শেখার পর লেখা
‘বোঝাবুঝি’-র মতো বেশি না হলেও ‘লেখালিখি’ নিয়েও মাঝেমধ্যে দ্বিধায় পড়ে যেতে হয়; কখন আদ্যবর্ণের সঙ্গে হ্রস্ব-‘ই’-কার এবং কখন ‘এ’-কার লিখতে হবে, সেটি নিয়ে। এক্ষেত্রেও নিয়মটি ‘উঠ্’-আদিগণ ধাতুর মতো, কেবল শুরুর কার-চিহ্নের ব্যবহারে পার্থক্য রয়েছে। প্রথমেই উল্লেখ করে দেওয়া উচিত— সাধু রীতিতে আদ্যবর্ণ ‘ই’-কার যুক্ত শিখ্, ঘির্, জিত্, ফির্, ভিড়্, চিন্ ইত্যাদি ‘লিখ্’-আদিগণ ধাতুগুলোর যে-কোনো রূপের বানান আদ্যবর্ণের সঙ্গে হ্রস্ব-‘ই’-কার দিয়ে লিখতে হবে। যেমন: লিখে, শিখ, চিনা, জিতিয়াছে, লিখিবে, লিখিতেছে, ফিরিয়াছে লিখিয়াছিল ইত্যাদি। অর্থাৎ, এক্ষেত্রেও ঝামেলা কেবল চলিত রীতিতে।
তবে চলিত রীতিতেও ঝামেলা খুব একটা থাকবে বলে মনে হয় না, যদি নিচে উল্লেখ-করা নিয়মটি যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারেন। লিখ্, শিখ্, চিন্, ফির্ ইত্যাদি ধাতুগুলোর বানান যথাযথভাবে লেখার জন্য প্রথম যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে— ধাতুগুলো দিয়ে সৃষ্ট শব্দটির দ্বিতীয় বর্ণের সঙ্গে কোন কার-চিহ্ন যুক্ত হয়েছে তা দেখা। যদি হ্রস্ব-‘ই’-কার বা হ্রস্ব-‘উ’-কার যুক্ত থাকে, তবে শব্দগুলো বানান অবশ্যই আদ্যবর্ণের সঙ্গে হ্রস্ব-‘ই’-কার দিয়ে লিখতে হবে। যেমন : লিখি, লিখুন, লিখিনি, লিখিস ইত্যাদি।
যদি দ্বিতীয় বর্ণের সঙ্গে অন্য কোনো কার-চিহ্ন যুক্ত থাকে বা কোনো কার- চিহ্নই যুক্ত না থাকে, তাহলে বাক্যে প্রয়োগ অনুযায়ী শব্দটির সাধুরূপ করতে হবে। সেক্ষেত্রে সাধুরূপে দ্বিতীয় বর্ণের সঙ্গে হ্রস্ব-‘ই’-কার বা হ্রস্ব-‘উ’-কার যুক্ত হলে বানান আদ্যবর্ণের সঙ্গে হ্রস্ব-‘ই’-কার দিয়ে এবং অন্য যে-কোনো কার-চিহ্ন যুক্ত হলে বা কোনো কার-চিহ্ন যুক্ত না হলে ‘এ’-কার দিয়ে লিখতে হবে। নিচের উদাহরণগুলো ভালোভাবে লক্ষ করলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে—
১) ‘শেখাবে’ শব্দটির সাধুরূপ হচ্ছে ‘শিখাইবে’। যেহেতু শব্দটির সাধুরূপে দ্বিতীয় বর্ণের সঙ্গে ‘আ’-কার যুক্ত হয়েছে, সেহেতু চলিত রীতিতে শব্দটির বানান আদ্যবর্ণের সঙ্গে ‘এ’-কার দিয়ে(শেখাবে) লিখতে হবে।
