ঈদ ইদ: ইদ হবে না কেন: ঈদ ও ইদ বানানের ইতিহাস আদি-অন্ত

ড. মোহাম্মদ আমীন

ঈদ ইদ: ইদ হবে না কেন: ঈদ ও ইদ বানানের ইতিহাস আদি-অন্ত

ইদ ঈদ 
বাংলা একাডেমি আধুনি বাংলা অভিধানমতে ইদ ঈদএর অর্থ
ইদ: ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব (ইদুল ফিতর বা ইদুল আজহা); খুশি, উৎসব; ঈদ-এর সংগততর ও অপ্রচলিত বানান।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

ইদগাহ: যে স্থানে একত্র হয়ে ইদের নামাজ পড়া হয়। ঈদগাহ-এর সংগততর ও অপ্রচলিত বানান।
ইদি : ইদ উপলক্ষ্যে ছোটোদের দেয় সালামি; ঈদি-র সংগততর ও অপ্রচলিত বানান।
ইদুজ্‌জোহা: ইদুল আজহা।
ইদুল-আজহা: হিজরি পঞ্জিকার জিলহজ মাসের দশম দিনে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পালনীয় উৎসব ( যে উৎসবে পশু কোরবানি দেওয়া হয়); ঈদুল-আজহা-এর সংগততর ও অপ্রচলিত বানান।
ইদুলফিতর: ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মাসব্যাপী নির্জলা উপবাসব্রত পালনের পর হিজরি পঞ্জিকার শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে উদ্‌যাপিত উৎসব; ঈদুলফিতর-এর সংগততর ও অপ্রচলিত বানান।

ঈদ: ইদ-এর প্রচলিত ও অসংগত বানান।
ঈদি: ইদি-র প্রচলিত ও অসংগত বানান।
ঈদগাহ: হদগাহ-এর প্রচলিত ও অসংগত বানান।
ইদুজ্‌জোহা: ‘ইদুজ্‌জোহা’-র প্রচলিত অসংগত বানান।
ঈদুলফিতর: ‘ইদুলফিতর’-্এর অসংগত ও প্রচলিত বানান।

বাংলায় ধ্বনিমূলগত বা উচ্চারণগত কোনো দীর্ঘস্বর নেই। তাই ‘ইদ’ ও ‘ঈদ’ উভয় শব্দের উচ্চারণ অভিন্ন। প্রশ্ন আসতে পারে, তা হলে বানান পরিবর্তনের কারণ কী? কারণ আছে এবং তা অনেকের মতে যথেষ্ট যৌক্তিক। শব্দের অর্থ দ্যোতনা, বানানে আদর্শমান প্রতিষ্ঠা ও সমতা রক্ষার স্বার্থে বাংলা একাডেমি, বিদেশি শব্দ হিসেবে আরবি عيد শব্দের বানান ‘ইদ’ করেছে। তবে কেউ ‘ঈদ’ লিখলে সেটির উচ্চারণও হবে ‘ইদ’। অবশ্য কেউ যদি আরবি উচ্চারণ করেন সেটি অন্য বিষয়। আবার অনেকের প্রশ্ন, তাহলে ইংরেজি হতে আগত Keyboard শব্দের বানান  কেন ‘কী-বোর্ড’ করা হলো? চিন বানান কেন প্রচলন বিবেচনায় ‘চীন’ রেখে দেওয়া হলো? এমন আরও অনেক সাংঘর্ষিক বানান বাংলা একাডেমি করেছে।

‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (২০১৬)’ ও ‘বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (২০১৫)’ অনুযায়ী عيد (Eid) শব্দের প্রমিত ও সংগততর বাংলা বানান ‘ইদ’। عيد (Eid) বিদেশি শব্দ। তাই প্রমিত বানানরীতি অনুসারে শব্দটির প্রমিত ও সংগততর বাংলা বানান ‘ইদ’, ‘ঈদ’ নয়। শব্দটির বানানে ‘ঈ’ বা ‘ই’ যা-ই দেওয়া হোক না কেন; উচ্চারণের, সম্মানের বা গাম্ভীর্যের কোনো পরিবর্তন হবে না, কিন্তু ‘ই’ দিলে প্রমিত বানানরীতি প্রতিষ্ঠা ও ভাষার আদর্শমান এবং ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। যা ভাষাকে করবে আরও সর্বজনীন, বোধগম্য, অভিন্ন ও প্রমিত। কিন্তু তা কীভাবে হবে? সামান্য ব্যাঙ বানানেও একাডেমির সাংঘর্ষিকতা দেখা যায়। তৎসম আর অতৎস নিয়েও আছে দ্বন্দ্ব।

বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান [প্রথম খণ্ড (অ-ঞ) প্রথম প্রকাশ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০/জুন ২০১৩] মতে, ‘ঈদ’ শব্দের প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় আলাওলের লেখায়। ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে আলাওল লিখেছেন, ‘জুম্মা দুই ঈদ আর আরফা সিনান’। ‘ইদ’ শব্দের প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে অক্ষয়কুমার দত্তের ‘কি ইদ, কি মহরম কোন মোসলমান …’ লেখায়।

২০০০ সংস্করণের বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান [পরিমার্জিত সংস্করণ ডিসেম্বর ২০০০-এর অষ্টাদশ পুনর্মুদ্রণ: মাঘ ১৪২১/জানুয়ারি ২০১৫]-এ ‘ইদ’ বানান সম্পর্কে লেখা হয়েছে, “ইদ, ইদগাহ ⇒ ঈদ”। বাংলা একাডেমি বাংলা বানান-অভিধান [পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত তৃতীয় সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০০৮-এর পঞ্চম পুনর্মুদ্রণ জানুয়ারি ২০১৫]-এ লেখা আছে, “ইদ /id ইদ্/ (ঈদ-এর সংগততর ও অপ্রচলিত বানান)।” ২০১২ সংস্করণের বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম ২.১ [পরিমার্জিত সংস্করণ ২০১২ (মুদ্রণ-২০১৫)] উল্লেখ করা হয়েছে, “সকল অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের কারচিহ্ন হ্রস্ব ই-কার, হ্রস্ব উ-কার ব্যবহৃত হবে।” সে হতে ‘ইদ’ বানান আরো পোক্ত এবং বিধিবদ্ধ হয়ে যায়।

ভাষা বহমান নদীর মতো নয়, চলমান প্রকৃতির মতো, নদী প্রকৃতির একটি উপাদান মাত্র। ভাষার পরিধি তার চেয়েও ব্যাপক। প্রত্যেক ভাষার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয় পরিক্রমা রয়েছে। প্রাচীনত্বের অজুহাতে ভাষার স্বকীয়তা এবং ভাষাপ্রকৃতির সাবলীল পরিবর্তনে বাধা দিয়ে ঐকমত্য সৃষ্টিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা সমীচীন হবে বলে মনে হয় না।

অনেকে বলেন, ‘ইদ’ বানান এখনও ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়নি। সম্মানিত শুবাচি জনাব Khurshed Ahmed এর ভাষায় বলা যায়, “আপনি-আমি শুরু করলেই সংগততর ‘ইদ’ বানানটি প্রচলিত হতে শুরু করবে।” শব্দটির বাংলা বানান নিয়ে বির্তকের এক পর্যায়ে একাদশ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী শুবাচি জনাব Minha Siddika মন্তব্য করেছেন : “আমাদের ঐকমত্য দূরহ বিষয়, যে কোনো ক্ষেত্রে। ঈদ বানান ইদ হলে ‘Kyeboard’ বানান কেন ‘কি-বোর্ড’ না-করে ‘কী-বোর্ড’ করা হলো?

#subach

 

Leave a Comment

You cannot copy content of this page