ড. মোহাম্মদ আমীন
‘পটল’ ও ‘পটোল’ উভয় বানানই শুদ্ধ তবে অর্থ ভিন্ন। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, তৎসম পটল (√পট্+অল) শব্দের অর্থ পরিচ্ছেদ, অধ্যায়, বিভাগ, অংশ, সমূহ, রাশি, ছাদ, চাঁদোয়া, চোখের ছানি প্রভৃতি। অন্যদিকে, একই অভিধানমতে, তৎসম পটোল(=√পট্+ওল) শব্দের অর্থ হচ্ছে, ভারতীয় উপমহাদেশে চাষ করা হয় এবং বসন্তকালে ফোটে এমন একলিঙ্গ সাদা ফুল ও দীর্ঘায়ত মসৃণ সবুজাভ ফল, যা সব্জিরূপে রেঁধে খাওয়া হয় বা তার ভেষজগুণসম্পন্ন বর্ষজীবী রীরুৎশ্রেণির লতানে উদ্ভিদ, পাণ্ডুফল, রাজফল ইত্যাদি।
অর্থের মতো উভয় শব্দের ব্যুৎপত্তিও ভিন্ন। অভিধানকারগণ সব্জিফল অর্থে ‘পটোল’ শব্দটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এই পার্থক্য তেমন কেউ মানেন বলে মনে হয় না। ‘পটোল’ বানান খুব একটা প্রচলিতও নয়। তাই জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস ও হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পটোল তোলা’ ও ‘পটল তোলা’ উভয় কথাই স্বীকার করে নিয়েছেন। মণীশ ঘটকের একটি বহুপঠিত গল্পগ্রন্থের নাম ‘পটলডাঙার পাঁচালী’। কিন্তু বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সবজি অর্থে কেবল ‘পটোল’ বানানই প্রমিত। তাই এখন সব্জি অর্থে আর পটল লেখার সুযোগ নেই। লিখতে হবে ‘পটোল। তেমনি, লিখতে হবে ‘পটোল তোলা’ ও ‘পটোলচেরা’।
’পটোল তোলা’ একটি ব্যঙ্গার্থক বাক্যভঙ্গি। এর অর্থ মরে যাওয়া। ‘পটোল’ শব্দের অনেকগুলো অর্থ আছে; যেমন: রাশি, অধ্যায়, সমূহ, চোখেরপাতা, একপ্রকার চক্ষূরোগ, ঘরের চাল ও একটি সুস্বাদু সব্জি বা আনাজ। তবে ‘পটোল তোলা’ বাক্যভঙ্গির ‘পটোল’ কিন্তু সুস্বাদু সব্জি বা আনাজ নয়। তা যদি হতো তাহলে প্রতিদিন হাজার হাজার কৃষক, যারা পটোল তুলেন তারা কেউ জীবিত বাড়ি ফিরতেন না। অনেকে বলেন, ‘পটোল তোলা’ বাক্যভঙ্গির ‘পটোল’ অর্থ চোখের পাতা; যা মৃত্যুর পর উপরের দিকে উঠে থাকে। অতএব ‘পটোল তোলা মানে চোখের পাতা উপরের দিকে উঠে থাকা; অর্থাৎ মারা যাওয়া। আবার কেউ কেউ মনে করেন, ’পটোল তোলা’ বাক্যভঙ্গির ‘পটোল’ অর্থ ঘরের ছাউনি বা চাল। অতএব ‘পটোল তোলা’ বাক্যভঙ্গির অর্থ ‘বাস উঠানো’ বা মরা/ মারা যাওয়া। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে বলা হয়েছে- একবার ফলনের পর পটললতা মরে যয়ে বলে ব্যাঙ্গে ‘পটোল তোলাা’ অর্থ মরে যাওয়া। অনেকে এই ব্যাখ্যটি সর্বজনীন ও যুক্তিযুক্ত নয় বলে মনে করেন।
Total Page Visits: 394 - Today Page Visits: 1