জেনে নিন আপনার নামের অর্থ

ড. মোহাম্মদ আমীন

জেনে নিন আপনার নামের অর্থ

আমি বাংলা বানান শিখি, শেখাই; পড়ি এবং পড়াই। প্রমিত বাংলা বানান নিয়ে গবেষণা করা আমার শখ, বলা যায় নেশা।  শ্রেণিকক্ষে, সভা সেমিনারে  আমাকে প্রায়শ একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় — ‘আমীন’ বিদেশি শব্দ। আপনিই বলে থাকেন বিদেশি শব্দে ‘ঈ-কার’ হয় না। তো, আপনার নামের বানানে ‘ঈ-কার’ কেন? বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানান-বিধি অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম কী  হবে সেটি ওই নাম যারা রাখে বা ধারণ করে তাদের উপর নির্ভরশীল। প্রতিষ্ঠানের নামের

বানান নিয়ে প্রশ্ন তোলা গেলেও ব্যক্তির নামের বানান নিয়ে প্রশ্ন তোলা প্রমিত বানানবিধি অনুযায়ী অর্থহীন। যদিও আমার নাম রাখার সময় আমি বর্তমান

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

সময়ের মতো অভিজ্ঞানের অধিকারী হলে হয়তো বলতাম, আমার নামের বানানে দীর্ঘ ‘ঈ-কার’ দিও না, ‘হ্রস্ব ই-কার’ দাও। ‘আমীন’ ব্যক্তিনাম না-হয়ে শব্দ হলে বাংলা বানানে ‘ঈ-কার’ ভুল হতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিনামের ক্ষেত্রে নয়। এবার আসে দ্বিতীয় প্রশ্ন, আপনার নামের অর্থ কী? উত্তরে আমি বলতাম, “আমি শুধু আমার নয়, পৃথিবীর সবার নামের অর্থ বলতে পারি।”  

প্রকৃতপক্ষে, আমিই আমার নামের অর্থ। আমার নাম, আমার পরিচায়ক। তাই ব্যক্তিনামের কোনো আক্ষরিক অর্থ নেই। আমার নাম অদ্বিতীয়, যেমন আমি অদ্বিতীয় এবং পৃথিবীতে আমি ছাড়া আমার সত্তায় অধিষ্ঠিত আর কোনো আমি ‘আমীন’ নেই। বাবা-মা, পূর্বপুরুষ, ডিএনএ প্রভৃতি বিবেচনায় আমি বিশ্বের এক অদ্বিতীয় সত্তা। তাই আমীন শব্দের অর্থ আমি আমীন, অন্য কিছু নয়, অন্য কেউ নয়।  তবে ‘মোহাম্মদ/মুহাম্মদ ’ ও ‘ আমীন/ আমিন’ শব্দের অর্থ আছে। এগুলোর অর্থ অভিধানে পাওয়া যায়, কিন্তু তা শব্দ হিসেবে, কারো নাম হিসেবে নয়। আমীন নামের অর্থ মেনে নিলে পৃথিবীর সব আমীন আমি ‘আমীন’ হয়ে যাবে।

ব্যক্তিনাম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব এবং অদ্বিতীয় প্রত্যয়। ওই ব্যক্তিকে প্রকাশ এবং চিহ্নিত করার জন্যই কেবল নাম রাখা হয়। তাই ব্যক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ওই ব্যক্তি ছাড়া নামের কোনো  অভিধার্থ থাকে না, থাকা উচিতও নয়। তাহলে আমাদের পাড়ার বড়ো ভাই নিউটন আর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কারক বিজ্ঞানী নিউটন অভিন্ন হয়ে যাবে। নন্না মিয়ার ছেলে আজাদ ‘ফ্রিডম’ শব্দে অনূদিত হয়ে,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আজাদ হয়ে যাবে। ব্যক্তিই ব্যক্তিনামের অর্থ এবং ব্যক্তিনাম কেবল একজন ব্যক্তিকেই শনাক্ত করে। তাই আমিই আমার নামের অর্থ। আমার নামই আমার পরিচায়ক। সংগত কারণে আমার নামের কোনো অভিধার্থও নেই। অভিধার্থ নেই বলে ব্যক্তিনামের কোনো ভাষান্তর  হয় না। অভিধার্থ থাকলে আইনস্টাইন-এর বাংলা নাম হতো একটি পাথর। কেননা ‘আইন’ মানে একটি এবং ‘স্টাইন’ মানে পাথর। kohl মানে বাধাকপি। নামের যদি অর্থ থাকত, তাহলে ‘ kohl’ অনূদিত হয়ে বাঁধাকপি হয়ে যেত।  সেক্ষেত্রে জার্মানির চ্যান্সেলর ‘হেলমুট কোল’ হয়ে যেতেন জার্মানির বাঁধাকপি।

শব্দার্থের অভিধানে শেক্সপিয়র,  সক্রেটিস, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কারো নামের কোনো অর্থ পাওয়া যায় না। চরিতাভিধানে তাঁদের নামের পাশে যে বর্ণনা থাকে, তাতে তাঁদের পরিচয়, কর্ম, কৃতিত্ব প্রভৃতি বিধৃত থাকে। ব্যক্তির নাম সংশ্লিষ্ট জনের একান্ত নিজস্ব এবং অদ্বিতীয় প্রত্যয়। এর অর্থ ওই ব্যক্তিকে প্রকাশের জন্য, চিহ্নিত করার জন্যই কেবল রাখা হয়। তাই কাউকে ‘আপনার নামের অর্থ কী?’ প্রশ্ন করা সমীচীন বলে মনে হয় না। বরং বলা যেতে পারে “আপনার নাম যে শব্দ/ শব্দগুচ্ছ দিয়ে গঠিত সে শব্দ/ শব্দগুচ্ছের অর্থ কী?”

উৎস: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment

You cannot copy content of this page