আওয়ামী লীগ, আওয়ামি, আওয়ামি লিগ: আরবি না উর্দু; আমলা, বানর এবং  আমলকী

আওয়ামী লীগ, আওয়ামি, আওয়ামি লিগ: আরবি না উর্দু; আমলা, বানর এবং  আমলকী

 #subach

ড. মোহাম্মদ আমীন

আওয়ামী লীগ, আওয়ামি, আওয়ামি লিগ

‘আওয়ামি’ আরবি হতে বাংলায় আগত শব্দ। বাক্যে আওয়ামি শব্দটি বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ‘আওয়ামি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ জনগণের, সাধারণ মানুষের প্রভৃতি। বিদেশি বলে শব্দটির বানানে ‘ই-কার’ দিতে হয়। এর কোনো বিকল্প রাখা হয়নি। কিন্তু, ‘আওয়ামী লীগ’ হিসেবে পরিচিত রাজনীতিক সংগঠনটির নাম লিখতে হলে ‘আওয়ামি’ শব্দের ম-য়ে অবশ্যই ‘ঈ-কার’ দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। যতদিন সংগঠনটি তার নাম পরিবর্তন না-করে ততদিন ওভাবেই লিখে যেতে হবে। কারণ ‘আওয়ামী লীগ’ একটি সংগঠনের নাম। নামের কোনো লিপ্যন্তর হয় না। নামের কোনো আভিধানিক অর্থও হয় না। নামের অর্থ কেবল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা বস্তুর অদ্বিতীয় পরিচয়কে ঘিরে আবর্তিত হয়। এজন্য ‘আজাদ খান’ নামের কোনো ব্যক্তির ইংরেজি Freedom eat, কিংবা Mr. White Moon নামের কোনো ব্যক্তির বাংলা ‘সাদা চন্দ্র’ হয় না।
আওয়ামি আরবি হতে বাংলায় আগত একটি শব্দ। অর্থাৎ এটি আরবি শব্দ। এটি উর্দু শব্দ নয়। বাক্যে আওয়ামি শব্দটি বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ‘আওয়ামি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ জনগণের, সাধারণ মানুষের, সবার প্রভৃতি। অন্যদিকে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত লাতিন ‘লিগ (league)’ শব্দের অর্থ দল, সংঘ প্রভৃতি। অতএব ‘আওয়ামিলিগ/ আওয়ামি লিগ’ অর্থ জনগণের দল। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষেণ হিসেবে ব্যবহৃত আরবি আওয়ামি শব্দের অর্থ আওয়ামি অর্থ জনগণের।

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল। যখন দলটির নাম রাখা হয় তখন বাংলা বানানে ই-কার বা ঈ-কার নিয়ে তেমন বাধ্যবাধকতা ছিল না, বাংলা একাডেমি প্রমিত বানান রীতিও ছিল না। বরং আরবি-প্রভাবের কারণে ঈ-কার-এর প্রতি সবার একটা আলাদা টান ছিল। তাই দলটির নামের বানান লেখা হয় ‘আওয়ামী লীগ’। প্রসঙ্গত, ‘বাংলা একাডেমি প্রমিত বানান রীতি’ অনুযায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ভুল নেই।তবে আওয়ামী অর্থ জনগনের  ধরে নিলে বানান হওয়া উচিত, “আওয়ামি লিগ’।

আমলা বানর  আমলকী

সংস্কৃত আমলক> প্রাকৃত আমলঅ> এবং বাংলা আমলা শব্দের অর্থ আমলকী গাছ, আমলকী, সরকারি কর্মচারী, মুহুরি, কেরানি প্রভৃতি। শব্দটি বর্তমানে bureaucrat অর্থে

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

সমধিক প্রচলিত। অনেকে বলেন, আমলা আরবি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে, যার অর্থ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী, কেরানি, মুহুরি ইত্যাদি। কিন্তু ‘বেদ’-এ আমলা শব্দটি রয়েছে। প্রাচীন অভিধানসমূহেআমলাঅর্থ বানর এবং বানরঅর্থে আমলা বলা আছে। সুতরাং আমলা আরবি শব্দ এটি ঠিক নয়। আসলে প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে আমলা অর্থ বানর। তবে আধুনিক অভিধানকারদের এই অর্থটা  পছন্দ হয়নি। তাই তাঁরা তাঁদের অভিধান থেকে হয় শব্দটি বাদ দিয়েছেন এবং শব্দটিকে আরব থেকে আমদানি দেখিয়ে এর বর্তমানে প্রচলিত অর্থটিই বসিয়ে দিয়েছেন।

এবার দেখা যাক, আমলা অর্থ কেন বানর এবং কেন আমলকী। প্রাচীনকালেও অধিকাংশ আমলা স্বভাবচরিত্র ও আচার আচরণে বানরের মতো  বেহায়া প্রকৃতির ছিল। যত খেত নষ্ট করত তার অধিক। ভালোমন্দ বিবেচনাবোধ ছিল খুবই কম, সারাক্ষণ শুধু নিজের চিন্তা করত। বস্তুত এ থেকেবানরের পিঠাভাগপ্রবাদটির উৎপত্তি। বানরের ন্যায় আমলারাও ফল হওয়ার আগে মুকুলগুলো খেয়ে ধ্বংস করে দিত। অধিকন্তু কয়েকদিনের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পেয়ে বাপের সম্পত্তি মনে করে বসত। যা থেকেবানরের বনভাগপ্রবাদটির উৎপত্তি। আমলাদের স্বাদ আমলকীর ন্যায় তিক্ত কিন্তু চিবিয়ে খেয়ে ধ্বংস করে দিলে শরীরের উপকার হয়। যেমন আমলাদের যত চাপে রাখা যায় দেশে ও জাতির তত কল্যাণ সাধিত হয়। তাই আমলা অর্থে আমলকীও বোঝায়। এর মানে আমলা থেকে উপকার পাওয়া যাবে। কিন্তু কখন? যদি তাদের প্রচণ্ড শাসনে ও চাপে রাখা হয়। আমলাদের কোনো স্বাধীনতা দেওয়া যাবে না। তা হলে বানরের ন্যায় আচরণ পেতে হবে তাদের কাঁছ থেকে।

নিচের সংযোগে দেখুন:
বিনীত   বিনত : কোনটি লিখবেন এবং কেন

Leave a Comment

You cannot copy content of this page