তাহলে বনাম তা হলে

তাহলে বনাম তা হলে

এবি ছিদ্দিক

শব্দের মধ্যখানে ফাঁকা থাকা-না-থাকার কারণে অর্থ বদলে যাওয়া বাংলা ভাষার দারুণ মজার দিকগুলোর একটি। এতে একই বর্ণগুচ্ছ একই ধারায়, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে শব্দযমক, অনুপ্রাস প্রভৃতির মতো নানান সাহিত্যালংকার বানানো যায়। কিন্তু এ মজার দিকটি অনেক সময় সাজার ভূমিকা নিয়ে হাজির হয়, যখন তা প্রায়োগিক বিড়ম্বনার কারণে পরিণত হয়। ‘তাহলে’ আর ‘তা হলে’ এমনই দুটি শব্দ। বিড়ম্বনার বিড়ম্বনা সবসময় বিব্রতকর হয় না, যদি তার সুন্দর হাল থাকে। আর, ‘তাহলে-তা হলে’-র ক্ষেত্রে এ কথাটুকু খুব করে খাটে। এবার তবে সে হাল নিয়ে কিছু বলা যাক।

বাক্যের মধ্যে ‘তাহলে’ অলংকাররূপে ব্যবহৃত হয়। উপযুক্ত ক্ষেত্রে উপযুক্ত ভূষণের সাজ যেমন নারীর সুন্দরতা বাড়ায়, তেমনি কাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ‘তাহলে’-র উপস্থিতি বাক্যের শোভা বাড়ায়। নারীর জন্যে অলংকারের সাজ আবশ্যক নয়; আবশ্যক নয় বাক্যের জন্যে ‘তাহলে’-র প্রয়োজনীয়তা। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অলংকারের কমি নারীর সৌন্দর্যের ছন্দের ঢেউয়ে যে সামান্যটুকু ব্যাঘাত ঘটায়, বাক্যের ক্ষেত্রেও ‘তাহলে’-র প্রভাব অনুরূপ। বিয়ের পরদিন গয়নাসব খুলে রাখার পরও নববধূ সুলতানা যেমন সুলতানাই থেকে যায়; সুলতানাকে চিনতে কোনো কষ্ট হয় না কিংবা সুলতানা বদলে গিয়ে আফসানা হয়ে যায় না, তেমনি বাক্য থেকে ‘তাহলে’ তুলে নিলেও বাক্যের সামগ্রিক অর্থে কোনো পরিবর্তন আসে না।

অপরদিকে, ‘তা হলে’ হচ্ছে ‘তাহা হইলে’-র চলিত রূপ। ‘তা হলে’ দুইটি পদের সমষ্টি। শুরুর ‘তা’ হচ্ছে সর্বনাম, শেষের ‘হলে’ হচ্ছে ক্রিয়া। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বাক্যের মধ্যে ‘তা হলে’-র প্রয়োগ আবশ্যক। কোনো বাক্য থেকে ‘তা হলে’ তুলে নিলে বাক্যটির অর্থ বদলে যায় কিংবা একটি অস্পষ্ট-দুর্বোধ্য বাক্যে পরিণত হয়।

মোদ্দা কথায় বললে— বাক্য থেকে যে ‘তাহলে’ উঠিয়ে নিলেও বাক্যের অর্থে কোনো পরিবর্তন আসবে না, সে ‘তাহলে’-র বানান নিরেটভাবে, এবং যে ‘তা হলে’ বাদ দিলে বাক্য অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে, সে ‘তা হলে’ বিচ্ছিন্নভাবে লিখতে হবে। নিম্নের প্রয়োগোদাহরণ কটি বিষয়টি স্পষ্টতর করতে পারে—

১. ‘সে যদি আসে, তাহলে আমি যাব।’— এ বাক্য থেকে ‘তাহলে ‘ তুলে নিলেও বাক্যটির অর্থে কোনো পরিবর্তন আসবে না, তাই ‘তাহলে’ বানান নিরেটভাবে লেখা হয়েছে।

২. ‘ছাফিয়া যা বলেছে, ব্যাপারটি সত্যিই তা হলে তোমাকে ভুগতে হবে।’— এ বাক্য থেকে ‘তা হলে ‘ তুলে নিলে বাক্যটি কোনো স্পষ্ট অর্থ ধারণ করবে না, তাই ‘তা হলে’ বানান বিচ্ছিন্নভাবে লেখা হয়েছে।

৩. ‘তাহলে আমরা এখন আসি?’— এ বাক্য থেকে ‘তাহলে ‘ তুলে নিলেও বাক্যটির অর্থে কোনো হেরফের হবে না, তাই ‘তাহলে’ বানান নিরেটভাবে লেখা হয়েছে।

[ দ্রষ্টব্য: ১. ‘তাহলে’-র পরিবর্তে ‘তবে’ লেখা যায়।

২. ‘তা হলে’-র ‘তা’-কে ‘তেমনটি’-তে রূপান্তর করা যায়। ]

Leave a Comment