ড. মোহাম্মদ আমীন
রাম ধনু, রামধনু রংধনু; দোষ ঘুষ দোসরা এবং দোষী
রাম, ধনু, রামধনু, রংধনু
রাম: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, রাম (√রম্+অ) অর্থ (বিশেষ্যে) রামায়ণে বর্ণিত অযোধ্যার সূর্যবংশীয় নৃপতি দশরথের ঔরসে কৌশল্যার গর্ভজাত পুত্র এবং বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রামচন্দ্র; বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম; বিষ্ণুর অষ্টম অবতার বলরাম। (বিশেষণে) রাম অর্থ সুন্দর, রমণীয়, মনোহর; বড়ো (রামদা, রামছাগল); শ্রেষ্ঠ, সেরা (বোকারাম)। (অব্যয়ে) রাম অর্থ ঘৃণা বা বিস্ময়ব্যঞ্জক উক্তি; যেমন:
“এ রাম! তুমি ন্যাংটা পুটো?
ফ্রকটা নেবে? জামা দুটো?” (নজরুল)
ধনু: সংস্কৃত ধনু (√ধন্+উস) অর্থ (বিশেষ্যে) যা থেকে শর বা তির নিক্ষেপ করা হয়, ধনুক; দ্বাদশ রাশিচক্রের নবম রাশি; চার হাত দৈর্ঘ্য, পিয়াল বৃক্ষ; বাংলায় রংধনু।
রামধনু: রাম ও ধনু মিলে রামধনু। রামধনু (রাম+ধনু) অর্থ (বিশেষ্যে) বৃষ্টির পর আকাশে ভাসমান জলকণার ওপর লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মি বিচ্ছুরণের ফলে সূর্যের বিপরীত দিকে দৃশ্যমান বিশ্লিষ্ট সাতটি রঙের বর্ণিল বৃত্তচাপ; রংধনু, ইন্দ্রধনু, ইন্দ্রচাপ। কথিত হয়, এটি রামের ধনুর মতো বিশাল, তাই রামধনু। আবার অনেকের মতে, এটি ইন্দ্রের প্রতীক-চাপ। বাংলায় এটি রংধনু। পৌরাণিক বিশ্বাস মতে বৃষ্টির পর দেবতা ইন্দ্র তার সাতরঙা ধনু রোদে শুকাতে দেন।যা আমরা দেখতে পাই। এটিই ইন্দ্রধনু বা ইন্দ্রচাপ বা রামধুন।
নজরুলের ভাষায় রংধনু তার প্রেয়সীর বর্ণাঢ্য চন্দনের অনুপম নান্দনিকতা:
“জোছনার সাথে চন্দন দিয়ে মাখাব তোমার গায়
রামধনু হতে লাল রঙ ছানি আলতা পরাব পায়,
আমার গানের সাত-সুর দিয়া তোমার বাসর রচিব প্রিয়া
তোমাকে ঘেরিয়া গাহিবে আমার কবিতার বুলবুল—।
দোষ ঘুস দোসর দোসরা:
দোষ, দোষী, দূষণ প্রভৃতি বানানে মূর্ধন্য-ষ, কিন্তু দোসর, দোসরা, দোসালা বানানে দন্ত্য-স কেন? কারণ দোষ সংস্কৃত শব্দ। ষত্ববিধিমতে, “অ আ ভিন্ন স্বর, ক্ এবং র্ -এর পরবর্তী বিভক্তি বা প্রত্যয়ের স, মূর্ধন্য-ষ হয়ে যায়।” তাই দোষ, দোষী ও দূষণ বানানে ষ। কিন্তু দোসর, দোসরা ও দোসালা বিদেশি শব্দ। বিদেশি শব্দে ষত্ববিধি খাটে না। তাই দোসর, দোসরা ও দোসালা বানানে দন্ত্য-স। প্রসঙ্গত, দোসর ও দোসরা হিন্দি শব্দ। দোসালা ফারসি উৎসের শব্দ।
ঘুস বানানে দন্ত্য-স কেন?
কারণ, ঘুস অতৎসম শব্দ। ঘুস বানানে স দিলে ঘুসাঘুসি হবে কীভাবে?