ড. মোহাম্মদ আমীন
গ্রাম থেকে আসার পর প্রায় কপর্দকশূন্য আহমদ ছফা ঢাকায় অনেকের আশ্রিত হয়ে থেকেছেন, অর্থের অভাবে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। প্রায় দু-বছর আবুল কাসেম ফজলুল হক সাহেবের আশ্রয়ে ছিলেন। সব খরচ বহন করেছেন আবুল কাসেম ফজলুল হক সাহেব।
পরবর্তীকালে আবুল কাসেম ফজলুল হক সাহেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হলেন। বাসা পেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে।
বন্ধুতার সূত্রে আহমদ ছফা প্রায়শ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক সাহেবের বাসায় যেতেন। গল্প করতেন ফজলুল হক সাহেবের
ছফা, দীপন আর সুচিতাকে সবসময় বলতেন, আমার মতো বড়ো জ্ঞানী পৃথিবীতে নেই।
বারবার একই কথা শুনতে শুনতে শিশু সুচিতা আর -দীপনের মনে একথা গেঁথে গিয়েছিল যে, আহমদ ছফার মতো জ্ঞানী, খ্যাত, সাহসী এবং পরিচিত ও বিখ্যাত মহামানব পৃথিবীতে আর কেউ নেই।
শুধু সুচিতা-দীপনের সঙ্গে নয়, আরও অনেকের কাছে আহমদ ছফা নিজেকে অনেক বড়ো বলে প্রচার করে বেড়াতেন। শ্রোতৃবৃন্দ সামনা-সামনি কিছু না-বললেও আড়ালে হাসাহাসি করতেন।মিথ্যুক বলে উপহাস করতেন। এভাবে মিথ্যা বলে নিজেকে বড়ো করে তোলার স্বভাব হুমায়ুন আজাদেরও কিছুটা ছিল।তবে ছফার মতো এত বেশি ছিল না।
মাওসেতুং মারা যাবার পর অন্যান্য দেশের পত্রপত্রিকার মতো বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায়ও বেশ কয়েক দিন ধরে বড়ো বড়ো ছবি ছাপা হয়ে আসছিল।
একদিন সুচিতা-দীপন তাদের বাবা আবুল কাসেম ফজলুল হককে বলল, পত্রিকায় এত বড়ো বড়ো করে ছবি ছাপা হচ্ছে, উনি কে?
আবুল কাসেম ফজলুল হক বললেন, মাওসেতুং।
তাঁর এত বড়ো বড়ো ছবি ছাপা হচ্ছে কেন?
তিনি অনেক সাহসী ছিলেন, জ্ঞানী ছিলেন।
তিনি কি অনেক বড়ো মাপের মানুষ ছিলেন?
আবুল কাসেম ফজলুল হক বললেন, হ্যাঁ, মাওসেতুং অনেক বড়ো মাপের মানুষ ছিলেন।
সুচিতা আর দীপন অবিশ্বাসের গলায় শিশুসুলভ কণ্ঠে বলে উঠলেন, মাওসেতুং কি ছফা আংকেলের চেয়েও বড়ো?