ড. মোহাম্মদ আমীন
মৃদু ও মন্দ শব্দের মিলনে মৃদুমন্দ শব্দের জন্ম। অনেকে মনে করেন, মৃদু ও মন্দ শব্দ বিপরীতার্থক। তবে, শব্দদুটো শুধু বিপরীতার্থক নয়, বরং বহুলাংশে সমার্থক। মৃদ ধীর, মন্দ মানেও ধীর। রবীন্দ্রনাথ গেয়েছেন :
দেখি নাই কভু দেখি নাই এমন তরণী বাওয়া।
এবার দেখা যাক মৃদ ও মন্দ শব্দের অর্থ। বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত মৃদু (√মৃদ্+উ) শব্দের অর্থ ধীর, কোমল, শান্ত (মৃদুস্বভাব), আলতো (মৃদু পরশ), হালকা (মৃদু কম্পন), মন্থর, ক্ষীণ (মৃদু আলো), অনুচ্চ, চাপা (মৃদুহাসি), প্রখর নয় এমন (মৃদুতাপ), ক্ষার নেই এমন (মৃদুজল) প্রভৃতি।
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত মন্দ শব্দের দুটি ভুক্তি আছে। প্রথম ভুক্তিতে মন্দ শব্দের অর্থ খারাপ, অপকৃষ্ট, অসৎ, অশুভ, কর্কশ, কটু, ক্ষীণ, দুর্বল, অসুস্থ প্রভৃতি। দ্বিতীয় ভুক্তি অনুযায়ী মন্দ শব্দের অর্থ তীব্র নয় এমন, ধীর, মৃদু প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন :
এর অর্থ হতে পারে মৃদু মৃদু মৃদু বও ওগো উতল হাওয়া।
অথবা মন্দ মন্দ মন্দ বও ওগো উতল হাওয়া।
মৃদু ও মন্দ শব্দের অর্থ বিবেচনা করলে মৃদুমন্দ শব্দের অর্থ হয় ধীরে ধীরে, মৃদু মুদৃ, কোমল ও ধীর, আলতো আলতো, শান্ত শান্ত প্রভৃতি। তবে, বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, মৃদুমন্দ (মৃদু+√মন্দ্+অ) শব্দের অর্থ ধীর ও মনোহর, মন্থর। এটি বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এই আলোচনা থেকে দেখা যায়, চিঠিপত্র, মানুষজন, জ্ঞানবিজ্ঞান, কাগজপত্র, জীবজন্তু, ভয়ভীতি, টাকাপয়সা প্রভৃতি শব্দের মতো ‘মৃদুমন্দ’ শব্দটিও সমার্থক শব্দযোগে গঠিত একটি দ্বিরুক্ত শব্দ।
Total Page Visits: 491 - Today Page Visits: 1