে।
কিন্তু তার কথা আমি শুনে ফেলেছি। মেয়েরা ফিসফিস করলেও বজ্র ডাকে।
ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষকও বলদ? আমার বউ জানতে চাইলেন।
ফারাজানা ভাবী বললেন, বলছি কী তাহলে, এজন্যই তো দেশে শিক্ষার এত দুরবস্থা।
কী করি বলুন তো? আমার বউ জানতে চাইল।
ফারজানা ভাবী আরো ফিস ফিস করে বললেন, কিচ্ছু করা লাগবে না, বলদই তো ভালো। জগতের সব স্বামী সব বউয়ের কাছে বলদ হয়েই থাক।
থাক তাহলে।