যুক্তাক্ষর ও যুক্তব্যঞ্জন কি অভিন্ন; বস্ত্র বনাম পোশাক; রোম লোম রোমহর্ষক লোমহর্ষক

ড. মোহাম্মদ আমীন

যুক্তাক্ষর ও যুক্তব্যঞ্জন কি অভিন্ন; বস্ত্র বনাম পোশাক; রোম লোম রোমহর্ষক লোমহর্ষক

যুক্তাক্ষর: একাধিক বর্ণ জুড়ে লিখলে তাকে যুক্তাক্ষর বা যুক্তবর্ণ বলা হয়। যেমন: কণ্ঠ, ভ্রষ্ট, তিষ্ঠ, বর্ণ, যুক্ত, স্বল্প, ক্ষমা । গ্ন, ক্ম, ক্স, ক্ষ, ভ্র, ব্ব, চ্ছ, হ্ম, স্ত্র, ম্ম, হৃ প্রভৃতি।
যুক্তব্যঞ্জন: যুক্তব্যঞ্জন হলো দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির পাশপাশি অবস্থান, যার মধ্যে স্বরধ্বনি নেই। যুক্তব্যঞ্জন যুক্তাক্ষর না-ও হতে পারে। যেমন: শাপলা (প্ ল), আলগা (ল্ গ), মুরগি (র্ গ), আচমকা (ম্ কা) প্রভৃতি।
বস্ত্র বনাম পোশাক

বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত বস্ত্র শব্দের অর্থ: কোনো কিছু আবৃত করা বা বিছানোর জন্য ব্যবহৃত সুতো রেশম পাট পশম কৃত্রিম আঁশ প্রভৃতি দিয়ে বোনা উপকরণ,

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

পরিধেয় কাপড়, বসন, আচ্ছাদন প্রভৃতি। বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ফারসি পোশাক শব্দের অর্থ: পরিচ্ছদ, বসন, বেশ, জামাকাপড়, আচ্ছাদন প্রভৃতি। বস্ত্র ও পোশাক উভয় শব্দের অর্থ দেখলে মনে হবে দুটোই সমার্থক। তবে একটু খেয়াল করলে দেখবেন, এই সমার্থকতা, কিন্তু খুব সূক্ষ্ম এবং অভিধানেও তা বেশ পার্থক্য রেখে নির্ধারিত করা হয়েছে।

.
শব্দদুটোর মুখ্যার্থে বলা হয়েছে, যে-কোনো কাপড়ই বস্ত্র, সেটি লাশের খাটিয়ার আচ্ছাদন, জানালার পর্দা, কোরবানির বৃষ গোরুর গায়ে জড়ানো ওড়না, পরিত্যক্ত শাড়ি, কারখানার গুদামে রক্ষিত কাপড়- যেটিই হোক না। পোশাক শব্দের মুখ্যার্থ হচ্ছে- পরিধেয় কাপড়, পরিচ্ছদ। তাই লাশের খাটিয়ার আচ্ছাদন কিংবা জানালার পর্দা বা শরীর মোছার গামছা-তোয়ালেকে বস্ত্র বলা যায়, পোশাক নয়। পোশাক শব্দটি সাধারণত পরিচ্ছদ বা পরিধেয় কাপড় প্রকাশে অধিক ব্যবহৃত হয়। ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। ব্যতিক্রম উদাহরণ হয় না, তা ছাড়া অনাবশ্যক ব্যতিক্রমে যাওয়া অনেকটা বোকামি।
.
আরো পরিষ্কারভাবে বলা যায়, সব পোশাকই বস্ত্র, কিন্তু সব বস্ত্র পোশাক নয়। পোশক হতে হলে তাকে সাধারণভাবে, অভিধানের মুখ্যার্থ অনুসারে পরিধানযোগ্য হতে হবে। প্রশ্ন আসতে পারে, কেন বস্ত্র ও পোশাক শব্দকে গৌণার্থে সমর্থক করা হয়েছে? এর কারণ বাক্যে শব্দের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা, কাব্যিক উপমার রূপময়তা আর অর্থের বিস্তার ঘটানো প্রভৃতি। যেমন : “বস্ত্র মানুষের অনিবার্য মৌলিক চাহিদা”, না বলে যদি বলা হয়, “পোশাক মানুষের অনিবার্য মৌলিক চাহিদা”, তাহলে কেবল পরিয়েধ বস্ত্র বোঝাবে; কিন্তু তখন টেলিভিশনের আচ্ছাদন, বিছানার ছাদর, প্রিয়জনের দেওয়া রুমাল, শীতের কাঁথা কিংবা বালিশের কভার বাদ পড়ে যাবে-না?
রোম লোম রোমহর্ষক লোমহর্ষক

  • রোম: অভিধানে পৃথকভুক্তিতে দুটি রোম আছে। একটি সংস্কৃত রোম আরেকটি স্থান রোম। সংস্কৃত রোম (√রু+মন্) অর্থ: (বিশেষ্যে) লোম, কেশ। স্থাননাম দ্যোতক রোম অর্থ: (বিশেষ্যে) ইউরোপের নগরবিশেষ, ইটালির রাজধানী।
  • লোম: তৎসম লোম (√লূ+মন্‌) অর্থ (বিশেষ্যে) মাথা ও মুখমণ্ডল ব্যতীত শরীরের অন্যান্য স্থানে উদগত চুল, পশম।
  • রোমহর্ষক: তৎসম রোমহর্ষক (রোমন্‌+√হৃষ্+ণিচ্+অক) অর্থ (বিশেষণে) গায়ে কাঁটা দিয়ে শিহরন জাগায় এমন।
  • লোমহর্ষক: তৎসম লোমহর্ষক (লোম+√হৃষ্‌+নিচ্‌+অক) অর্থ (বিশেষণে) শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায় বা শিহরিত করে এমন।

সুতরাং, রোমহর্ষক ও লোমহর্ষক পরস্পর সমার্থক।

সূত্র: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

Leave a Comment