ড. মোহাম্মদ আমীন
বিসিএস ভাইভা পরীক্ষায় পরিবর্তন আসছে: পিএসসির ভাইভা পরীক্ষায় পরিবর্তন
পিএসসির পরীক্ষা-পদ্ধতি, প্রশ্নপত্র-প্রণয়ন, প্রশ্নপত্রের ভুল বা অসংগতি ও দুর্বলতা, উত্তরপত্র যাচাই, ভাইভা, গোপনীয়তা রক্ষা প্রভৃতি নিয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান জনাব সোহরাব হোসাইনের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছিল। তিনি পিএসসিকে সবদিক দিয়ে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার চেষ্টায় বদ্ধপরিকর। তাঁর একটাই কথা, “যেভাবে হোক সমুদয় সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। পিএসসিকে জনগণের কাছে নিখুঁত আস্থার অতুলনীয় স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য আমি যে-কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।”
বললাম, ভাইভা-পরীক্ষা এখনো মান্ধাতার আমলের। এর পরিবর্তন নিয়ে কী ভাবছেন? তিনি বললেন, “ভাইভা পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন আসছে। একে বিশ্বের উন্নত দেশসমূহের নিয়োগ-প্রক্রিয়ার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য নেওয়া হয়েছে যুগোপযোগী বিভিন্ন ব্যবস্থা। কার্যকর হবে আগামী ভাইভা থেকে।”
“কীরকম ব্যবস্থা?” আমার প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, “ ভাইভাতে মৌখিক প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে আনা হবে বৈশ্বিক বিবেচনায় উপযুক্ত পরিবর্তন। কেবল সংখ্যা বা তথ্য জানার প্রশ্ন বাদ দিয়ে এমন প্রশ্ন করতে হবে যাতে শুধু মুখস্থবিদ্যা নয়, একই সঙ্গে প্রার্থীর সার্বিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা আর অন্তর্নিহিত প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়। যেন উত্তরের মধ্যে পরিস্ফুট হয় প্রার্থীর
বাচনভঙ্গির স্বরূপ, দেশপ্রেম, মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব, দর্শন, স্বকীয়তা, হার্দিক মনোবৃত্তি প্রভৃতি। এমন প্রশ্ন করতে হবে, যাতে পরক্ষার্থীর উপস্থিত বুদ্ধি কেমন তার পরিচয় পাওয়া যায়। এজন্য ‘কোন দেশের রাজধানী কোথায়’ কিংবা ‘কোন সাহিত্যিকের জন্ম তারিখ কী’ বা ‘কোন তারিখ কী ঘটেছিল’ প্রভৃতি-জাতীয় কেবল তথ্যভিত্তিক উত্তর-প্রাপ্তিমূলক প্রশ্নকে নিরুৎসাহিত করা হবে। বরং প্রশ্ন করতে হবে, ওই তারিখ ওই ঘটনা ঘটার কারণ, স্বরূপ প্রভৃতি। যেমন: ‘‘বাংলাদেশের রাজধানী কোথায়?’’ এমন প্রশ্ন না করে উচিত হবে ‘ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় কী সুবিধা বা কী অসুবিধা হচ্ছে’’- এমন বিশ্লেষণ-প্রকৃতির প্রশ্ন করা। … নেতার জন্ম কত তারিখ এমন প্রশ্ন করা করা উচিত হবে না, উচিত হবে ‘‘… নেতার সামগ্রিক জীবনের কোন অবদানকে শ্রেষ্ঠ মনে হয়’ ইত্যাদি প্রশ্ন।
“ক্যাডার পছন্দ নিয়ে প্রশ্নের প্রকৃতি কেমন হওয়া উচিত?” এই প্রশ্নের উত্তর চেয়ারম্যান মহোদয় বললেন, অনেক সাক্ষাৎকারগ্রহীতা প্রশ্ন করেন, আপনার প্রথম পছন্দ বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার। ডিসির কয়েকটি কাজ বলুন তো! এমন প্রশ্ন নিতান্তই অযৌক্তিক। ওই প্রার্থী হয়তো কখনও ডিসিকে দেখেনওনি; অধিকন্তু তাঁর কাছ থেকে এমন কোনো অভিজ্ঞতাও চাওয়া হয়নি। তাঁর কাছে প্রশ্ন করা যেতে পারে, ‘‘আপনার মতে বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থা কেমন..।’’ অনেকে প্রার্থীর ক্যাডার পছন্দ নিয়ে মন্তব্য করে বসেন; এই ক্যাডার তো ঘুসের..। এমন প্রশ্ন খুবই গর্হিত। এসব প্রশ্ন করা যাবে না। বিসিএস পরীক্ষায় যে পদসমূহে নিয়োগের জন্য প্রার্থীর কোনো অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় না সেসব পদে অভিজ্ঞতাজনিত প্রশ্ন করা যাবে না।
