বিসিএস লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন যেভাবে হয়

ড. মোহাম্মদ আমীন

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন যেভাবে হয়

আজ ৫/৫/২০২৪ খ্রি. তারিখ  সোমবার পিএসসির চেয়ারম্যান-সহ কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে প্রশ্নপত্র তৈরিতে জটিলতা ও ভুল প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। আলাপ হচ্ছিল পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, উত্তরপত্র যাচাই, ভাইভা প্রভৃতি বিষয়ে। আলাপচারিতায় কথাপ্রসঙ্গে পিএসসির চেয়ারম্যান জনাব সোহরাব হোসাইন বললেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই পরীক্ষার হলে উত্তরপত্র থেকে পরীক্ষার্থীর পরিচয়-জ্ঞাপক অংশটি পৃথক করে ফেলা হয়। তখন উত্তরপত্র দেখে এটি কার উত্তরপত্র তা সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থী (নিজের লেখা দেখে) ছাড়া আর কারও চেনার কোনো উপায় থাকে না। ওই উত্তরপত্রে কেবল একটি কোড নম্বর থাকে। ওই কোড নম্বর কেবল কম্পিউটারই শনাক্ত করতে সক্ষম।
.
এরপর উত্তরপত্রসমূহ মূল্যায়নের জন্য যথাযথ গোপনীয়তা অবলম্বন করে প্রথম পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়। পরীক্ষক উত্তরপত্রে কোনো দাগ বা নম্বর দিতে পারবেন না। তিনি কেবল  প্রতিটি উত্তরের বিপরীতে প্রাপ্ত নম্বর পৃথক কাগজে লিপিবদ্ধ করে পিএসসিতে পাঠাবেন। এরপর ওই উত্তরপত্র দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়। তিনিও প্রথম পরীক্ষকের মতো একইভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে পৃথক কাগজে প্রতিটি উত্তরের বিপরীতে প্রাপ্ত নম্বর লিপিবদ্ধ করে পিএসসিতে পাঠান। উভয় পরীক্ষকের প্রদেয় নম্বরের গড় যা আসে তাই হলো সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর ওই বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর।স্বাভাবিকভাবে দুজন পরীক্ষক উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন। তবে প্রথম দুই পরীক্ষকের প্রদেয় নম্বরে ২০%-এর অধিক তফাত থাকলে ওই উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়।
.
“ভাইভা পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন আসছে।” জানালেন চেয়ারম্যান মহোদয়। চেষ্টা করা হচ্ছে এমন ব্যবস্থা নিতে যাতে ভাইভা-পরীক্ষায় পরীক্ষকের প্রভাবিত হওয়ার কিংবা পরীক্ষককে প্রভাবিত করার সকল কৌশল রোধ করা যায়। পরিবর্তন আনার চেষ্টা হচ্ছে সাক্ষাৎকারপ্রার্থী ও সাক্ষাৎকারগ্রহণকারীর পারস্পরিক আচরণেও। ইতোমধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষাৎপ্রার্থীকে ‘তুমি’ সম্বোধন করা সমীচীন নয় মনে করা হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীকে ধমক দেওয়া বা দুর্ব্যবহার করা কিংবা কারও ক্যাডার-পছন্দ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য প্রভৃতি সাক্ষৎগ্রহীতার জন্য অনুচিত বলে গণ্য করা হবে। কেবল তথ্য জানার প্রশ্ন বাদ দিয়ে এমন প্রশ্ন করতে হবে যাতে শুধু মুখস্থবিদ্যা ছাড়াও পরক্ষার্থীর সার্বিক বিশ্লেষণ ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়। যেন উত্তরের মধ্যে পরিস্ফুট হয় প্রার্থীর বাচনভঙ্গির স্বরূপ, দেশপ্রেম, মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব প্রভৃতি। এমন প্রশ্ন করতে হবে, যাতে পরক্ষার্থীর উপস্থিত বুদ্ধি কেমন তার পরিচয় পাওয়া যায়। এজন্য কোন দেশের রাজধানী কোথায় কিংবা কার জন্ম তারিখ কী প্রভৃতি-জাতীয় কেবল তথ্যনির্ভর প্রশ্নকে নিরুৎসাহিত করা হবে।  যেমন: ‘‘বাংলাদেশের রাজধানী কোথায়’’ এমন প্রশ্ন না করে করা উচিত হবে ‘ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় কী সুবিধা বা অসুবিধা হচ্ছে’’-  এমন বিশ্লেষণ প্রকৃতির প্রশ্ন।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page


CasibomCasibom