ড. মোহাম্মদ আমীন
‘সরকারি’ শব্দের বানানে ‘ই-কার’, তাহলে ‘সহকারী’ শব্দের বানানে কেন ‘ঈ-কার’? বিষয়টি নিয়ে শুবাচে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবু প্রশ্নের অন্ত নেই। তাই এটি আবারও যযাতি হিসেবে প্রকাশ করা হলো।
‘সরকার’ ফারসি শব্দ। ফারসি ‘সরকার’ শব্দের সঙ্গে ফারসি ‘ই-প্রত্যয়’ যুক্ত হয়ে ‘সরকারি’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। তাই ‘সরকারি’ একটি ফারসি অর্থাৎ বিদেশি শব্দ। এজন্য শব্দটির বানানে ‘ই-কার’ হবে। কেননা, প্রমিত বাংলা বানান বিধি অনুসারে বিদেশি শব্দের বাংলা বানানে সাধারণত ‘ঈ-কার’ বিধেয় নয়। অন্যদিকে, ‘সহকারী’ সংস্কৃত শব্দ। সংস্কৃতে এই শব্দটির বানানে অবিকল ‘ঈ-কার’ রয়েছে। তাই ‘সহকারী’ বানানে ‘ঈ-কার’ আবশ্যক।
উপরের নিয়মটি কেবল ‘সহকারী’ আর ‘সরকারি’ শব্দ-দুটোকে নির্দিষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে। বাংলায় এরূপ অনেক শব্দ রয়েছে। তাদের বানানের ক্ষেত্রে কী হবে?
ব্যক্তির ক্ষেত্রে ‘-কারী’ বা ‘-আরী’- শব্দাংশে ঈ-কার হয়। যেমন— সহকারী (সহ+কারী), উপকারী(উপ+কারী); আবেদনকারী, পথচারী, হত্যাকারী, অনিষ্টকারী, কর্মচারী, প্রদানকারী, সাহায্যকারী, প্রবেশকারী ইত্যাদি। শুধু ‘-কারী’ নয়; ‘-চারী’ বা ‘-আরী’ যুক্ত হলেও ব্যক্তির ক্ষেত্রে ‘ঈ-কার’ হবে। যেমন : অত্যাচারী, নভোচারী, ব্যভিচারী, আকাশচারী, সহচারী ইত্যাদি। ‘-যোগী’ বা ‘-চরী’ যুক্ত হলেও ব্যক্তির ক্ষেত্রে ‘ঈ-কার’ হবে। যেমন : সহযোগী, সহচরী। অর্থাৎ এসব তৎসম শব্দের বানানের অর্থ ব্যক্তি প্রকাশের ক্ষেত্রে ‘ঈ-কার’ হবে।
ব্যক্তি ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘ই-কার’ হবে। যেমন— সরকারি, দরকারি, তরকারি, বাহারি ইত্যাদি। তবে, অতৎসম শব্দে ‘ই-কার’ হবে। যেমন :বাহাদুরি (তুর্কি বাহাদুর+ফারিস ই); শিকারি (ফারসি)- এসব শব্দ ব্যক্তি প্রকাশ করলেও অতৎসম হওয়ায় বানানে ‘ই-কার’ হয়েছে।
আর একটা বিষয়, শব্দের শেষে ঈ-কার থাকলে এবং ওই শব্দের সঙ্গে ‘–গণ’ যুক্ত হলে ই-কার হবে। যেমন— সহকারী > সহকারিগণ, কর্মচারী> কর্মচারিগণ, আবেদনকারী> আবেদনকারিগণ, কর্মী> কর্মিগণ, মন্ত্রী>মন্ত্রিসভা ইত্যাদি।