সাক্ষাৎকারপ্রার্থী ও সাক্ষাৎকারগ্রহীতার পারস্পরিক প্রভাবিত হওয়ার বিষয়ে তিনি বললেন, এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যাতে ভাইভা-পরীক্ষায় পরীক্ষকের প্রভাবিত হওয়ার কিংবা পরীক্ষককে প্রভাবিত করার সকল কৌশল রোধ হয় এবং এমন কাজ করার কোনো সুযোগ না থাকে। ভাইভাকে এমন কৌশলে আর এমন পদ্ধতিতে সজ্জিত করার চেষ্টা করছি যাতে, সাক্ষাৎকারপ্রার্থী ও সাক্ষাৎকারগ্রহীতা কেউ প্রভাবিত হওয়ার কিংবা কেউ কাউকে প্রভাবিত করার সুযোগ না পায়। ভাইভা পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে সাক্ষাৎগ্রহীতা জানতে পারেন তিনি কোনো বোর্ডে পড়েছেন। সাক্ষাৎকারপ্রার্থী ও সাক্ষাৎকারগ্রহীতার পারস্পরিক আচরণেও পরিবর্তন আনা হবে। সাক্ষাৎকারগ্রহীতাকে সার্বিকভাবে সাক্ষাপ্রার্থীর সঙ্গে বন্ধুসুলভ অমায়িক আচরণ করতে হবে। প্রার্থীকে স্বাগত জানিয়ে বোর্ড-চেয়ারম্যান সুহৃদজনের আচরণ দিয়ে তাঁকে স্বাভাবিক করে তুলবেন। যাতে তাঁর মনে কোনো ভীতি বা জড়তা না থাকে। থাকলেও তা আলোচনা করে স্বাভাবিক করে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই প্রার্থীরাই আমাদের উত্তরসুরী। আমি তাঁদের যে ব্যবহার দেব, সে ব্যবহারই ভবিষ্যতে আমার বা আমার স্বজনরা পাবে। আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদেরই নির্মাণ করতে হবে।
তিনি আরও বললেন, মানুষ মানবীয় স্বভাবে বিভূষিত জীব। তার মধ্যে যেমন আছে স্নেহ-প্রেম, তেমনি আছে হিংসা-দ্বেষ। যেমন আছে ভালো, তেমনি আছে মন্দ। কারও প্রতি সে অনুরক্ত আবার কারও প্রতি বিরক্ত। কেউ তার শত্রু আবার কেউ তার বন্ধু। শুধু পরিচিতদের মধ্যে নয়, অপরিচিতদের মধ্যেও নানা কারণে এমন সম্পর্ক ঘটতে পারে । অপিরিচিতদের মধ্যে সাধারণত যে কারণে এসব ঘটে তন্মধ্যে ধর্ম-বর্ণ, কর্ম বা পেশা, জন্মস্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অধীত-বিষয় প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এসব বিষয় নিয়ে কারও প্রতি কারও স্নৈহিক দুর্বলতা বা বিরূপ মনোভাব থাকতে পারে; থাকতে পারে বিদ্বেষ কিংবা স্নেহাশেষ। কারও হয়তো কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম-বর্ণ, জেলা, পেশা কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি স্নেহ বা ঘৃণা থাকতে পারে। আবার থাকতে পারে অতিরিক্ত মমতা। এমন অনুভূতির উন্মেষ রোধ করার জন্য প্রার্থীকে এসব বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। “প্রিয় ব্যক্তি কে” এমন প্রশ্ন করাও অনুচিত হবে। আপনার প্রিয়জন আমার জন্য ঘৃণারও হতে পারে। প্রার্থীর নামের সঙ্গে মেধার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই নাম জিজ্ঞাসা অহেতুক। নামের মাধ্যমে ধর্মীয় পরিচয় পাওয়া যায়। ধর্মীয় বিষয়ে কারও অনুভূতি প্রবল থাকতে পারে। তদ্রূপ প্রার্থীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিষয়, জেলা ইত্যাদির সঙ্গেওে মেধার সম্পর্ক নেই। অথচ এর মাধ্যমে প্রার্থী ও পরীক্ষক উভয়ের মধ্যে বিরূপ বা সন্তুষ্টির নানা কারণ ঘটতে পারে।
সাক্ষাৎপ্রার্থীকে ‘তুমি’ সম্বোধন করা সমীচীন হবে না। তাঁকে ধমক দেওয়া বা তাঁর প্রতি দুর্ব্যবহারকে অনুচিত মনে করা হবে। সাক্ষাৎগ্রহীতাদের এসব বিষয় হতে বিরত থাকতে হবে। আমরাও একদিন ভাইভা-বোর্ডে প্রার্থী ছিলাম। এটি অবহেলা করা যাবে না। অনেক সাক্ষৎকারগ্রহীতা প্রার্থীর ক্যাডার-পছন্দ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এমন মন্তব্যপ্রদান সাক্ষৎগ্রহীতার জন্য অনুচিত বলে গণ্য করা হবে।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন যেভাবে হয়
বিসিএস ৪৬তম (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুল ও শুদ্ধীকরণ: প্রশ্ন নং ১ থেকে ৩০