জুয়া জুয়াড়ি জুয়াদার ও ক্যাসিনো

ড. মোহাম্মদ আমীন
ইংরেজি Gambling শব্দের বাংলা কথা জুয়া। মহাভারতে কথাটি ছিল দূত্য। বাংলায়, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত দ্যূত শব্দ থেকে উদ্ভূত  ‘জুয়া’ শব্দের মানে হলো : অর্থের বিনিময়ে বাজি রেখে প্রতিযোগিতামূলক খেলা। অন্যদিকে, সংস্কৃত দ্যূতকার হতে উদ্ভূত ‘জুয়াড়ি’ শব্দের অর্থ বিশেষ্যে- যে জুয়া খেলে এবং বিশেষণে- যে জুয়া খেলায় আসক্ত।
 
যারা জুয়া খেলায় বা জুয়া খেলার আয়োজন করে বা জুয়ার সংগঠক তাদের বলা যায় জুয়াদার বা জুয়াকার। যে স্থানে জুয়া খেলা হয় তাকে বলা হয় ক্যাসিনো। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান মতে, ইতালীয় ক্যাসিনো (Casino) শব্দের অর্থ, জুয়াখেলার নির্দিষ্ট গৃহ, পানশাল ইত্যাদি।সুতরাং ক্যাসিনোকে বাংলায়  জুয়াঘর বলা যায় এবং যারা ক্যাসিনো চালায় তারাই জুয়াদার।
জুয়া পৃথিবীর আদিম খেলা। মহাভারতে জুয়া নিয়ে ভীষণ-বিশাল বর্ণনা রয়েছে। কুরুক্ষেত্র জুয়ার অন্যতম পটপাত্র। জুয়ার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত পুরুষের যৌনবাজার গমনাগমন এবং যৌনকর্মীদের কাছে আত্মবিক্রির খেলা। প্রকাশ্যে- অপ্রকাশ্যে পৃথিবীর সব দেশে জুয়া এবং যৌনবাজার রয়েছে। মানুষ যতদিন থাকবে এ দুটিও ততদিন থাকবে। কেননা যৌনক্রিয়া আর দ্যূতক্রিয়া মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনোভাবে জুয়া খেলে– সংসার নিয়ে, বিয়ে নিয়ে, পরিবার নিয়ে, কর্ম  নিয়ে, রাষ্ট্র নিয়ে, জীবন নিয়ে- আসলে কী নিয়ে নয়? তাই মলমূত্রের মতো জুয়া আর যৌনবাজার মানুষের জন্য অনিবার্য। 
কয়েক দিন যাবৎ বাংলাদেশে ক্যাসিনোসমূহের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। দেশের বিভিন্ন  এলাকা থেকে অনেক ক্যাসিনো সিলগালা করার খবর আসছে। পত্রিকায় লেখা হচ্ছে জুয়াড়িদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিন্তু তা ঠিক নয়, উপরের বর্ণনা হতে প্রতিভাত যে- যারা জুয়া খেলায়, জুয়ার সংগঠক তাদেরই ধরা হচ্ছে, জুয়াড়িদের ধরা হচ্ছে না। জুয়াদারদের টাকা জব্দ করা হচ্ছে; কিন্তু যারা জুয়া খেলে অর্থাৎ যারা জুয়াড়ি  তারা এবং তাদের টাকা বহাল তবিয়তে আছে।
জুয়া পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক নেশা। এই নেশায় ধরলে কেউ সহজে ছাড়তে পারে না। ক্যাসিনোর সংখ্যা  এবং উদ্ধারকৃত সামগ্রী ও অর্থ দেখে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রচুর জুয়াড়ি রয়েছে। একজন জুয়াড়িকেও গ্রেফতার করা যায়নি বা গ্রেফতার করা হয়নি। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হচ্ছে- জুয়াদার। জুয়াড়ি বা জুয়ায় আসক্তরা জুয়ার মতো মারাত্মক নেশবহুল খেলা বন্ধ করে থাকতে পারবে না। তাদের খেলতেই হবে। তাই  এই জুয়াড়ি বা জুায়ায় আসক্তরা জুয়া খেলার জন্য এখন ছুটবে সিঙ্গাপুর-নেপাল- থাইল্যান্ড-চিন এবং কেউ কউ ইউরোপ আমেরিকা। দেশের টাকাগুলো চলে যাবে বিদেশে। জুয়াদারদের  ধরার সঙ্গে সঙ্গে এদেরও থামানো দরকার। যদিও তা বেশ কঠিন।  খেয়াল রাখতে হবে, আগে যে জুয়াড়িদের টাকা বাংলাদেশের ক্যাসিনোগুলোয় খরচ করা হতো- সে টাকা যেন দেশের বাইরে চলে না-যায়।
Total Page Visits: 540 - Today Page Visits: 3

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Language
error: Content is protected !!