আমার সিনিয়র বন্ধু বাবুল আনোয়ার (Babul Anowar) পেশায় শিক্ষক, নেশায় কবি, স্বভাবে শিশু এবং আচরণে অভিমানী। নাদুস-নুদুস লোকটির ফর্সা শরীরের মাঝখানে বিশাল এক পেট।
আমরা ডাকি, বাবুল ভাই।
রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক বাবুল আনোয়ার, রাজনীতির চেয়ে কবিতায় বেশি মত্ত।কিছু দিন আগে অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর নিয়েছেন চাকুরি থেকে।তাঁর ‘ভালোবাসার লিরিক’ পড়লে ছেলে-বুড়ো সবাই বয়সই বয়সহীন হয়ে পড়ে লিরিকে লিরিকে ছন্দ মৌনতায় :
“বাঁশ বাগানের মাথার উপর
চাঁদ উঠেছে চাঁদ
চাঁদের আলোয় লুকিয়ে হাসে
বিনোদিনীর ফাঁদ।”
বাবুল ভাইয়ের হাসিতে বালিকা চঞ্চলতা, কথা বললে চোখ-দুটো প্রজাপতি হয়ে যায় নিমিষে।বেশ উপভোগ করি তাঁর সঙ্গ।যতই উত্যক্ত করি না কেন, রাগেন না; কেবল হাসেন আর মাঝে মাঝে বেনসন টানেন।
তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় বেশি দিনের নয়, তবে মনকাড়া মন তাঁর, সহজে কাছে টেনে নিতে পারে সবাইকে, টুইটম্বুর রসে সময়কে ইচ্ছেমতো উপেক্ষা করে।
কিন্তু আছে, তবে-
তিনি একটু কিপেটে মানুষ
উদার হবেন কবে?
উদারতার প্রশ্নই আসে না, অন্তত সিগারেটের বেলায়। একটা সিগারেট চাইলে চৌদ্দ বার মালিশ করতে হয় অনুরোধে, তারপর বাধ্য হয় ঢেঁকি গিলতে। অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে বড়ো ওস্তাদ বাবুল ভাই। যদিও বলেন- ঢেঁকির মতো মস্ত একটা জিনিস গেলা বড়ো কষ্টের।
সরকারি কলেজে যোগ দেওয়ার আগে বাবুল ভাই এরশাদের দৈনিক জনতা পত্রিকায় কাজ করেছেন।
সে সময়ের কথা উঠে আসে এক আড্ডায়।
“খুব মজা হতো সাংবাদিকতায়”, “প্রতিদিন কিছু না কিছু ঘটত, কোনোটা মজার আবার কোনোটা সাজার”, যে সিগারেটের পাছা এতক্ষণ চুমো-মমতায় নরম ঠোঁটের আদুরে চাপে উপভোগ করেছেন, সেই সিগারেটের পাছা নৃশংস নিষ্ঠুরতায় মুছড়ে ছাইদানিতে ঠেসে দিয়ে বাবুল আনোয়ার বললেন।
যেমন? প্রাবন্ধিক দিদার হাসান প্রশ্ন করলেন।
বাবুল আনোয়ার বললেন, তখন তথ্যমন্ত্রী ছিলেন, আনোয়ার জাহিদ। একদিন পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে তথ্যমন্ত্রীর ‘আনোয়ার জাহিদ’ নামটি মুদ্রণ প্রমাদের খপ্পরে পড়ে ‘জানোয়ার জাহিদ’ হয়ে গেল। খারাপ জিনিস, চোখে পড়তে বিলম্ব হলো না তথ্যমন্ত্রীর।
তারপর কী হলো? আমি জানতে চাইলাম।
একটা বর্ণ তাঁকে অগ্নিশর্মা করে দিলেন। সাংবাদিককে তলব করা হলো।
সাংবাদিকের নাম?
নাম বলব না।
তারপর কী হলো? আবার জানতে চাইলাম।
কী আর হবে? ওই সাংবাদিকের চাকুরিটা শেষ হয়ে গেল।
একটা সিগারেট দেন?
না।
জানেন, আপনার ‘ভালোবাসার লিরিক-৩’ কাব্যগ্রন্থে আপনার নাম মুদ্রণ প্রমাদের খপ্পরে পড়েছে?
চমকে উঠে বললেন, কী লিখেছে?
আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, বাবুল জানোয়ার।
কী বললেন? আমি আনোয়ার, জানোয়ার?
না না, আনোয়ার নয়, বাবুলটাই জানোয়ার।