২) ‘লিখব’ শব্দটির সাধুরূপ হচ্ছে ‘লিখিব’। যেহেতু শব্দটির সাধুরূপে দ্বিতীয় বর্ণের সঙ্গে হ্রস্ব-‘ই’-কার যুক্ত হয়েছে, সেহেতু চলিত রীতিতে শব্দটির বানান আদ্যবর্ণের সঙ্গে হ্রস্ব-‘ই’-কার দিয়ে(লিখব) লিখতে হবে।
৩) ‘ফেরা’ শব্দটির সাধুরূপ হচ্ছে ‘ফিরা’। যেহেতু শব্দটির সাধুরূপে দ্বিতীয় বর্ণের সঙ্গে ‘আ’-কার যুক্ত হয়েছে, সেহেতু চলিত রীতিতে শব্দটির বানান আদ্যবর্ণের সঙ্গে ‘এ’-কার দিয়ে(ফেরা) লিখতে হবে।
৪) ‘চিনেছি’ শব্দটির সাধুরূপ হচ্ছে ‘চিনিয়াছি’। যেহেতু শব্দটির সাধুরূপে দ্বিতীয় বর্ণের সঙ্গে হ্রস্ব-‘ই’-কার যুক্ত হয়েছে, সেহেতু চলিত রীতিতে শব্দটির বানান আদ্যবর্ণের সঙ্গে হ্রস্ব-‘ই’-কার দিয়ে(চিনেছি) লিখতে হবে।
৫) ‘জেতো’ শব্দটির সাধুরূপ হচ্ছে ‘জিতো’। যেহেতু শব্দটির সাধুরূপে দ্বিতীয় বর্ণের সঙ্গে ‘ও’-কার যুক্ত হয়েছে, সেহেতু চলিত রীতিতে শব্দটির বানান আদ্যবর্ণের সঙ্গে ‘এ’-কার দিয়ে লিখতে হবে। একইভাবে, ফিরাও > ফেরাও, শিখিয়াছে > শিখেছে, লিখিবে > লিখবে, ঘিরো > ঘেরো, ভিড়াইতেছে > ভেড়াচ্ছে, চিনাইস > চেনাস ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, শব্দগুলোর সাধুরূপ অবশ্যই বাক্যে প্রয়োগ অনুযায়ী করতে হবে। কারণ, বাক্যে প্রয়োগ অনুযায়ী একই ক্রিয়াপদের ভিন্ন ভিন্ন রূপ হতে পারে। নিচের উদাহরণদুটি লক্ষ করলে বিষয়টি বুঝতে পারবেন—
১) টম গল্প লেখে।
২) টম গল্প লিখে ফেলেছে।
বাক্য দুটির প্রথমটিতে ‘লেখে’ বানান আদ্যবর্ণের সঙ্গে ‘এ’-কার দিয়ে লেখা হয়েছে। কারণ, বাক্যটির ভাব অনুযায়ী
‘লেখে’ শব্দটির সাধুরূপ হচ্ছে ‘লিখে'(সাধু
রীতি: টম গল্প লিখে)। দ্বিতীয় বাক্যটিতে ‘লিখে’ বানান আদ্যবর্ণের সঙ্গে হ্রস্ব-‘ই’-কার দিয়ে লেখা হয়েছে। কারণ, বাক্যটির ভাব অনুযায়ী ‘লিখে’ শব্দটির সাধুরূপ হচ্ছে ‘লিখিয়া'(সাধু রীতি: টম গল্প লিখিয়া ফেলিয়াছে)।
মজার বিষয় হচ্ছে, ‘উঠ্’-আদিগণ ধাতুর বিভিন্নরূপের বানান লেখার সময়ও একই নিয়ম অনুসরণ করা যায়। তবে, সেক্ষেত্রে হ্রস্ব-‘ই’-কারের জায়গায় হ্রস্ব-‘উ’ বা হ্রস্ব-‘উ’-কার এবং ‘এ’-কারের জায়গায় ‘ও’ বা ‘ও’-কার লিখতে হবে। অর্থাৎ, লিখি = শিখি = উঠি = শুনি; কিংবা লেখে = শেখে = ওঠে = শোনে ক্রম অনুসরণ করা যাবে।