বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহিদ
অধিকাংশ বর্ণনাকারীর মতে সালাহ উদ্দিন, ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহিদ। কিন্তু পত্রপত্রিকা, সরকারি বিবরণ, ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন গবেষণামূলক নিবন্ধ ও গ্রন্থাদি পর্যালোচনায়, সালাহ উদ্দিন নামের কেউ ২১ শে ফেব্রুয়ারি আদৌ শহিদ হননি দেখা যায়। শহিদ রফিক উদ্দিনকে ভুলবশত সালাহ উদ্দিন অভিহিত করা হয়েছে। সে হিসেবে রফিক উদ্দিন ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহিদ। মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের আই কম ২য় বর্ষের ছাত্র, সিঙ্গাইর পারিল গ্রাম নিবাসী ও বাদামতলীর কমার্শিয়াল প্রেসের মালিক মোহাম্মদ আবদুল লতিফের জ্যৈষ্ঠ পুত্র রফিক উদ্দিন ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৪ই নম্বর ব্যারাকের সামনে মাথায় গুলি লেগে ঘটনাস্থলে মারা যান। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট জনাব ওবায়দুল¬ার উপস্থিতিতে হাফেজ আবদুল গফুর শহিদ রফিক উদ্দিনের জানাযা পড়েন এবং আজিমপুর গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
ভাষা শহিদ সলিল সিংহ, সুদেষ্ণা সিংহ ও মণিপুরি ভাষা আন্দোলন
১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ শে ডিসেম্বর বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষার স্বীকৃতির লক্ষ্যে আন্দোলনকালে পুলিশের লাঠিচার্জে গুরুতরভাবে আহত ভাষা সৈনিক সলিল সিংহ মারা যান। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায় আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক সুদেষ্ণা সিংহ। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ মার্চ ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জে গুংগাবাড়ি রেললাইনে ‘বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি স্টুডেন্ট এসোশিয়েশন’ ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে আহুত ৫০১ ঘন্টার রেল বন্ধ কমসুচি পালনকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এদিন প্রমোদিনী সিংহ, রত্না সিংহ, আরতি সিংহ, কমলাকান্ত সিংহসহ ১২ জনের অধিক ভাষাসৈনিক পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছিলেন। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই এপ্রিল গৌহাটি হাইকোর্ট বিষ্ণুপ্রিয়া নামের পূর্বে বা পরে মণিপুরি ব্যবহার করা যাবে মর্মে রায় দেন। এর ফলে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ শে এপ্রিল হতে আসাম সরকার একটি নোটিফিকেশন জারি করে। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই ফেব্রুয়ারি আসাম রাজ্যে প্রাইমারি স্তরে সরকারিভাবে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষা চালু করা হয়। সুদেষ্ণার আত্মত্যাগের স্মৃতি ও সম্মানার্থে প্রতি বছর ১৬ই মার্চ ‘শহিদ সুদেষ্ণা দিবস’ পালিত হয়। মণিপুরি ভাষাভাষীদের কাছে দিবসটি ‘মণিপুরি ভাষা শহিদ দিবস’ হিসেবেও পরিচিত।