দেয়া নেয়া: দেয়া শব্দের অর্থ মেঘ: নেয়া; নেয়ার নেয়ে

দেয়া নেয়া: দেয়া শব্দের অর্থ মেঘ: নেয়া; নেয়ার নেয়ে

দেয়া

দেয়া শব্দের অর্থ দেওয়া (give) নয়, দেয়া শব্দের অর্থ মেঘ, আকাশ প্রভৃতি। 

রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন : 
ছায়া ঘনাইছে বনে বনে,গগনে গগনে ডাকে দেয়া
কবে নবঘন-বরিষণে, গোপনে গোপনে এলি কেয়া।”

কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন :

রিম্ ঝিম্ রিম্‌ঝিম্‌ ঘন দেয়া বরষে
কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে।”

এসো হে সজল শ্যাম-ঘন দেয়া
বেণু-কুঞ্জ-ছায়ায় এসো তাল-তমাল বনে
এসো শ্যামল ফুটাইয়া যূথী কুন্দ নীপ কেয়া।” 

বাক্যে ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃতদেওয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে :  give, কোনোকিছু প্রদান করা, উপহার প্রদান প্রভৃতি। যেমন: তাকে একটি বই দেওয়া হলো। আঞ্চলিক বা কথ্য ভাষায় দেওয়া অর্থে  দেয়া শব্দের ব্যবহার করা হয়। তবে তা প্রমিত রীতিতে ব্যবহার করা আদৌ সংগত নয়। কোনোকিছু বহন করা বা গ্রহণ করা, ক্রয়া করা প্রভৃতি অর্থ প্রকাশে নেওয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়।  যেমন :  আমার কিছু বই নেওয়া দরকার। বিমানের টিকেট নেওয়া হলো। অন্যদিকে নেয়া হচ্ছে নেওয়া শব্দের আঞ্চলিক রূপ, যা প্রমিত রীতিতে ব্যবহার করা অসংগত।

অসংগত হলেও চলিত রীতিতে  দেওয়া অর্থে দেয়া এবং নেওয়া অর্থে নেয়া শব্দের প্রয়োগ  এত বহুল যে, অনেক খ্যতিমান কবি-সাহিত্যিকদের লেখাতেও  এই অসংগত বানান হরদম দেখা যায়। বিখ্যাত ‘দেয়া নেয়া’ ছবির কথা এখনো মনে ভাসে, হার্দিক মমতায়, এখনো আমি দেখি সেই গভীর আবেগে। এই নিবন্ধে আমি দেয়া ও  নেয়া শব্দের ব্যাকরণিক  অর্থের বিশ্লেষণ করেছি মাত্র। তবে, প্রচলন ব্যাকরণের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, অনেক বেশি প্রভাবশালী। অধুনা দেয়ানেয়া বহুল প্রচলিত  শব্দ। তাই এদের এখন অশুদ্ধ বলে দাবিয়ে রাখা যাবে বলে মনে হয় না। যাকে দাবিয়ে রাখা যাবে না, তাকে অশুদ্ধ বলে লাভ কী?

নেয়ার নেয়ে নেয়ে
নেয়ার: নেয়ার দেশি শব্দ। উচ্চারণ— নেআর্‌। অর্থ— খাটের পৃষ্ঠদেশে বুননের জন্য কাঠের পাটাতনের পরিবর্তে ব্যবহৃত মোটা সুতোয় বোনা চওড়া ফিতে; যেমন: নেয়ার খাট। পাজামা, সালোয়ার প্রভৃতি কোমরে আটকানোর জন্য ব্যবহৃত ফিতাকেও ‘নেয়ার’ বলা হয়।সুতরাং, “তিনি নেয়ার জন্য এসেছেন।” কথার অর্থ — তিনি খাটের ফিতের/ কোমরে পোশাক বাঁধার ফিতের জন্য এসেছেন।
নেয়ে: অভিধানে নেয়ে শব্দের দুটি ভুক্তি। একটি এসেছে সংস্কৃত স্নান থেকে এবং অন্যটি এসেছে নাবিক থেকে। সংস্কৃত স্নান থেকে উদ্ভূত নেয়ে হলো— ‘স্নান করার পর’ বাগ্ভঙ্গির অসমাপিকা ক্রিয়ার একটি রূপ। নেয়ে খাও বাবা, ঘাম ঝরছে গা থেকে। সংস্কৃত নাবিক থেকে উদ্ভূত নেয়ে অর্থ (বিশেষ্যে)— নৌকার মাঝি, যে নৌকা চালায়, নৌকা চালানো যার পেশা।
“খরবায়ু বয় বেগে, চারি দিক ছায় মেঘে,
ওগো নেয়ে, নাওখানি বাইয়ো।” (রবীন্দ্রনাথ)

উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page