বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন: সরকারী বানানে এখনো ঈ-কার কেন

ড. মোহাম্মদ আমীন

বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশন: সরকারী বানানে এখনো ঈ-কার কেন

‘বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ পুস্তিকার ২নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সকল অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের কারচিহ্ন ি  ‍ু ব্যবহৃত হবে। সরকারিফারসি উৎসের শব্দ। তাই বর্ণিত বিধি অনুযায়ী ‘সরকারি’ বানানে ঈ-কার পরিহার্য। কিন্তু ‘বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন’ নামটিতে ‘সরকারি’ বানান লেখা হয়েছে ঈ-কার দিয়ে ‘সরকারী’। 

ফারসি সরকার থেকে সরকারি। সুতরাং ‘সরকারি’ অতৎসম শব্দ। 
বিদেশি বা অতৎসম শব্দে সাধারণত ই বা ই-কার হয়; ঈ বা ঈ-কার হয় না। 
তাই সরকারি বানানে ই-কার। অন্যদিকে, সহকারী (সহ+√কৃ+ইন্‌) তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ। 
তাই সংস্কৃত ব্যাকরণমতে, বানানটিতে ঈ-কার হয়েছে।

গতকাল (২৯শে এপ্রিল, ২০২৪) পিএসসির চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে  সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিসিএস (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল, কারণ ও প্রতিকার

ড. মোহাম্মদ আমীন

নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। প্রসঙ্গক্রমে চেয়ারম্যান মহোদয়কে বললাম, স্যার, পরীক্ষার্থীরা পিএসিসির সাইনবোর্ডে দেখে ‘সরকারী’, কিন্তু পরীক্ষার খাতায় শুদ্ধ লিখতে হয় ‘সরকারি’। এটি বিভ্রান্তিকর। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। একটি ভাষা নিয়ে এমন সাংঘর্ষিকতা পরিত্যাজ্য। বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী বানানটি পরিবর্তন করা উচিত। এ বিষয়ে আপনি উদ্যোগ নিতে পারেন। এটি আপনার জন্য একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। 

তিনি বললেন, উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় রাজি হয়নি। তাদের অভিমত, ‘ বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন’ একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিষ্ঠানটির নামের বানানে ‘সরকারী’ লেখা রয়েছে ঈ-কার দিয়ে ‘বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন’। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। তাই  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বানানটি (সরকারী) পরিবর্তন না-হওয়া অবধি ‘বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন’-এর নামের ‘সরকারী’ বানান পরিবর্তন করে ‘সরকারি’ করার কোনো সুযোগ নেই।

‘বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ পুস্তিকার ৪নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ব্যক্তি, 
প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার নাম প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মের আওতাভুক্ত নয়। তাই বানান পরিবর্তন 
না হলেও বিষয়টি নাম হিসেবে মেনে নেওয়া যায়। যদিও পরিবর্তন হলে আদর্শ মান রক্ষিত হতো।
ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামের বানান ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠান যেমন নির্ধারণ করেন বা রাখেন ঠিক তেমনই হবে; এখানে কোন ভুল নেই- এ দাবি প্রমিত বানান রীতি অনুযায়ী ঠিক। তবে, একটি কথা মনে রাখা দরকার, ভাষান্তরে কখনও নামের পরিবর্তন হয় না। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম যে ভাষায় রূপান্তর করা হোক না কেন অভিন্ন থাকে। এবার দেখা যাক, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখা ‘সরকারী’ বানানটি কী প্রতিষ্ঠানের নাম, না অশুদ্ধ বানান।
কর্তৃপক্ষ কলেজের নাম লিখেছেন ‘গাছবাড়ীয়া সরকারী কলেজ’। আমি বলি এখানে ‘সরকারী’ শব্দটি ভুল বানানে লেখা হয়েছে। অনেকে বলবেন, যেহেতু এটি নাম তাই কর্তৃপক্ষ যেভাবে লিখেছেন সেটিই শুদ্ধ বিবেচিত হবে। কর্তৃপক্ষের দেয়া নামকরণ দাবি ঠিক হলে ‘গাছবাড়ীয়া সরকারী কলেজ’ এর ইংরেজি অনুবাদ হবে ‘Gasbaria Sarkari College’. কারণ নাম ভাষা-নির্বিশেষে অপরিবর্তিত থাকে। কিন্তু ‘গাছবাড়ীয়া সরকারী কলেজ’ এর ইংরেজি অনুবাদ যদি ‘Gasbaria Government College’ করা হয় তাহলে ধরে নিতে হবে ঐটি নাম নয়, শব্দ। সুতরাং ‘সরকারী’ লেখা বিধেয় হয়নি। লিখতে হবে ‘সরকারি’। কারও নাম ‘লাল চন্দ্র দাস’ হলে তিনি ইংরেজিতেও ‘Lal Chandra Das’ লিখেন; কখনও Red Moon Servant লিখেন না। তাই ইংরেজি অনুবাদে যদি ‘সরকারী’ শব্দকে ‘Government’ লেখা হয় তো ধরে নিতে হবে এটি নাম নয়, সরকারি শব্দের অশুদ্ধ বানান।

বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল শুদ্ধীকরণ: বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল কারণ ও প্রতিকার

#subach

Leave a Comment

You cannot copy content of this page

poodleköpek ilanlarıankara gülüş tasarımıpoodleköpek ilanlarıankara gülüş tasarımı
Casibomataşehir escortCasibomataşehir escort