রবীন্দ্রনাথের সব লেখাই চুরি-করা : একটা বর্ণও নিজের নয়

ড. মোহাম্মদ আমীন
 
শান্তিনিকেতন লোকারণ্য। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহুদিন পর একটু সুস্থ বোধ করছেন। তিনি আজ জনসমাবেশে বক্তব্য দেবেন।হতে পারে এটি তার অন্তিম-ভাষণ।দেখতে না দেখতে গুরুদেব বক্তব্য শুরু করলেন।
হাজার হাজার শ্রোতা একাগ্রচিত্তে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য শুনছিলেন। পাশে বসা ফরাসি ভাষার প্রফেসর মরিস, প্রমথনাথ বিশি, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এবং প্রমথ চৌধুরী নোট করছিলেন গুরুদেবের কথা।
পুরো শান্তিনিকেতন ঢেকে গেছে মানব-মস্তিষ্কে। পিনপতন নীরবতায় স্তব্ধ প্রকৃতির সরবতা কেবল বিশ্বকবির মুক্তোঝরা বাণী-রাশি চারিদিকে সুধা বর্ষণ করে যাচ্ছিল। আসলে রবীন্দ্রনাথ শুধু লেখায় নয়, বলাতেও ছিলেন অতুলনীয়। তাঁর মতো ওজস্বী কথার এমন তেজস্বী বক্তা তৎকালে শুধু উপমহাদেশে কেন, সারা বিশ্বেও খুব বেশি ছিল না।বক্তব্য শেষ হওয়ার পর তালিতে আলোড়িত হয়ে গেল চারিদিক।
বক্তব্যান্ত করতালি শেষ হওয়ার পর প্রমথনাথ বিশি বললেন, গুরুদেবের প্রতি আপনাদের কোনো প্রশ্ন আছে?
সঙ্গে সঙ্গে এক দর্শক ওঠে দাঁড়ালেন। মুখে রাবীন্দ্রিক দাড়ি, চেহারা-সুরুতও প্রায় রবীন্দ্রনাথের মতো।তিনি দুহাত উপরে তুলে ধরলেন।
কী প্রশ্ন বলুন? আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলেন প্রমথ চৌধুরী।
আমার কোনো প্রশ্ন নেই। তবে অভিযোগ আছে।
কার বিরুদ্ধে অভিযোগ ?
গুরুদেবের বিরুদ্ধে! পুরো শান্তিনিকেতনের উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।
প্রমথ চৌধুরী কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আমার বিরুদ্ধে আপনার কী অভিযোগ?
চুরির অভিযোগ।
আমি কী চুরি করেছি?
লেখা, লেখা চুরি করেছেন। গুরুদেব, আমি আপনার প্রায় সবগুলো বই মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। আজকের বক্তৃতাটাও গভীর মনে শুনেছি। আপনি প্রতিটি লেখা এবং প্রতিটি শব্দ একটা বই থেকে অবিকল নকল করে তুলে দিয়েছেন। আপনার সবগুলো বই নকল, সবগুলো কবিতা আমার বই থেকে নকল করে লেখা। প্রতিটি শব্দ হুবহু। আমি সবার সামনে ঘোষণা করতে চাই যে, আপনি একজন কুম্ভিলক।
রবীন্দ্রনাথের ফর্সা গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেল। প্রমথ চৌধুরী বললেন, আপনি যা বললেন, তার প্রমাণ দিতে পারবেন?
হাজার বার পারব।
যদি না পারেন?
না-পারলে সবার সামনে আত্মহত্যা করব।
সবাই অপমানে বিব্রত।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বললেন, কোন বই থেকে গুরুদেব নকল করেছেন?
অভিযোগকারী ভদ্রলোক বললেন, বইটা আমার কাছে আছে।
রবীন্দ্রনাথ বললেন, বইটি আমি দেখতে চাই।
ঠিক আছে, আমি দেখাচ্ছি বলে ভদ্রলোক তার কাঁধে ঝোলানো থলে থেকে একটা বই বের করে গুরুদেবের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, দেখুন গুরুদেব, আপনি সব লেখা এই বই থেকে নকল করেছেন। এই বইয়ের বাহির থেকে একটা শব্দও মনে হয় লিখেননি।
অনেক রবীন্দ্রভক্ত লোকটাকে মারার জন্য এগিয়ে এল। রবীন্দ্রনাথ তাদের থামিয়ে দিয়ে বললেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত আভিযোগ বর্ণে বর্ণে সত্য, এক বর্ণও মিথ্যা নয়। আমি অভিযোগ স্বীকার করে নিচ্ছি : আমার সব লেখাই চুরি-করা, একটা বর্ণও আমার নিজের নয়।
শুরু হয়ে গেল গুঞ্জন। এতদিন পর থলের বিড়াল বের হলো তাহলে।
সবাই জানতে চাইল, গুরুদেব এটি এমন কী বই, যে বই থেকে আপনি অবিকল নকল করে লিখেছেন? বইটা আমরা দেখতে চাই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্মিত হেসে বইটি উঁচু করে ধরে বললেন,  অভিধান। আমার লেখার প্রতিটি বর্ণ  এ বই থেকে নেওয়া।
Total Page Visits: 512 - Today Page Visits: 1

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Language
error: Content is protected !!