দাদখানি চাল

ড. মোহাম্মদ আমীন

দাদখানি চাল

দাদখানি অতি উৎকৃষ্ট মানের এক প্রকার চাল। চালটির নাম কীভাবে দাদখানি হলো? কথিত হয়, বাংলার শেষ স্বাধীন সুলতান দাউদ খান (১৫৭৩-১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দ)-এর আমলে বঙ্গদেশে এ চালের চাষাবাদ শুরু হয়। সুলতানের দরবারে চালটির বেশ চাহিদা ছিল। দাউদ খান নিজেও চালটি পছন্দ করতেন। তাঁর প্রাত্যহিক খাবার টেবিলে   এই চালের ভাত আবশ্যিকভাবে থাকত। ফলে এর নাম হয়ে যায় দাউদখানি চাল। যার অপভ্রংশ দাদখানি চাল। শিশুকালে পড়া কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকার (১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দ ; ১২ কার্তিক ১২৭৩ বঙ্গাব্দ – ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ ; ১২ আষাঢ় ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ) এর কাজের ছেলে কবিতায় বর্ণিত ‘দাদখানি চাল’ এখনও স্মৃতিকে উদ্বেল করে তোলে।

দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল।

দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।

বাহবা বাহবা – ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ!
দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ।
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
ডিম-ভরা বেল, দু’টা পাকা তেল, সরিষার কৈ।

ওই তো ওখানে ঘুড়ি ধরে টানে, ঘোষদের ননী;
আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই আকাশে এখনি!
দাদখানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দুটা পাকা দৈ,
সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল, মুসুরির কৈ!

এসেছি দোকানে-কিনি এই খানে, যত কিছু পাই;
মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই!
দাদখানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দুটা পাকা ডাল, ডিম ভরা দৈ।

সূত্র: বাংলা সাহিত্য ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহা, ড. মোহাম্মদ আমীন, আগামী প্রকাশনী।

#subach

Leave a Comment