সরকারি বনাম সরকারী: সহকারী বনাম সহকারি

ড. মোহাম্মদ আমীন

সরকারি বনাম সরকারী: সহকারী বনাম সহকারি

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামের বানান ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠান যেমন নির্ধারণ করেন বা রাখেন ঠিক তেমনই হবে; এখানে কোন ভুল নেই- এ দাবি প্রমিত বানান রীতি অনুযায়ী ঠিক। তবে,

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

একটি কথা মনে রাখা দরকার, ভাষান্তরে কখনও নামের পরিবর্তন হয় না। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম যে ভাষায় রূপান্তর করা হোক না কেন অভিন্ন থাকে। এবার দেখা যাক, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখা ‘সরকারী’ বানানটি কী প্রতিষ্ঠানের নাম, না অশুদ্ধ বানান।

কর্তৃপক্ষ কলেজের নাম লিখেছেন ‘গাছবাড়ীয়া সরকারী কলেজ’। আমি বলি এখানে ‘সরকারী’ শব্দটি ভুল বানানে লেখা হয়েছে। অনেকে বলবেন, যেহেতু এটি নাম তাই কর্তৃপক্ষ যেভাবে লিখেছেন সেটিই শুদ্ধ বিবেচিত হবে। কর্তৃপক্ষের দেয়া নামকরণ দাবি ঠিক হলে ‘গাছবাড়ীয়া সরকারী কলেজ’ এর ইংরেজি অনুবাদ হবে ‘Gasbaria Sarkari College’. কারণ নাম ভাষা-নির্বিশেষে অপরিবর্তিত থাকে। কিন্তু ‘গাছবাড়ীয়া সরকারী কলেজ’ এর ইংরেজি অনুবাদ যদি ‘Gasbaria Government College’ করা হয় তাহলে ধরে নিতে হবে ঐটি নাম নয়, শব্দ। সুতরাং ‘সরকারী’ লেখা বিধেয় হয়নি। লিখতে হবে ‘সরকারি’।  কারও নাম ‘লাল চন্দ্র দাস’ হলে তিনি ইংরেজিতেও ‘Lal Chandra Das’ লিখেন; কখনও Red Moon Servant লিখেন না। তাই ইংরেজি অনুবাদে যদি ‘সরকারী’ শব্দকে ‘Government’ লেখা হয় তো ধরে নিতে হবে এটি নাম নয়, সরকারি শব্দের অশুদ্ধ বানান।

 সরকারি শব্দের বানানে কার, তাহলে সহকারী শব্দের বানানে কেন ‘ঈ-কার’? বিষয়টি নিয়ে শুবাচে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবু প্রশ্নের অন্ত নেই। তাই এটি আবারও যযাতি হিসেবে প্রকাশ করা হলো। সরকার ফারসি শব্দ। ফারসি সরকার শব্দের সঙ্গে ফারসি ‘ই-প্রত্যয়’ যুক্ত হয়ে  ‘সরকারি’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। তাই ‘সরকারি’ একটি ফারসি অর্থাৎ বিদেশি শব্দ। এজন্য শব্দটির বানানে কার হবে। কেননা, প্রমিত বাংলা বানান বিধি অনুসারে বিদেশি শব্দের বাংলা বানানে সাধারণত কার বিধেয় নয়। অন্যদিকে, সহকারী সংস্কৃত শব্দ। সংস্কৃতে এই শব্দটির বানানে অবিকল কার রয়েছে। তাই সহকারী বানানে ‘ঈ-কার’ আবশ্যক।

উপরের নিয়মটি কেবল ‘সহকারী’ আর ‘সরকারি’ শব্দ-দুটোকে নির্দিষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে। বাংলায় এরূপ অনেক শব্দ রয়েছে। তাদের  বানানের ক্ষেত্রে কী হবে?  

ব্যক্তির ক্ষেত্রে ‘-কারী’ বা ‘-আরী’- শব্দাংশে ঈ-কার হয়। যেমন— সহকারী (সহ+কারী), উপকারী(উপ+কারী); আবেদনকারী, পথচারী, হত্যাকারী, অনিষ্টকারী, কর্মচারী, প্রদানকারী, সাহায্যকারী, প্রবেশকারী ইত্যাদি। শুধু ‘-কারী’  নয়; ‘-চারী’ বা ‘-আরী’ যুক্ত হলেও ব্যক্তির ক্ষেত্রে ‘ঈ-কার’ হবে। যেমন : অত্যাচারী, নভোচারী, ব্যভিচারী, আকাশচারী, সহচারী ইত্যাদি।  ‘-যোগী’ বা ‘-চরী’ যুক্ত হলেও ব্যক্তির ক্ষেত্রে ‘ঈ-কার’ হবে। যেমন : সহযোগী, সহচরী। অর্থাৎ এসব তৎসম শব্দের বানানের অর্থ ব্যক্তি প্রকাশের ক্ষেত্রে ‘ঈ-কার’ হবে।

ব্যক্তি ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে  ‘ই-কার’ হবে। যেমন— সরকারি, দরকারি, তরকারি, বাহারি ইত্যাদি। তবে, অতৎসম শব্দে ‘ই-কার’ হবে। যেমন :বাহাদুরি  (তুর্কি বাহাদুর+ফারিস ই); শিকারি (ফারসি)- এসব শব্দ ব্যক্তি প্রকাশ করলেও অতৎসম  হওয়ায় বানানে ‘ই-কার’ হয়েছে। আর একটা বিষয়, শব্দের শেষে ঈ-কার থাকলে এবং ওই শব্দের সঙ্গে ‘–গণ’ যুক্ত হলে ই-কার হবে। যেমন— সহকারী > সহকারিগণ, কর্মচারী> কর্মচারিগণ, আবেদনকারী> আবেদনকারিগণ, কর্মী> কর্মিগণ, মন্ত্রী>মন্ত্রিসভা ইত্যাদি।

সূত্র: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment