সুইজারল্যান্ডের জেনেভার ঘটনা।
সব মিলিয়ে পাঁচ দিন হোটেলে থাকার বিল হলো তিন কোটি নিরানব্বই লাখ টাকা। লোক মাত্র দুজন, আমি আর স্যার। লেক জেনেভার পাশে, হোটেল প্রেসিডেন্ট উইলসন, জেনেভা; দৈনিক ভাড়া মাত্র ৭৯,৯৯৫ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৪,০০০০০ টাকার বেশি।
ওই পাঁচ দিন যত সময় না আমি জেনেভা ঘুরেছি, তার চেয়ে বেশি ঘুরেছি হোটেলে আর আমাদের পাঁচ দিনের স্যুইটে। জেনেভার সব ঐশ্বর্য যেন আমাদের স্যুইটে ঠাসাঠাসি করে ভরে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ গো, কত বড়ো রুম, কত দামি আসবাব, কত দামি থালা-প্লেট আর হান্ডি- ডেক্সি; কত দামি দামি লোক আসছেন আর যাচ্ছেন- এলাহি ব্যাপার সব।
বিল দিয়ে গাড়িতে উঠার সময় বললাম, স্যার, পাঁচ দিনে যত টাকা খরচ করেছেন, তত টাকা পেলে আমি চাকুরি ছেড়ে দিতাম।
চাকুরি ছেড়ে দিয়ে কী করতে?
খেতাম, ঘুরতাম আর ঘুমাতাম।
তুমি চাকুরি ছেড়ে দিলে আমার সঙ্গে জেনেভা আসত কে?
আমি, চাকুরি ছাড়লেও ঘোরাটা ছাড়তাম না, আপনার সঙ্গেই ওটা করতাম।
আমি কি তোমার ঘোড়া যে, ঘোরাতে আমাকে ব্যবহার করবে?
সরি স্যার।
তাহলে চাকুরিটা রেখে দাও, ভবিষ্যতে কাজে আসবে। পারলে আমরা পরস্পরের অবস্থানটা বদল করে নিতে পারি; তোমার সারা জীবনের প্রত্যাশা আমার পাঁচ দিনের খরচ, তুমি কত সুখী। আসলে তৃপ্তিই সমৃদ্ধির পরিমাপক।বিনয়ের সঙ্গে বললাম, পাঁচ দিন হোটেলে থাকার জন্য এত টাকা খরচ না-করলে কী হতো না?
স্যার বললেন, এত টাকা খরচ না-করলে, এত টাকার বিলটা আমি কীভাবে দিতাম? বদ্ধ নদীতে জল আসে না, যা থাকেও তাও পচে গন্ধ ছড়ায়। প্রবহমান নদীর দিকেই জল ছুটে আসে। জল যায় বলেই নদীতে আবার জল আসার পথ খুঁজে পায়। যত যাবে, তত আসবে। আর্থিক অবস্থাও নদীর মতো। আর্থিক অবস্থাকে সচল আর প্রবহমান রাখতে হলে খরচ অনিবার্য।
বুঝলাম না, স্যার।
এর চেয়ে কম খরুচে কোনো হোটেলে উঠলে গেটস-মিত্তাল, ওলেসন-ওর্তেগা এবং টাটা-বিড়লার মতো বিশ্বখ্যাত শিল্পপতি আর বব হক, অ্যাঞ্জেল মার্কেল, বুনো এবং ওয়ারেন বাফেটের মতো নেতাদের সঙ্গে আলাপ করা কি আমার পক্ষে সম্ভব হতো? বড়ো হতে হলে যেমন ছোটো হওয়ার কৌশল জানতে হয়, তেমনি আয় করতে হলে, আগে ব্যয় করার কৌশল রপ্ত করতে হয়।চার কোটি টাকা খরচ না করলে আমি দেশের জন্য চার হাজার কোটি টাকার ব্যবসায় কীভাবে নিয়ে যেতাম? দেশ চলত কীভাবে? ধনীদের ব্যয়ই সাধারণদের আয়। শোনো, আমি সেদিন থেকে ধনী হতে শুরু করেছি, যেদিন থেকে ব্যয় করতে শিখেছি। আয়কে মনে করো- খাওয়া আর ব্যয়কে মনে করো- মলত্যাগ। এবার আমার ব্যয়ের মাহাত্ম্য বুঝতে পেরেছ, নিশ্চয়?
পেরেছি, স্যার।
এবার বলো তো, চার কোটি টাকা পেলে তুমি কী করবে?
মল নিঃসরনের মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না-থাকলে পেটে অতিরিক্ত মল জমে গেলে জীবের যে অবস্থা হয় আমারও সে অবস্থা হতো। বন্যায় উপছে পড়া নদীর মতো আমিও মরতাম, মারতাম পাশের জমিতে জেগে উঠা সবুজদেরও।
এটুকু বলে থামলাম।
গাড়িতে উঠতে উঠতে মনে মনে বললাম, টাকা থাকলে মলও খাওয়া যায়, টাকা না-থাকলে রসগোল্লাও খাওয়া যায় না।
দেখুন :