ড. মোহাম্মদ আমীন
দরিদ্র দারিদ্র্য ও হতদরিদ্র: তফাত পার্থক্য ভিন্নতা প্রয়োগ
অভিধানমতে, সংস্কৃত দরিদ্র (√দরিদ্রা+অ) অর্থ— (বিশেষণে) অভাবগ্রস্ত, দীন। সংস্কৃত দারিদ্র্য (দরিদ্র+য) অর্থ— (বিশেষ্যে) দীনতা, দরিদ্র অবস্থা, অভাব। অন্যদিকে, হতদরিদ্র (হত+দরিদ্র) অর্থ— (বিশেষণে) অতি দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত। দরিদ্র যাদের হত করে দিয়েছে তারাই হতদরিদ্র। এ হচ্ছে আভিধানিক অর্থ। সাধারণভাবে জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য সামগ্রী বা সেবা ক্রয়ের ন্যূনতম আয় যারা করতে পারে না তারা দরিদ্র। দরিদ্রের এ অবস্থার নাম দারিদ্র্য।
আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত সংজ্ঞার্থ অনুযায়ী— দারিদ্র্য এমন একটি আর্থনৈতিক অবস্থা, যখন ব্যক্তিবিশেষ জীবনযাত্রার ন্যূনতম মান অর্জনে এবং নিম্ন আয়ের কারণে জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য দ্রব্যাদি ক্রয় করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
১৯৮০-র দশকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সহায়তায় দারিদ্র্য পরিমাপের জন্য একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে। সে মানদণ্ড বা সংজ্ঞার্থ অনুযায়ী দারিদ্র্য হচ্ছে খাদ্য গ্রহণের এমন একটি স্তর যা থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ কিলো-ক্যালরি পাওয়া যায় না। কয়েকটি পদ্ধতিতে দারিদ্র্যপীড়িত জনসংখ্যা চিহ্নিত করা হয়। প্রথমত: ভোগ-অভ্যাস এবং ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় করে খাদ্য তালিকা চিহ্নিত করা হয় যা নির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টি তথা প্রত্যেক ব্যক্তিকে প্রতিদিন ২,১১২ কিলো ক্যালরি এবং ৫৮ গ্রাম প্রোটিন সরবরাহ করতে পারে।
উপর্যুক্ত খাদ্যতালিকার ব্যয় অপেক্ষা ১.২৫ গুণ কম মাথাপিছু আয়সম্পন্ন পরিবারগুলোকে মধ্যম শ্রেণির দরিদ্র এবং নির্ধারিত প্রারম্ভিক আয়ের চেয়ে ৮৫% কম মাথাপিছু আয়সম্পন্ন পরিবারগুলিকে চরম দরিদ্র বা হতদরিদ্র পরিবার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যারা হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য তারাই হতদরিদ্র। তবে বিষয় ও শর্তগুলো আপেক্ষিক। সময় এবং স্থানভেদেও ভিন্ন হতে পারে। অধিকন্তু, দেশের জিডিপি অনুযায়ী মানদণ্ড পরিবর্তন করা হয়।। পৌর এলাকার দারিদ্র্য পরিমাপের ক্ষেত্রে ক্যালরি গ্রহণের প্রারম্ভিক মাত্রা পল্লি এলাকার জন্য নির্ধারিত মাত্রা অপেক্ষা কিছুটা উচ্চতর হয়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং নীতিমালার কারণে জনপ্রতি কিলো ক্যালরির প্রারম্ভিক মাত্রা বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে। এ পদ্ধতিতে দারিদ্র্যাবস্থা প্রাক্কলনের জন্য ব্যবহৃত তথ্য ও উপাত্ত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা-ব্যয় নির্ধারণ জরিপ থেকে নেওয়া হয়।
সূত্র: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.